আরাবল্লী পাহাড়শ্রেণি উত্তর ভারতের পরিবেশগত ভারসাম্যের অন্যতম রক্ষাকবচ। অথচ অবৈধ খনন, লাগামছাড়া নগরায়ণ এবং প্রশাসনিক ঔদাসীন্যের ফলে আরাবল্লী আজ অস্তিত্বের সঙ্কটে। আরাবল্লী পাহাড়শ্রেণি বিশ্বের প্রাচীনতম পাহাড়গুলির অন্যতম। গুজরাত থেকে রাজস্থান, হরিয়ানা হয়ে দিল্লির প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এই পাহাড় এক সময় সবুজ বনভূমিতে আচ্ছাদিত ছিল। আজ সেখানে চোখে পড়ে খনির গর্ত, ভাঙা পাহাড় আর কংক্রিটের আগ্রাসন।
আরাবল্লী উত্তর ভারতের প্রাকৃতিক ঢাল। এটি থর মরুভূমির বিস্তার রুখে দেয়, বৃষ্টির জল ধরে রাখে এবং ভূগর্ভস্থ জলস্তর বজায় রাখতে সাহায্য করে। দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলের বায়ুদূষণ কমাতেও আরাবল্লীর বনাঞ্চলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আজ যখন দিল্লি বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর হিসাবে পরিচিত, তখন আরাবল্লীর ধ্বংস মানে কার্যত নিজেদের শ্বাস নেওয়ার পথ সঙ্কুচিত করা। বছরের পর বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন পাহাড় কেটে পাথর ও খনিজ উত্তোলন চলছে। এই খননের ফলে শুধু পাহাড় নয়, তার সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে বন, জলাধার ও জীববৈচিত্র। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের নজরদারি কোথায়? উন্নয়ন যদি প্রকৃতিকে ধ্বংস করে হয়, তবে সেই উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না। আজকের কংক্রিটের শহর ভবিষ্যতে জলসঙ্কট ও তাপপ্রবাহের কেন্দ্র হয়ে উঠছে যার মূল কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ।
লেপার্ড, নীলগাই, শিয়াল, নানা প্রজাতির পাখি ও গাছপালা এই অঞ্চলের স্বাভাবিক বাসিন্দা। পাহাড় ও বন ধ্বংসের ফলে তারা লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এই পরিস্থিতি প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করার পাশাপাশি মানুষের জীবনকেও ঝুঁকির মুখে ফেলছে। আরাবল্লী ধ্বংসের সবচেয়ে স্পষ্ট প্রভাব পড়ছে জলসম্পদের উপর। পাহাড় কাটা পড়ায় বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জলস্তর দ্রুত নীচে নেমে যাচ্ছে। দিল্লি ও হরিয়ানার বহু এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট ইতিমধ্যেই দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড়কে না বাঁচালে সমস্যা বাড়বে। সুপ্রিম কোর্ট ও পরিবেশ আদালত একাধিক বার আরাবল্লী রক্ষায় নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার আরাবল্লীর যে বিতর্কিত সংজ্ঞাটি প্রণয়ন করেছিল, সিলমোহর দেওয়ার পরেও অবশেষে সেই রায়ে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ কিছুটা স্বস্তিও আনবে। তবে বাস্তবে কি তার প্রয়োগ দেখা যাবে? প্রশাসনিক গাফিলতি ও স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাব আরাবল্লী রক্ষার পথে বড় বাধা। আরাবল্লী বাঁচাতে শুধু প্রশাসন বা আদালতের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ ছাড়া এই লড়াই সফল হবে না। অবৈধ খননের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, গাছ লাগানো, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পরিবর্তনের ভিত গড়ে তোলে। আরাবল্লী আজ নিঃশব্দে ধ্বংস হচ্ছে, আর আমরা অনেক সময় তা দেখেও দেখছি না। এই অবহেলা আগামী দিনের বিপর্যয়ের রূপ নেবে।
আরাবল্লীকে বাঁচানো মানে শুধু একটি পাহাড় রক্ষা করা নয়, বরং জল, বায়ু, বন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার রক্ষা করা। এখনই যদি আমরা দৃঢ় অবস্থান না নিই, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
পার্থজিৎ বণিক, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
অমর্যাদা কেন?
ঈশা দাশগুপ্তের লেখা ‘যত দোষ লক্ষ্মীর ভান্ডারের?’ (৫-১২) পড়তে পড়তে মনে পড়ল, পথে পরিচয় হওয়া এক মহিলা সহযাত্রী জানান, লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকার জন্যই আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার খরচ, বা নিজের প্রয়োজন মেটানোর টাকা তাঁকে স্বামীর কাছে হাত পেতে নিতে হয় না। হাসিমুখে বললেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার তাঁকে ওই লজ্জা-অপমানের থেকে বাঁচিয়ে একটু হলেও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। এক বার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী অন্য কাউকে বলছিলেন, তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা জমিয়ে রান্নার সুবিধার জন্য মিক্সার গ্রাইন্ডার কিনে চমকে দিয়েছেন।
এই লেখা লক্ষ্মীর ভান্ডারের সমর্থনে নয়, বরং ওই প্রকল্পের আওতায় যাঁরা পড়েন তাঁদের অপমানের বিরুদ্ধে। কোনও রাজনৈতিক দল বা সরকারি প্রকল্পের বিরোধিতা করতে গিয়ে মহিলারা, যাঁরা ওই কিছু টাকায় একটু হলেও ভাল থাকতে পারছেন, নিজের সামান্য ইচ্ছা পূরণ করছেন, মনের জোর পেয়েছেন, তাঁদের ছোট না করাই ভাল। জানি না তাঁরা হয়তো যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিজেদের পরিচয় গড়ে তোলার সুযোগ পাননি বরং গৃহকর্মে নিপুণা হয়ে গৃহবধূ বা গৃহলক্ষ্মীর পরিচয়ে আবদ্ধ থেকেছেন, তাই আজ ওই হাতেগোনা টাকায় তাঁরা জীবনের অর্থ আর আত্মসম্মান খুঁজে নিচ্ছেন। সেই আলোর পথযাত্রী না-ই হতে পারি, অন্তত ক্রমাগত কটূক্তি করে ওই আলোটুকু কেড়ে নিয়ে তাঁদের আবার অন্ধকারে না-ই বা ঠেলে দিলাম।
অনিশা ঘোষ, পাণ্ডুয়া, হুগলি
মনের দাগ
‘রিফিউজি’ কথাটার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক রাশ ঘৃণা, অনেক তাচ্ছিল্য, দীর্ঘ অবহেলা আর চাপা উপহাস। তিস্তা দে-র লেখা চিঠি ‘সীমান্তের দাগ’ (২০-১২) পড়ে এক দলা ব্যথা আবার যেন চাগাড় দিয়ে উঠল। দেশভাগের পর যে সমস্ত অঞ্চলে এঁরা থাকতে শুরু করেন সেই সব ক্যাম্প বা কলোনি ছিল মূল শহরের দূর প্রান্তে বা নিচু জায়গায়। যেখানে তৎকালীন শহুরে মানুষজন সচরাচর পা রাখত না। ‘ক্যাম্পের ছেলে’, ‘কলোনির মেয়ে’ এই সব শব্দবন্ধের মধ্যে ছিল অপমান ও অবজ্ঞার প্রকাশ।
দশম শ্রেণির ছাত্রী তিস্তার চিঠিতে বেশ পরিণতমনস্কতা প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর লেখায় আবেগের আদেখলাপনা নেই কিন্তু নিয়ন্ত্রণ আছে, যা স্বাভাবিক ভাবেই পাঠককে মুগ্ধ করে। নির্মম সত্য যে, এ-পার বাংলার মানুষজন, দেশভাগের আঁচ যাঁদের গায়ে প্রত্যক্ষ ভাবে লাগেনি, হঠাৎ করে তাঁদের নিস্তরঙ্গ শহুরে জীবনে বিভীষিকার মতো কাতারে কাতারে অবাঞ্ছিত মানুষ উপস্থিত হলে তাঁদের খারাপ লাগবে। হৃদয় উদার হলে করুণা হতে পারে, তার বেশি কিছু নয়। তার উপর এঁদের জন্যই বাড়ল জিনিসপত্রের দাম, জমির দাম, অমিল হতে শুরু করল চাকরি। তাই পিঠে কাঁটাতারের চিহ্ন বয়ে বেড়ানো শরণার্থী অনায়াসেই ‘অনুপ্রবেশকারী’ হয়ে গেলেন।
যে মানুষগুলো এই দেশেরই নাগরিক ছিলেন, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের সিদ্ধান্তে যে মানুষগুলোর কোনও মতামত ছিল না, তাঁরা কেন লাঞ্ছিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত হবেন বছরের পর বছর? এক দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে আর এক দেশ, আবার সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে পুরনো দেশে ফেরত— চক্রাকারে চলতে থাকে ভাগ্যের দুরবস্থা। তাই রিফিউজিদের সংগ্রাম চলতে থাকে। বেঁচে থাকার সংগ্রাম, একটা নিজের দেশ পাওয়ার সংগ্রাম, যেখান থেকে আর কেউ তাঁদের উচ্ছেদ করবে না, যেখানে এসআইআর হলেও চিন্তায় ঘুম চলে যাবে না। রাজনীতির ঘুঁটি হয়ে কোনও দলের ছত্রছায়ায় থাকতে হবে না। গর্বের সঙ্গে, সাহসের সঙ্গে নিজেকে দেশের নাগরিক বলতে পারবেন। সেই মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানোর, বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করার এবং পৃথিবীকে আরও একটু রঙিন দেখার আশা নিয়ে রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়া ছাড়া আর কী-ই বা করতে পারি!
সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি
ট্যাক্সি-যন্ত্রণা
হলুদ ট্যাক্সি দাঁড় করালেই গন্তব্য অবধি একটা থোক ভাড়া নিয়ে দরাদরি করতে হয়। কোনও ড্রাইভারই মিটারে যেতে রাজি হন না। বলেন, অ্যাপ ক্যাব তো নানা ছুতোয় বেশি নেয়, এখানে কেন দেবেন না! রাত বাড়লে, উৎসব-মাসে সমস্যা বাড়ে। প্রশাসন ও পরিবহণ দফতরকে অনুরোধ, ট্যাক্সি সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কিমি অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাড়া ধার্য করুন। অথবা শহরে প্রি-পেড ট্যাক্সির বুকিং বুথ বাড়ান।
অরিত্র মুখোপাধ্যায়, শ্রীরামপুর, হুগলি
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)