E-Paper

চাকরিহারাদের মেয়াদ বাড়াতে শীর্ষ কোর্টে শিক্ষা দফতর

শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলেছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। এর পরে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে মাধ্যমিক। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু উচ্চ মাধ্যমিকের চতুর্থ সিমেস্টারের পরীক্ষা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:৪৪

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের কাজের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে গেলে সরকারি বিভিন্ন স্কুলে পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই আগামী পয়লা জানুয়ারি থেকে তাঁদের চাকরির মেয়াদ আট মাস বাড়াতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করল শিক্ষা দফতর।

শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলেছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। এর পরে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে মাধ্যমিক। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু উচ্চ মাধ্যমিকের চতুর্থ সিমেস্টারের পরীক্ষা। মার্চে রয়েছে স্কুলগুলির প্রথম পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে যদি ১৩ হাজারের বেশি চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকের কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তা হলে স্কুল চালাতে খুবই অসুবিধা হবে। তাই আমরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে বলেছি, আরও অন্তত আট মাস অথবা এখন যে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে, তা শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হোক।’’

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, নিয়োগ প্রক্রিয়া ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কার্যত নেই দেখে ইতিমধ্যেই স্কুল সার্ভিস কমিশন একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য অতিরিক্ত ১৫ দিন এবং নবম-দশমের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য অতিরিক্ত তিন মাস সময় চেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের কাছে। শিক্ষা দফতরের দাবি, এসএসসি তাদের জানিয়েছে, একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউ সম্পন্ন হলে মেধা তালিকা (প্যানেল ও ওয়েটিং লিস্ট) বেরোতে পারে ৭ জানুয়ারি। এর পরে প্রথম পর্যায়ের কাউন্সেলিং মিটিয়ে চাকরির সুপারিশপত্র দেওয়া হতে পারে ১৫ জানুয়ারি। ১৬ জানুয়ারি থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদে এসএসসি সুপারিশপত্র পাঠাবে।

এ দিকে, নবম-দশমের ইন্টারভিউয়ের জন্য তথ্য যাচাই শুরু হতে পারে ২৬ ডিসেম্বর। ইন্টারভিউয়ের পরে মেধা তালিকা বেরোতে পারে ২৪ মার্চ। প্রথম পর্যায়ের কাউন্সেলিং মিটিয়ে সুপারিশপত্র দেওয়া শুরু হতে পারে ৩০ মার্চ। মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে সুপারিশপত্র পাঠানো শুরু হবে ৩১ মার্চ।

শিক্ষা দফতরের এক কর্তার মতে, নিয়োগপত্র নেওয়ার পরে এক জন প্রার্থীকে পুলিশি যাচাই-সহ নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এর জন্য কিছু দিন সময় লাগে। এই রাজ্যের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মাসখানেক এবং ভিন্ রাজ্যের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মাস তিনেক লেগে যেতে পারে। সেই হিসাবে একাদশ-দ্বাদশের এক জন চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগপত্র পেতে মার্চ মাস হয়ে যেতে পারে। আর নবম-দশমের ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র পেতে জুন-জুলাই হয়ে যেতে পারে। তাই ৩১ ডিসেম্বর ১৩ হাজারের মতো শিক্ষকের কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে স্কুল চালানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছে শিক্ষা দফতর।

শিক্ষা দফতর পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে ১০ লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী। ২৬৮২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার হলে পাহারা দেবেন এক লক্ষের মতো শিক্ষক। এর পরে খাতা দেখা থেকে শুরু করে ফল প্রকা‌শের কাজে যুক্ত থাকতে হয় ৬০ হাজারের বেশি শিক্ষককে। ফল বেরোনোর পরে স্ক্রুটিনি এবং রিভিউয়ের কাজে ১২৫০ জনের মতো শিক্ষককে যুক্ত থাকতে হয়। আবেদনে শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক এবং একাদশ শ্রেণির পরীক্ষাতেও বসে ছ’লক্ষের মতো ছাত্রছাত্রী। স্কুলের পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষাগুলিতে রাজ্য জুড়ে পরীক্ষা দেয় ৫০ লক্ষের মতো পড়ুয়া। এই সব পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কয়েক হাজার শিক্ষককে একযোগে কাজ করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে ১৩ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষকের কাজের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে গেলে শুধু স্কুল পরিচালনাই নয়, পরীক্ষা নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সব দিক বিবেচনা করে আমরা পয়লা জানুয়ারি থেকে আট মাস মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছি।’’

চাকরিহারা এক যোগ্য শিক্ষিকা সঙ্গীতা সাহা বললেন, ‘‘আদালত কী বলে, দেখা যাক। এক হাজারের কাছাকাছি চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক তথ্য যাচাইয়ের ডাক পাননি। এর মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও রয়েছেন। পদার্থবিদ্যায় শূন্য পদ কমেছে। অঙ্কে শূন্য পদ বেড়েছে মাত্র ৮০টি। কিন্তু ওই দুই বিষয়ে আবেদন করেছেন অনেকে। ফলে, যোগ্য চাকরিহারারা অনেকেই ডাক পাননি। এঁদের বিষয়ে সরকার কী ভাবছে, সে বিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য দরকার।’’

অন্য দিকে, নতুন চাকরিপ্রার্থীরাও জানাচ্ছেন, তথ্য যাচাইয়ে নতুনদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ডাক পেয়েছেন। অভিজ্ঞদের দেওয়া অতিরিক্ত ১০ নম্বর বাতিলের দাবিতে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal School Service Commission School Recruitment Case Supreme Court of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy