অশান্তির আগুন জ্বলছে পাহাড়ে। —ফাইল চিত্র।
সময়টা খুব সুখের নয় এখন। ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বাদু়ড়িয়া-বসিরহাট যখন জ্বলছে, পরিস্থিতি যাতে অস্বাভাবিক থাকে, তার জন্য উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা যখন অব্যাহত, তখনই আরও এক বার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল দার্জিলিঙের পরিস্থিতি। সংঘর্ষ-মৃত্যু-আগুন-ভাঙচুরে উত্তাল হয়ে উঠল পাহাড়। যে সময়টাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজন আরও বেশি, সেই সময়েই পশ্চিমবঙ্গের এই উত্তেজনা শুধু অবাঞ্ছিতই নয়, বিপজ্জনক।
কারণ বিপদটা শুধুমাত্রই অভ্যন্তরীণ নয়। সিকিম সীমান্তে ভারত-চিন টানাপড়েন এই মুহূর্তে কোন পর্যায়ে, তা সবারই জানা। ’৬২-র যুদ্ধের পর এই প্রথম দুই দেশ এতখানি সঙ্ঘাতের পথে, সীমান্ত অঞ্চলে সেনা মোতায়েন বাড়ছে, রণহঙ্কারের গর্জন শোনা যাচ্ছে। শুধুমাত্র পরিসংখ্যানই যদি বিবেচ্য হয়, তবে জেনে নেওয়া ভাল যুদ্ধের পর এত দীর্ঘমেয়াদি টানাপড়েন এই প্রথম। ২০১৩ সালে লাদাখ সীমান্তে টানাপড়েনের মেয়াদ ছিল একুশ দিন, এ বার মাসাধিক কাল অতিক্রান্ত এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি এখনও।
এই সময়, সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার প্রয়োজন ছিল, যেমনটা থাকা দরকার সিকিমের পরিস্থিতিও। কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পাহাড় তথা শিলিগুড়ি করিডরের অবস্থান, সেখানকার পরিস্থিতি স্পর্শকাতর থাকলে সুবিধা হয় শত্রু শিবিরেরই। অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার কারণে তো বটেই, আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার জন্যও পাহাড়ের পরিস্থিতি অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণে আসা দরকার। সরকারকেও যেমন সতর্ক হতে হবে পুলিশি অতিসক্রিয়তার প্রশ্নে, পাহাড়ের আন্দোলনকারীদেরও আলোচনার পথে হাঁটার পথ ধরা দরকার এখনই।
মুখ্যমন্ত্রী নতুন করে আলোচনার আহ্বান জানালেন শনিবার। প্রশাসনকেও যেমন আরও নমনীয় হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, আন্দোলনকারীদেরও তেমনই আলোচনার টেবিলে আসা দরকার এখনই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসা দরকার। পাহাড়ের মানুষের স্বার্থে, রাজ্যের স্বার্থে এবং সর্বোপরি দেশের স্বার্থে।
সীমান্তে যখন উত্তেজনা, তখন ঘরের ভিতরে আগুন জ্বলতে দেওয়া যায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy