Advertisement
E-Paper

জলবৎ স্বচ্ছম্

উপাচার্য যাহা বলেন নাই, কিন্তু বুঝিয়া লইতে অসুবিধা হয় না— তাহা হইল, পড়ুয়াদের যাহা স্বার্থবিরুদ্ধ তাহাই আদতে ‘ভুল’।

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৬

পশ্চিমবঙ্গের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পক্ষে পরীক্ষায় পাশ করিবার সর্বাপেক্ষা সহজ পথ কী? উত্তর সহজ। ধুন্ধুমার বাধানো। এমন ধুন্ধুমার যাহা শেষ অবধি শিক্ষামন্ত্রী, মায় মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যন্ত টানিয়া আনে। এই বয়সের পড়ুয়ারা সকলেই ভোটদাতা নাগরিক, সুতরাং মন্ত্রীদের সিদ্ধান্ত কোন দিকে যাইবে, তাহা কোনও প্রশ্নই হইতে পারে না। পড়াশোনা করা অবশ্যই ইহার অপেক্ষা অনেক কঠিন কাজ, বিশেষত নিয়মমাফিক একাধিক বিষয়ে পাশ করিবার পরিশ্রম তো ভাবনার অতীত। সুতরাং নিয়মের ফাঁক ও তাল খুঁজিবার দায়িত্বটি নেতানেত্রীদের উপরেই দিয়া এ-রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা হট্টগোলের সংকট পাকাইয়া উদ্দেশ্য সাধন করিয়া থাকেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি প্রমাণ, পাশ করিবার চেষ্টার অপেক্ষা পাশ করাইবার বিক্ষোভ-অবরোধ কতখানি অধিক কার্যকর। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চির কালই রাজ্যের শিক্ষাভুবনে অগ্রণী ভূমিকায় ব্রতী। এ-ক্ষেত্রেও নিশ্চয় তাহার ব্যতিক্রম হইবে না। রাজ্যব্যাপী ইহাই দস্তুর হইয়া দাঁড়াইবে। ছাত্রছাত্রীদের চিৎকার শুনিয়া মুখ্যমন্ত্রী আসিয়া শিক্ষামন্ত্রীকে বিষয়টি ‘দেখিতে’ বলিবেন, ‘দেখিবার’ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট নিয়মের বিপক্ষে গিয়া ছাত্রছাত্রীদের পক্ষেই রায় দিবে, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত শুনিয়া উপাচার্য বলিবেন, এত দিনে ‘সুবিচার’ হইল। সুবিচার কিসে হয়, তাহারও একটি সন্ধান পাওয়া যাইবে তাঁহার কথায়। পড়ুয়াদের খাতিরে যে-কোনও ভুল সংশোধন করিলেই সুবিচার হয়।

উপাচার্য যাহা বলেন নাই, কিন্তু বুঝিয়া লইতে অসুবিধা হয় না— তাহা হইল, পড়ুয়াদের যাহা স্বার্থবিরুদ্ধ তাহাই আদতে ‘ভুল’। সে-দিক দিয়া বলিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬ সালের সংশোধনীটি কীভাবে পাশ করিবার নূতন নীতি বানাইয়াছিল, ভাবিয়া বিস্মিত হইতে হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিটি এ-বৎসর হইতেই কার্যকর হইবার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিবাদের আকার ও প্রকার অনুযায়ী এখন পরবর্তী বিজ্ঞপ্তির জন্য অপেক্ষা করিতে বলা হইল। স্বাভাবিক। বিজ্ঞপ্তি তথা পদ্ধতি তো মানুষের জন্য। মানুষের ক্ষতি করিয়া পদ্ধতি বানানো তো জনবিরোধী কিংবা মা-মাটি-মানুষবিরোধী কাজ। ইতিহাস জানাইয়াছে, পড়াশোনা পরীক্ষা ইত্যাদি সকলই মায়া, গণতন্ত্রের ব্রহ্ম হইল জনতার মনোরঞ্জন। পাশ-ফেলের উচিত-অনুচিত লইয়া ইতিমধ্যে বিস্তর কথা হইয়াছে, কথা বাড়াইয়া কাজ নাই, কেবল এইটুকুই বলা ভাল যে, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী হইতে উপাচার্য, সকলেই অবগত, নিয়ম মানিয়া ফেল করাইয়া মানুষকে ক্ষুব্ধ করিবার অপেক্ষা নিয়ম তুবড়াইয়া পাশ করাইয়া মানুষকে খুশি রাখা বেশি জরুরি। দরকারে পরীক্ষক-শিক্ষককে সপাটে থাপ্পড় কষাইয়া সরল সত্যটি বুঝাইয়া দেওয়াও যাইতে পারে, ঠিক যেমন ঘটিয়াছে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে।

একটি বিষয়ে তৃণমূল সরকারকে মন খুলিয়া প্রশংসা করা উচিত। বিজেপি মন্ত্রীরা প্রতিরক্ষা বিভাগের যুদ্ধবিমান ক্রয়ের মতো গুরুতর বিষয়েও স্বচ্ছতা রাখিতে পারেন না। অথচ তৃণমূল মন্ত্রীরা সকলেই কলেজে কলেজে পাশফেলে তাঁহাদের প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় ভূমিকা বিষয়েও এক শত শতাংশ স্বচ্ছ। অধিকার বা হেতু না থাকা সত্ত্বেও তাঁহারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অন্দরে গলিয়া গিয়া নিজেদের মত শক্ত হাতে প্রতিষ্ঠা করেন, মত কার্যকর করিতে ন্যূনতম দ্বিধা করেন না। এই সবই একেবারে জলের মতো স্বচ্ছতায় ও স্পষ্টতায় আপামর রাজ্যবাসী দেখিতে পান। উপাচার্যরা কীভাবে মন্ত্রীদের নির্দেশ আদেশ ও উপদেশ মাথা হেঁট করিয়া বহন করেন, তাহাও প্রকাশ্যেই উদ্ভাসিত হয়। বিশ্বস্ততার নজির রচনা করিতে গেলে ছোটখাটো নিয়মনীতি লইয়া বসিয়া থাকিলে চলে কি?

Government Educational Institution Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy