Advertisement
E-Paper

(অ)প্রতিদ্বন্দ্বী

আপাতদৃষ্টিতে ইহা সামান্য ঘটনা। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অশান্তির প্রেক্ষাপটে স্থাপন করিলে, তাহার মূল্য বুঝা যায়।

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৫৭

স‌ংবাদ কাহাকে বলে? তর্কে বহু দূর। তবে সাধারণ ভাবে মনে করা হয়, যাহা স্বাভাবিক এবং প্রাত্যহিকতায় পরিণত, তাহা সংবাদ নহে। বরং যাহার মধ্যে কিছু পরিমাণ অ-স্বাভাবিকতা আছে, তাহাই সংবাদ। ধুবুলিয়ার বিশ্বাসবাড়ি যে সংবাদ হইয়াছে, তাহা এই কারণেই। বাড়ির দুই বধূর এক জন তৃণমূল এবং অন্য জন বিজেপির প্রার্থী হইয়া একই বুথে মনোনয়ন জমা করিয়াছেন। অর্থাৎ, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁহারা পরস্পরের প্রতিপক্ষ। অতঃপর, হাঁড়ি ভিন্ন হইবে, মুখ দেখাদেখি বন্ধ হইবে এবং পরিবারের অন্যরা উস্কানি দিয়া পরিস্থিতি ঘোরালো করিয়া তুলিবেন, এমনটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তাহা হয় নাই। রাজনৈতিক বৈরিতাকে তাঁহারা অন্দরমহলে ঢুকিতে দেন নাই। বরং একের অনুপস্থিতিতে অন্য জনে তাঁহার ঘরটির দেখভাল করিতেছেন। যোগ্য অভিভাবকের মতো সতর্ক নজর রাখিয়াছেন পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরাও। দেখিয়াছেন, বাহিরের অশান্তি যেন অন্দরের চৌকাঠ না ডিঙাইতে পারে।

আপাতদৃষ্টিতে ইহা সামান্য ঘটনা। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অশান্তির প্রেক্ষাপটে স্থাপন করিলে, তাহার মূল্য বুঝা যায়। ইহাই তো আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশের উপযুক্ত পরিবেশ, যেখানে দেশের অভিভাবকের সস্নেহ নজরদারির তলায় বিভিন্ন মত, ধর্ম, বিশ্বাসের মানুষ শান্তিতে, নিঃসঙ্কোচে বসবাস করিতে পারেন, সংবিধান-প্রদত্ত অধিকারগুলি সসম্মানে ভোগ করিতে পারেন। সেখানে মতানৈক্য থাকিতেই পারে। কিন্তু আদর্শ গণতন্ত্রে সেই মতানৈক্য অন্যের ক্ষতি করিয়া যত্রতত্র কদর্য ভাবে প্রকাশ পায় না। বলা ভাল, তাহার প্রকাশ ঘটিতে না দেওয়াতেই গণতন্ত্রের সাফল্য। এই আদর্শ গণতন্ত্রেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নির্বাচন, তাহা পঞ্চায়েতই হউক, কিংবা লোকসভায়। সুতরাং, সমস্ত রাজনৈতিক মত নির্বিশেষে তাহাতে অংশ লওয়া দেশের প্রতিটি নাগরিকের একান্ত কর্তব্য। সেই কর্তব্য পালনে যখন বাধা আসে, ভিন্ন মত বলিয়া প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দেয়, এবং সব দেখিয়াও দেশের, রাজ্যের অভিভাবকরা চুপ করিয়া থাকেন, হিংসায় প্রচ্ছন্ন মদত দেন, তখন ধরিয়া লইতে হইবে সেই গণতন্ত্রের সাড়ে সর্বনাশ হইল।

দুর্ভাগ্যের বিষয়, ভারতীয় গণতন্ত্রে সেই সর্বনাশের লক্ষণ ক্রমশ প্রকট হইতেছে। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া যে ভয়ঙ্কর হানাহানি দেখা গেল, তাহাতে এমনটা বোধ হইতে বাধ্য। অথচ, রাজনৈতিক সৌহার্দ্যের বার্তা দিবার নজির দেশে কম নাই। এই বঙ্গের রাজনীতিও তাহা মাঝেমধ্যেই প্রত্যক্ষ করিয়াছে। অসুস্থ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখিতে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হাজির হইয়াছেন, অভিনেতা-সাংসদ পারিবারিক প্রয়োজনে বিরোধী দলের আত্মীয়ের পাশে দাঁড়াইয়াছেন। এমন উদাহরণ আরও আছে। কিন্তু রাজনৈতিক হিংসা যে রূপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতেছে, তাহাতে এই দুই-একটি ঘটনা বিচ্ছিন্ন হইয়াই থাকিতেছে। সামগ্রিক কোনও ইতিবাচক চিত্র তুলিয়া ধরিতেছে না। বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলিয়াই বিশ্বাসবাড়ি খবরের শিরোনামে উঠিয়া আসিয়াছে। রাজনীতিকে ব্যক্তিজীবনে নহে, ভোটের ময়দানে আটকাইয়া রাখিবার খবর যে দিন সংবাদ শিরোনাম হইবে না, আদর্শ গণতন্ত্র সেই দিন প্রতিষ্ঠিত হইবে। স্বমহিমায়।

violence election news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy