Advertisement
E-Paper

আমরা কি গণতন্ত্র মুছে ফেলতে চাই?

সংবাদমাধ্যমকে শাসন করার চেষ্টা ভারতে এই প্রথম বার দেখা গেল, এমন নয়। ইন্দিরা জমানার জরুরি অবস্থায় সংবাদমাধ্যমের উপরে কুখ্যাত বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছিল।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৭
কিশোরচন্দ্র ওয়াংখেম। ফাইল চিত্র।

কিশোরচন্দ্র ওয়াংখেম। ফাইল চিত্র।

একটা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছনো দরকার এ বার। ভারত হল বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র— এমনটা বলতে আমরা অনেকেই বেশ গর্ব বোধ করি। কিন্তু আমাদেরই অনেকে ভারত থেকে গণতন্ত্রের সব বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ নিঃশেষে মুছে ফেলতে চান যেন।

বাক‌্স্বাধীনতার উপরে খুব বড় আঘাত নামল মণিপুরে। ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছিলেন এক সাংবাদিক। সেই সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোটা দেশ থেকে সাংবাদিকরা নিন্দায় সরব। সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই রকম কোনও পদক্ষেপের কথা ভাবা যায় কোনও গণতান্ত্রিক দেশে বসে? মণিপুর সরকার কোন বুদ্ধিতে এমন পদক্ষেপ করল, তা নিয়ে এখন আলোচনা বিস্তর।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে যতগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই একে একে আক্রান্ত হচ্ছে, শাসকবর্গ প্রায় প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ও স্বশাসন খর্ব করার চেষ্টা করছেন— এই রকম একটা তত্ত্ব এখন বহুচর্চিত গোটা দেশে। জাতীয় রাজধানী থেকে বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানী, সর্বত্র এই প্রবণতা টের পাওয়া যাচ্ছে। এ বার গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভেও প্রকাশ্য এবং নিঃসঙ্কোচ আঘাত হানা হল।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীকে ‘প্রধানমন্ত্রীর পুতুল’ বলার শাস্তি! এক বছরের জেল মণিপুরের সাংবাদিকের

সংবাদমাধ্যমকে শাসন করার চেষ্টা ভারতে এই প্রথম বার দেখা গেল, এমন নয়। ইন্দিরা জমানার জরুরি অবস্থায় সংবাদমাধ্যমের উপরে কুখ্যাত বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছিল। পরবর্তী জমানাগুলোতেও বিচ্ছিন্ন বা বিক্ষিপ্ত ভাবে সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকের উপরে আক্রমণ নেমেছে। কিন্তু সে সব আক্রমণ ছিল নেহাত্ই বিচ্ছিন্ন এবং বিক্ষিপ্ত। জরুরি অবস্থার পরে এই প্রথম সংবাদমাধ্যমের কাজে এত বেশি পরিমাণে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে শাসকবর্গকে। আবার বলি, দেশের শাসকদল থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষমতাসীন শক্তি— সংবাদমাধ্যম এবং বাক‌্স্বাধীনতার উপরে আক্রমণের প্রবণতা চারিয়ে গিয়েছে সব স্তরেই।

প্রথাগত সংবাদমাধ্যমে অনেক কথাই লেখার উপায় নেই, তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ইদানীং ব্যক্তিগত লেখালেখি চালান সাংবাদিকরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করে থাকেন অন্যরাও। তাই শাসকবর্গের শ্যেনদৃষ্টি এখন সোশ্যাল মিডিয়ার উপরেও। মুখ্যমন্ত্রীর ছবিসম্বলিত ব্যঙ্গচিত্র আদান-প্রদান করে কয়েক বছর আগে অবর্ণনীয় হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের এক অধ্যাপককে। এ বার মুখ্যমন্ত্রীকে ‘প্রধানমন্ত্রীর পুতুল’ বলে আক্রমণ করে গ্রেফতার হতে হল মণিপুরের সাংবাদিককে।

সাংবাদিকতার জন্য ভারত অত্যন্ত কঠিন মুলুক— নানা আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় সে ইঙ্গিত মিলছে। কোনও সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সমীক্ষার আওতায় থাকা ১৮০টা দেশের মধ্যে ১৩৮ নম্বরে স্থান পেয়েছে ভারত। অন্য কোনও সমীক্ষা বলছে, সাংবাদিকদের প্রতিদিন যে পরিমাণ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় ভারতে, পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকটা দেশেই সাংবাদিকদের জন্য প্রতিকূলতা তার চেয়ে বেশি। সমীক্ষাগুলো যে খুব ভিত্তিহীন দাবি করছে না, মণিপুরের ঘটনা তা আরও এক বার প্রমাণ করল। এ ভাবেই চলতে থাকলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে এক দিন আর গণতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে কিনা, সে নিয়ে সংশয় বিস্তর।

Newsletter Arrest Manipur Journalist Freedom of Press National Security Act Biren Singh Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy