Advertisement
E-Paper

দাপট

পার্থবাবু অনধিকারচর্চা করিলেও প্রশ্নটি কিন্তু গুরুত্ব হারায় না। যে প্রতিষ্ঠানটির স্বপ্ন ছিল বিশ্বমানের উৎকর্ষ-কেন্দ্র হইয়া উঠিবার, তাহার এমন অবস্থা কী ভাবে হইল যে বহু বিভাগেই সিংহভাগ আসন খালি পড়িয়া থাকে?

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ১০:১৬
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি।

অস্বীকার করা চলিবে না, পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে সরকারের শিক্ষামন্ত্রী, তাহারই রাজকোষ হইতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়নির্বাহ হয়। অতএব, শিক্ষামন্ত্রী মহাশয় নিতান্তই অধিকারবোধে প্রেসিডেন্সির নিকট জবাবদিহি চাহিয়াছেন। না, টাকার হিসাব নহে, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা পূর্ণ হইতেছে না, পার্থবাবু তাহার কৈফিয়ত দাবি করিয়াছেন। তাঁহার নিকট পাল্টা কৈফিয়ত দাবি করিবার সময় আসিয়াছে— কোন এক্তিয়ারে তিনি কৈফিয়ত তলব করিলেন? ইতিপূর্বে তাঁহাকে বহু বার স্মরণ করাইয়া দেওয়া হইয়াছে যে তিনি শিক্ষামন্ত্রী, রাজ্যের শিক্ষানীতি নির্ধারণে তাঁহার বিলক্ষণ অধিকার আছে, কিন্তু কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কী ভাবে চলিবে, তাহা তিনি বলিয়া দিতে পারেন না। মন্ত্রিবরের স্মৃতিশক্তি হয়তো তেমন প্রখর নহে, ফলে একই ভুল তিনি বারংবার করিয়া চলেন। আরও এক বার মনে করাইয়া দেওয়া যাউক যে সরকারের টাকা তাঁহার বা দলের ব্যক্তিগত নহে, ফলে টাকা দেন বলিয়াই তাঁহার খবরদারি করিবার অধিকার জন্মাইয়া যায় না। কিন্তু, তাঁহারা অনিল বিশ্বাসের উত্তরপুরুষ। অনিলবাবু যে নিয়ন্ত্রণকে শিল্পের স্তরে লইয়া গিয়াছিলেন, পার্থবাবুরা তাহাকেই নিজস্ব আঙ্গিকে অর্থাৎ প্রকট এবং স্থূল ভাবে প্রয়োগ করিতে ব্যস্ত। সর্বাপেক্ষা দুর্ভাগ্যের, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষামন্ত্রীর এই বে-এক্তিয়ার খবরদারি মানিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নাই— তাঁহারা শিক্ষা দফতরে যাবতীয় তথ্য পাঠাইতেছেন বলিয়া সংবাদে প্রকাশ। দুর্জনে বলিয়া থাকে, মুখ্যমন্ত্রীর হাত হইতে আর্থিক অনুদান লইবার সময় উপাচার্য যে ঝুঁকিয়া পড়িয়াছিলেন, তাহার পর তিনি আর মেরুদণ্ড সোজা করেন নাই। পার্থবাবুরা নির্দ্বিধায় কৈফিয়ত তলব করিবেন, তাহাতে আশ্চর্য কী!

পার্থবাবু অনধিকারচর্চা করিলেও প্রশ্নটি কিন্তু গুরুত্ব হারায় না। যে প্রতিষ্ঠানটির স্বপ্ন ছিল বিশ্বমানের উৎকর্ষ-কেন্দ্র হইয়া উঠিবার, তাহার এমন অবস্থা কী ভাবে হইল যে বহু বিভাগেই সিংহভাগ আসন খালি পড়িয়া থাকে? উত্তরে কর্তৃপক্ষের দিকেই আঙুল উঠিবে। বহু বিভাগেই যথেষ্টসংখ্যক শিক্ষক নাই, আংশিক সময়ের শিক্ষকের ভরসায় পঠনপাঠন চলিতেছে। বিশ্বমানের গবেষকদের আকৃষ্ট করিবার মতো গবেষণা পরিকাঠামোও নাই। তবুও, বেশ কয়েক জন যশস্বী অধ্যাপক প্রেসিডেন্সিতে আসিয়াছিলেন। অনতিবিলম্বে তাঁহারা বিদায় লইয়াছেন, বা পলাইয়া বাঁচিয়াছেন। অভিজ্ঞ মহলের মতে, অল্প দিনেই এমন অপযশ হইয়াছে যে যোগ্য শিক্ষকরা প্রেসিডেন্সির ছায়া মাড়াইতেও অরাজি। ছাত্ররা কোন ভরসায় আসিবে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্নে মেন্টর গ্রুপ গড়িয়া দেওয়া হইয়াছিল— অমর্ত্য সেন হইতে সুগত বসু, অশোক সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বহু যশস্বী অধ্যাপক এই দলের সদস্য। উদ্দেশ্য ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন তাঁহার নির্দেশানুসারে চলিবে। দলটি হয়তো এখনও আছে, কিন্তু তাহার কার্যত আর কোনও ভূমিকা নাই। উত্তরবঙ্গ বা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় যে ভঙ্গিতে চলে, প্রেসিডেন্সিও তথৈবচ। রাজনীতির দাপটের সম্মুখে নমনীয় মেরুদণ্ডবিশিষ্ট উপাচার্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তব। আরও চিন্তার কথা, তাঁহারা যে পথ তৈরি করিতেছেন, প্রেসিডেন্সিকে তাহা হইতে বিচ্যুত করা কঠিন কাজ। চলার পথ তৈরি হইলে সেই পথে চলিতে থাকাই যে কোনও প্রতিষ্ঠানের ধর্ম। সম্ভবত এই কারণেই কলিকাতা বা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিত যাদবপুরের ফারাক অনপনেয়। প্রেসিডেন্সিকে বাঁচাইতে হইলে এখনই সক্রিয় হওয়া বিধেয়। অনেক কিছু করিতে হইবে। প্রথম কাজ, পার্থবাবুদের কৈফিয়ত তলব করিবার অনধিকারচর্চাটি বন্ধ করা। অবিলম্বে।

Partha Chattopadhyay Presidency University পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy