নতুন আর্থিক বছর শুরু হল, সরকার যার অর্থনৈতিক রূপরেখা ঘোষণা করেছে বাজেটে। মেয়েরা কী আশা করতে পারেন এ বছর? প্রশ্নটা সহজ নয়, কারণ বাজেটে যা কিছু ঘোষণা হয়, তার সবই মেয়েদের দৃষ্টিতে জরুরি। তবু এ-ও লক্ষ না করে পারা যায় না যে, ৬৫-পাতা বাজেট বক্তৃতায় ‘মেয়েরা’ (উইমেন) শব্দটা রয়েছে কেবল সাত বার। ‘মেয়ে’ (উয়োম্যান), ‘বালিকা’ (গার্ল) কিংবা ‘লিঙ্গ’ (জেন্ডার) এক বারও আসেনি। সে তুলনায়, ‘পরিকাঠামো’ (ইনফ্রাস্ট্রাকচার) উল্লিখিত হয়েছে ৫৭ বার।
যে বিষয়ে বরাদ্দের প্রতি মেয়েদের সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়ার কথা, তা হল শিক্ষা। শিক্ষা—এমনকি বুনিয়াদি শিক্ষাও— মেয়েদের অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতিতে যোগদানের ক্ষমতা তৈরি করে। নানা তথ্য-প্রমাণ থেকে আমরা জানি যে, মেয়েরা সরকারি স্কুলে ভর্তি হয় বেশি, ছেলেরা প্রাইভেট স্কুলে। গত আর্থিক বছরে স্কুলশিক্ষার বাজেট ছিল ৬০,০০০ কোটি টাকার মতো, এ বছর যা কমে হয়েছে ৫৫,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। মিড-ডে মিল স্কুলগুলোতে ছেলে-মেয়ের সংখ্যায় সমতা এনেছিল, ক্লাসে উপস্থিতি বাড়িয়েছিল। সেখানেও বাস্তবিক বাজেট কমেছে ৩৮ শতাংশ, যদি ২০১৪-১৫’র সঙ্গে তুলনা করা হয় ২০২১-২২’এর। উচ্চশিক্ষাতেও বরাদ্দ কমেছে দু’হাজার কোটি টাকা।
অবশ্যই তাকানো প্রয়োজন নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের দিকে। এই মন্ত্রকের দু’টি প্রধান প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী মাতৃবন্দনা যোজনা এবং অঙ্গনওয়াড়ি (আইসিডিএস)। এর প্রথমটি সব মহিলাকে প্রথম সন্তানের জন্মের পর পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দেয়। আমরা যারা সংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করি, তারা অনুদানের সঙ্গে ছ’মাস সবেতন ছুটি পাই। একই নীতি অসংগঠিত ক্ষেত্রের মহিলা, যাঁদের ছুটি আরও বেশি প্রয়োজন, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় না। যাঁদের অবস্থা ভাল, তাঁরা আরও বেশি সহায়তা পেলেন; যাঁরা বিপন্ন, তাঁরা কম। গত বাজেটে এই অনুদানের জন্য ২৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তার মাত্র ১৩০০ কোটি খরচ হয়েছে। গত বছর অতিমারির ফলে অসংগঠিত ক্ষেত্রের বহু কর্মী কাজ হারিয়েছেন, আরও অনেকের রোজগার কমেছে। তাই অল্প হলেও এই নগদ অনুদানের সহায়তা খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু দেখাই যাচ্ছে, প্রকল্পের যাঁরা লক্ষ্য ছিলেন, তাঁদের কাছে সরকার পৌঁছতে পারেনি। এ বছর মাতৃবন্দনা প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ আরও তিনটি প্রকল্পের সঙ্গে জুড়ে ‘সামর্থ্য’ নাম দেওয়া হয়েছে। অথচ দেখা যাচ্ছে, ‘সামর্থ্য’-র জন্য যা বরাদ্দ, ২০২০-২১ সালে মাতৃবন্দনা যোজনার জন্যও তা বরাদ্দ ছিল।