অমরনাথ-যাত্রীদের উপর পৈশাচিক হামলা যে কঠোরতম ভাষায় নিন্দনীয়, সেই বিষয়ে কি দ্বিমতের কোনও অবকাশ থাকিতে পারে? নরেন্দ্র মোদীর সম্ভবত সংশয় ছিল। ফলে, তিনি টুইট করিয়া বলিয়াছেন, এই হামলার কঠোর নিন্দা করা প্রত্যেকের কর্তব্য। এমন মর্মান্তিক মুহূর্তে অন্য কোনও অপ্রিয় প্রসঙ্গ টানিয়া না আনাই বিধেয়। নচেৎ কেহ হয়তো বলিতেন, যাউক, তবুও দেশের কোনও মৃত্যুতে প্রতিক্রিয়া জানাইবার সময় প্রধানমন্ত্রীর হইয়াছে। প্রশ্নটি এই সন্ত্রাসের নিন্দা করা-না করিবার নহে। সন্ত্রাসবাদীরা কতখানি খারাপ, কতটা ঘৃণ্য, তাহাও বলিবার কোনও অপেক্ষা রাখে না। অমরনাথে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের মৃত্যুকে দেশ জুড়িয়া গো-রক্ষকদের হাতে নিহত মুসলমানদের মৃত্যুর সহিত দাঁড়িপাল্লায় চাপাইয়া দেওয়ার রাজনীতিটিও— কাহারও কাহারও নিকট সেই রাজনীতির আকর্ষণ যতই অপ্রতিরোধ্য হউক না কেন— এই মুহূর্তে অবান্তর। অনেকের নিকট রাজনীতি ক্ষুদ্রেরই সাধনামাত্র। তাঁহারা এই মুহূর্তটিকে ‘নষ্ট’ হইতে দিবেন না, এক জন অমরনাথ-যাত্রীর মৃত্যু কত জন মুসলমানের মৃত্যুর তুল্য, তাঁহারা সেই হিসাব কষিতে বসিবেন। কিন্তু, সেই তরজায় জড়াইয়া পড়িলে প্রধানমন্ত্রীর চলে না। তাঁহার জন্য সর্বাপেক্ষা— বস্তুত, এই মুহূর্তের একমাত্র— তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্নটি অপেক্ষা করিতেছে: যাত্রীদের উপর হামলা করা সম্ভব হইল কী ভাবে?
সন্ত্রাসবাদী হামলা বলিয়া-কহিয়া ঘটে না বটে, কিন্তু তাহার সম্ভাব্যতা আঁচ করাও কঠিন নহে। বিশেষত, গত এক বৎসর যাবৎ কাশ্মীর যতখানি উত্তাল হইয়া আছে, তাহাতে এই বারের অমরনাথ-যাত্রায় হামলা হইতে পারে, তাহা অনুমান করিবার জন্য জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হওয়ার প্রয়োজন নাই। সেই পদাধিকারী অবশ্য এই অনুমানটি করিয়া উঠিতে পারেন নাই। অথবা, অনুমান করিয়াছিলেন, কিন্তু যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন নাই। হামলার পর যাত্রাপথে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যাবৃদ্ধির ঘোষণা হইয়াছে। কর্তারা কি এতগুলি প্রাণহানির অপেক্ষায় ছিলেন? রাত্রে যাতায়াতের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকিবার পরও সংশ্লিষ্ট বাসটি কেন রাতের বেলাই রওয়ানা হইয়াছিল, কেন অজস্র চেকপোস্টের কোনওটিতেই তাহাকে আটকানো হয় নাই, সেই প্রশ্নের উত্তর নাই। বাসটির সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রহরা ছিল না কেন, তাহাও অজ্ঞাত। বলা হইতেছে, বাসটি অমরনাথ-যাত্রার জন্য নথিভুক্ত ছিল না। তাহা হইলে বাসটিকে আটকানো হইল না কেন? প্রধানমন্ত্রী যত কঠোর ভাষাতেই সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করুন না কেন, তাহাতে এই প্রশ্নগুলির উত্তর মিলিবে না।
সরকার যখন অমরনাথ-যাত্রার ন্যায় কোনও বিষয়ের দায়িত্ব লয়, তখন তাহার মধ্যে একটি অলিখিত প্রতিশ্রুতিও থাকে: যাঁহারা যাইতেছেন, তাঁহাদের জীবনের দায়িত্বও সরকারের। যে তীর্থযাত্রীদের মৃত্যু হইল, তাঁহারা সেই ভরসাতেই আসিয়াছিলেন। অতএব, তাঁহাদের মৃত্যুর দায়ও সরকারকেই লইতে হইবে। জঙ্গিরা কত খারাপ, অমিত শাহ হাজার বার সেই কথা মনে করাইলেও এই দায়িত্ব হইতে নিষ্কৃতি নাই। স্পষ্টতই, ন্যূনতম কর্তব্য সম্পাদনেও অবহেলা ছিল। যদি সরকার নিরাপত্তার দায়িত্ব না-ই লইতে পারে, তবে এই বার যাত্রা বন্ধ রাখাই কি বিধেয় ছিল না? বিপাকে পড়িয়া বিজেপি-র এক অংশ মেহবুবা মুফতির সরকারের উপর দায় চাপাইবার চেষ্টা করিতেছে। সেই সরকারে বিজেপি শরিক, রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদটি বিজেপি-রই দখলে, ভুলিলে চলিবে কেন? কেন্দ্র অথবা রাজ্য, কোনও সরকারের দায়িত্বই বিজেপি এড়াইতে পারে না। এক্ষণে কেহ যদি অভিযোগ করেন, মুফতিকে বিপাকে ফেলিতে নিজেদের দায়িত্বের কথা ভুলিয়া কর্তব্য সম্পাদনে এই গাফিলতি ইচ্ছাকৃত ছিল, কথাটি উড়াইয়া দেওয়ার মতো যুক্তি মোদীদের আছে তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy