Advertisement
১১ মে ২০২৪
Cancer

ব্যর্থ

কলিকাতার বাহিরে অন্তত দুইটি মেডিক্যাল কলেজে সম্পূর্ণ এবং অত্যাধুনিক পরিকাঠামো না গড়িলে অধিকাংশ রাজ্যবাসীর প্রতি অন্যায় হইবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০১:১৬
Share: Save:

পুত্রের মৃতদেহ কোলে সারা রাত বাসে কাটাইলেন এক পিতা। চার দিন চেষ্টা করিয়াও কলিকাতার হাসপাতালে ক্যানসার-আক্রান্ত শিশুটিকে ভর্তি করিতে পারেন নাই। ব্যর্থ হইয়া ঘরে ফিরিতেছিলেন ধুলিয়ানের আব্দুল করিম। এই ব্যর্থতার দায় কি পিতার? এত বৎসরেও জেলাগুলিতে ক্যানসার-রোগীর চিকিৎসা ও শুশ্রূষার যথাযথ ব্যবস্থা হইল না। ক্যানসারের চিকিৎসার বহুমূল্য যন্ত্র, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সকলই পুঞ্জীভূত কলিকাতার কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে। ওই বৃত্তের বাহিরে জেলাগুলিতে মিলিবে চিকিৎসার ছিটেফোঁটা। ক্যানসার নিরাময়ের প্রধান উপায় তিনটি— অস্ত্রোপচার, রেডিয়োথেরাপি এবং কেমোথেরাপি। রোগীর প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসা নির্দিষ্ট হয়। বিশেষ ভাবে ক্যানসারের অস্ত্রোপচারে দক্ষ ‘অঙ্কোসার্জন’ কেবল জেলায় কেন, কলিকাতার সকল মেডিক্যাল কলেজেও নাই। তবু জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে নানা বিভাগের দক্ষ, অভিজ্ঞ শল্যচিকৎসকরা ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করিতেছেন। কিন্তু সকল প্রকার রোগীর চাপের জন্য ক্যানসার-রোগীদের পরিষেবা সীমিত হইতে বাধ্য। রেডিয়োথেরাপির দশাও তথৈবচ। জরায়ুর ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্র্যাকিথেরাপি যন্ত্র বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ব্যতীত অপর কোনও জেলার সরকারি প্রতিষ্ঠানে নাই। টেলিথেরাপি কেবলমাত্র বাঁকুড়া, বর্ধমান এবং উত্তরবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজে হইয়া থাকে, তাহাও কোবাল্ট মেশিনের সাহায্যে। আরও উন্নত যন্ত্র ‘লিনিয়র অ্যাক্সিলারেটর’ মিলিবে কেবল কলিকাতায়।

অধিকাংশ জেলায় ক্যানসারের চিকিৎসা বলিতে কেমোথেরাপি দিবার জন্য নির্দিষ্ট এক চিকিৎসক এবং তাঁহার অধীনে কয়েকটি শয্যা। এই ব্যবস্থা যথেষ্ট নহে। চিকিৎসাধীন রোগীর হঠাৎ কোনও পরীক্ষার প্রয়োজন হইতে পারে; কোনও কারণে অবস্থার অবনতি হইলে তাঁহাকে দ্রুত ভর্তি করাইয়া, পরীক্ষা করাইয়া চিকিৎসা করিতে হইতে পারে। সে সকল আপৎকালীন ব্যবস্থা প্রস্তুত না থাকিলে, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করিয়াও কলিকাতায় ‘রেফার’ করিবার হার কমিবে না। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য জেলায় এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠাইলেই যথেষ্ট নহে, চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীদের একটি প্রশিক্ষিত দল প্রয়োজন, যাহা বিশেষত ক্যানসারের চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকিবে। কলিকাতার বাহিরে অন্তত দুইটি মেডিক্যাল কলেজে সম্পূর্ণ এবং অত্যাধুনিক পরিকাঠামো না গড়িলে অধিকাংশ রাজ্যবাসীর প্রতি অন্যায় হইবে। তৎসহ, যে রোগীদের আরোগ্যের আশা নাই, তাঁহাদের যন্ত্রণা কমাইবার ও শুশ্রূষার ব্যবস্থা কী প্রকারে করা সম্ভব, তাহাও ভাবিতে হইবে। বিদেশে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীর ঘরে গিয়া শুশ্রূষা করিয়া থাকেন। এ দেশ কেন তেমন ব্যবস্থা করিবে না?

জেলায় ক্যানসারের চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ পরিবেষার ব্যবস্থা সহজে হইবে না। সে চিকিৎসা ব্যয়বহুল, তাহার শর্তগুলি কঠিন। রোগী ও পরিজনেরা আরও অনেক দিন সুলভে সরকারি চিকিৎসার সুযোগ পাইতে কলিকাতাতেই আসিবেন, সন্দেহ নাই। তাঁহারা থাকিবেন কোথায়? অধিকাংশ পরিবার হাসপাতাল চত্বরে পলিথিন চাদরে দিন কাটাইতে বাধ্য হয়। তাঁহাদের বাসস্থানের আয়োজন করা কি এতই কঠিন? মানুষকে, বিশেষত দরিদ্র মানুষকে, ‘মানুষ’ ভাবিবার অভ্যাসটি গড়িয়া তোলা প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer Chemotherapy Radiotherapy Ray
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE