Advertisement
E-Paper

অশনিসংকেত

ভোর রাত্রে দরজায় কড়া নাড়িল ফ্যাসিবাদ। নামান্তরে, সিবিআই। গৃহকর্তার সংস্থা একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সহিত প্রতারণা করিয়া ৪৮ কোটি টাকা ঠকাইয়া লইয়াছেন, এই অভিযোগে তল্লাশি।

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৭ ০০:০০
প্রণয় রায়

প্রণয় রায়

ভোর রাত্রে দরজায় কড়া নাড়িল ফ্যাসিবাদ। নামান্তরে, সিবিআই। গৃহকর্তার সংস্থা একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সহিত প্রতারণা করিয়া ৪৮ কোটি টাকা ঠকাইয়া লইয়াছেন, এই অভিযোগে তল্লাশি। ব্যাঙ্কটির তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হইয়াছে বলিয়া খবর নাই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সেবি-ও কোনও তদন্ত আরম্ভ করিয়াছে বলিয়া শোনা যায় নাই। কোনও একটি অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআই সরাসরি তদন্তে নামিয়া পড়ে, এমন নজিরও বিরল। এই ক্ষেত্রে এতগুলি ব্যতিক্রম হইল, তাহার কারণ সম্ভবত একটিই— গৃহকর্তার নাম প্রণয় রায়। দেশের যে দুই-একটি সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল অষ্টপ্রহর মোদী-নাম জপ করিতে অস্বীকার করিয়াছে, শ্রীরায়ের চ্যানেলটি সেই বিরল প্রজাতিভুক্ত। বিন্দুগুলি মিলাইতে অসাধারণ কল্পনাশক্তির প্রয়োজন নাই। বর্তমান শাসকরা যে কোনও বিরুদ্ধস্বরকে দমন করিতে যে ভঙ্গিতে সিবিআই বা অন্যান্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার করিয়া চলিতেছেন, ইহাও কি তাহারই উদাহরণ নহে? রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করিয়া বিরুদ্ধমতকে দমন করা ফ্যাসিবাদী শাসনের নির্ভুল অভিজ্ঞান নহে? সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই পথে হাঁটা একটি বৃহত্তর অশনিসংকেতও বটে। নরেন্দ্র মোদী কথায় কথায় জরুরি অবস্থার অন্ধকার দিনগুলির উল্লেখ করেন। সেই উল্লেখ তাঁহার রাজনৈতিক প্রচার-ভাষার অঙ্গ। কিন্তু তাঁহাকে স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন, যে অন্ধকার তিনি সৃষ্টি করিতেছেন, তাহা জরুরি অবস্থার চাহিতেও গাঢ়তর। কারণ, সেই সময় সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করিবার চেষ্টাটি ঘোষিত, অতএব প্রকট ছিল। তাঁহার জমানার নিয়ন্ত্রণ প্রচ্ছন্ন, ফলে ভয়ঙ্করতর।

শ্রীরায়ের সংস্থার বিরুদ্ধে উঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগগুলির কয় আনা সত্য, তাহা তদন্তসাপেক্ষ। কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাই আইনের ঊর্ধ্বে নহেন, ফলে অভিযোগ থাকিলে তদন্ত হওয়া বিধেয় ও কাম্য। কিন্তু, সেই তদন্তের প্রাথমিক এক্তিয়ার সিবিআই-এর নহে। বস্তুত, যেখানে যথাযথ অভিযোগেরই খোঁজ পাওয়া যাইতেছে না, সেখানে সিবিআই-এর অতিসক্রিয়তাই প্রবল সংশয় জাগায় যে, অভিযোগটি অছিলামাত্র— প্রকৃত উদ্দেশ্য সমালোচককে হেনস্তা করা। বর্তমান শাসকরা যে ভঙ্গিতে সিবিআইকে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিতে ব্যবহার করিয়াছেন, তাহাতে সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নিরপেক্ষতা বিষয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস তলানিতে ঠেকিয়াছে। শাসকরাও বিশ্বাসযোগ্যতা হারাইয়াছেন। শাসকরা কাল না থাকিলেও সিবিআই-এর ন্যায় প্রতিষ্ঠানগুলি থাকিবে। সেগুলির প্রতি বিশ্বাস নষ্ট হইলে গণতন্ত্রের অপরিসীম ক্ষতি।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা চিরকালই একনায়কতন্ত্রের চক্ষুশূল। কারণ, রাজার পোশাক লইয়া প্রশ্ন করা সংবাদমাধ্যমের পক্ষেই সম্ভব। অতএব, একনায়কতন্ত্র তাহাকে বশ মানাইবার চেষ্টা করিয়াই থাকে। ইন্দিরা গাঁধীও করিয়াছিলেন, মোদীও করিতেছেন। তবে, জরুরি অবস্থা চলাকালীন ইন্দিরা গাঁধী স্মিতহাস্যে সংবাদমাধ্যমকে তাহার নিরপেক্ষ, নির্ভীক অস্তিত্বের মাহাত্ম্য বুঝাইয়া বলিবার প্রহসন করেন নাই; নরেন্দ্র মোদী করিয়াছেন। জরুরি অবস্থায় বহু সাংবাদিক জেল খাটিয়াছিলেন। কিন্তু, তাঁহাদের হয়রান করিবার জন্য আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ খুঁজিয়া আনিতে হয় নাই। মোদীর জমানায় স্লোগান ভিন্ন আর কোথাও স্বচ্ছতা নাই। ফলে নাগরিক সমাজের কাজটিও কঠিনতর। শাসকদের প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা বিধেয়। কোন সিদ্ধান্তের পিছনে ঠিক কোন কারণটি রহিয়াছে, এবং তাহাতে গণতন্ত্রের কতখানি ক্ষতি হইতেছে, প্রতিনিয়ত সেই হিসাব কষিয়া চলিতে হইবে। এই অন্ধকারে সচেতনতাই আলো।

Private Bank Narendra Modi Prannoy Roy CBI Freedom of press
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy