Advertisement
E-Paper

বিশ্বাসে মিলায়

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্তটিও তাঁহার উপরই ন্যস্ত থাকিতে পারিত। কিন্তু, রবিশংকর প্রসাদ আসল কথাটি বলিয়া দিয়াছেন— প্রশ্নটি বিশ্বাসের।

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:২২

প্রধানমন্ত্রীর উপর কি বিচারপতিদের যথেষ্ট বিশ্বাস নাই? গুরুতর প্রশ্ন। দ্বিগুণ গুরুতর, কারণ প্রশ্নটি তুলিয়াছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী। ভারতে বিচারক নিয়োগের কাজটি কেন বিচারকদের হাতেই থাকিবে, কেন আইনসভার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী সেই সিদ্ধান্ত করিবার অধিকারী হইবেন না, সেই প্রসঙ্গে রবিশংকর প্রসাদ জানিতে চাহিয়াছেন, প্রধানমন্ত্রী যে পক্ষপাতহীন বিচারক নিয়োগ করিতে পারিবেন, এই বিশ্বাসটুকু বিচারবিভাগের নাই কেন? রবিশংকর প্রসাদ খানিক বাড়াইয়া বলিয়াছেন— নরেন্দ্র মোদী দেশের সব মানুষের বিশ্বাস অর্জন করিয়া প্রধানমন্ত্রী হন নাই, ২০১৪ সালে বিজেপি সাকুল্যে মোট ৩১ শতাংশ ভোট পাইয়া ক্ষমতায় আসিয়াছিল, ভারতের ইতিহাসে ইহাই শতকরা হিসাবে সর্বনিম্ন ভোট পাইয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের নজির— কিন্তু, তিনি যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, তখন একশত ত্রিশ কোটির ভালমন্দ নির্ধারণের চূড়ান্ত অধিকারী হিসাবে তিনি স্বীকৃত তো বটেই। অতএব, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্তটিও তাঁহার উপরই ন্যস্ত থাকিতে পারিত। কিন্তু, রবিশংকর প্রসাদ আসল কথাটি বলিয়া দিয়াছেন— প্রশ্নটি বিশ্বাসের। তাঁহার নির্বাচন যে নিরপেক্ষ হইবে, সেই বিশ্বাসের জায়গা কোথায়? যে পদগুলিতে নিয়োগের অধিকার প্রধানমন্ত্রীর আছে, তাহার প্রতিটিতেই নিয়োগের সিদ্ধান্ত একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হইয়াছে— প্রধানমন্ত্রী যাঁহাদের পদে বসাইয়াছেন, মোদী-ঘনিষ্ঠতাই কি তাঁহাদের প্রধানতম যোগ্যতা নহে? প্রশ্নটি যে ভিত্তিহীন নহে, নিতান্ত অন্ধভক্তরাও সম্ভবত স্বীকার করিবেন। অনুমান করা চলে, প্রধানমন্ত্রী একটি ‘কমিটেড’ বা অনুগত শাসনব্যবস্থা তৈরি করিতে চাহেন। ইন্দিরা গাঁধী যেমন করিয়াছিলেন। তখনও কলেজিয়াম প্রথা ছিল না, ফলে তাঁহার পক্ষে ‘কমিটেড জুডিশিয়ারি’ তৈরি করাও সম্ভব হইয়াছিল। নরেন্দ্র মোদীর হাতেও এই অধিকারটি আসিলে যে অতীতের পুনরাবৃত্তি হইবে না, তেমন ভরসা কোথায়?

বিশ্বাসের প্রশ্নটি, অতএব, বিচারবিভাগের প্রতি নহে, নিজেদের অভিমুখে ছুড়িয়া দেওয়াই বিধেয় ছিল। শ্রীপ্রসাদ জিজ্ঞাসা করিতে পারিতেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কেন তাঁহাদের প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করিতে পারেন না? প্রশ্নটির উত্তর তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাজে, কথায়, এবং নীরবতায় পাইবেন। তিনি যে গোটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হইতে পারেন নাই, একটি বিশেষ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর নেতাই থাকিয়া গিয়াছেন, এই কথাটি এখন আর সম্ভবত নূতন প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। যে ভঙ্গিতে তিনি আমলা বাছেন, বিভিন্ন ‘স্বশাসিত’ সংস্থার প্রধান নিয়োগ করেন, তাহাতে সন্দেহ হইতে পারে যে গণতন্ত্রের সুস্বাস্থ্য নহে, ব্যক্তিগত এবং দলগত স্বার্থসিদ্ধিই তাঁহার অভিষ্ট। বিশ্বাস অর্জন করিতে হইলে এই ক্ষুদ্রতাগুলি অতিক্রম করিতে হয়।

অভিজ্ঞতা বলিতেছে, সাম্প্রতিক কালে ভারতীয় প্রশাসন ক্ষুদ্রতার জালেই আটকাইয়া গিয়াছে। মানুষ নেহাত অকারণে আদালতকেই ন্যায়বিচার পাইবার একমাত্র ঠিকানা জ্ঞান করেন না। রবিশংকর প্রসাদ আদি নেতাদের তাহাতেও গোসা হয়। তাঁহারা বিচারবিভাগের অতিসক্রিয়তার কথা উল্লেখ করিয়া থাকেন। অভিযোগটি অবান্তর নহে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আদালত যে সত্যই অতিসক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে, সেই কথা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেও একাধিক বার আলোচিত হইয়াছে। কিন্তু, তাহার কারণও সরকারের আচরণেই সন্ধান করিতে হইবে। আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ যদি নিরপেক্ষ না হয়, তবে বিচারবিভাগের পক্ষে নিষ্ক্রিয় থাকা দুষ্কর। প্রধান বিচারপতি স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন, কোনও নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হইলে আদালত তাঁহার পার্শ্বে দাঁড়াইতে দায়বদ্ধ। অতএব, রবিশংকর প্রসাদরা নিজেদের প্রশ্ন করুন।

Ravi Shankar Prasad Narendra Modi BJP Indian administration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy