E-Paper

জুজু

অসমে ডিটেনশন সেন্টার তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের একটি যুক্তি ছিল উত্তর-পূর্বের সীমান্ত নিরাপত্তা। উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে কিন্তু সে যুক্তি খুব পোক্ত নয়। রাজ্যটির বহিঃসীমান্ত একমাত্র নেপালের সঙ্গে, বাকি সবই আন্তঃ-রাজ্য সীমান্ত।

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:২০

ধরে নেওয়া যায়, উত্তরপ্রদেশ এ বার অসম হতে চলেছে। ‘অবৈধ অভিবাসী’, ‘পরিচয়পত্রহীন বিদেশি’ ইত্যাদি দাগিয়ে ধরপাকড়, ডিটেনশন ক্যাম্প নামের বন্দিশিবিরে পুরে দেওয়ার জেরে হেনস্থা, নির্যাতন থেকে শুরু করে আত্মহনন অবধি সব কিছুই ঘটেছে বছর কয়েক আগের অসমে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও যে সেই পথেই হাঁটছেন, প্রমাণ রাজ্যের প্রতিটি জেলাশাসকের কাছে পাঠানো তাঁর সাম্প্রতিক নির্দেশ— অনুপ্রবেশকারী, অবৈধ অভিবাসী ও বিদেশিদের চিহ্নিত করতে হবে; রাজ্যের প্রতিটি জেলায় অস্থায়ী ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করতে হবে; চিহ্নিত অবৈধ অভিবাসী/বিদেশিদের স্থান হবে সেখানে— সেখান থেকেই উপযুক্ত ব্যবস্থায় তাদের ফেরত পাঠানো হবে যথাস্থানে।

যে যে রাজ্যে এসআইআর-এর কাজ চলছে, উত্তরপ্রদেশও তার অন্যতম। সেই আবহে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বা অভিবাসী/বিদেশি শনাক্তকরণের নির্দেশ ভুয়ো ভোটার ধরার লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপ অবশ্যই। তবে সেখানেই যে তার শেষ নয়, বোঝা যায় অবিলম্বে ডিটেনশন সেন্টার তৈরির আদেশে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা, সম্প্রীতি রক্ষা ও সর্বোপরি ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র সাফাই গেয়েছেন: প্রথম দু’টি নিশ্চিত করা পুলিশের কাজ, তৃতীয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের নিরিখে কেন্দ্র-রাজ্য উভয়েরই; তবে যে অনুপ্রবেশকারী বা বিদেশিরা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক, তাদের ডিটেনশন সেন্টারে রাখতে চাওয়া ও পরে স্বদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার যুক্তি ধোপে টেকে কি? সেই সঙ্গে লক্ষণীয় অতি সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ সরকারের আরও একটি নির্দেশ, রাজ্যের ১৭টি পুরনিগমকে বলা হয়েছে সরকারি ‘স্যানিটেশন ওয়ার্কফোর্স’ বা সাফাইকর্মীদের মধ্যে মিশে থাকা রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরি করে তা বিভাগীয় কমিশনার ও ইনস্পেক্টর জেনারেলদের হাতে তুলে দিতে, কারণ অধিকাংশ অবৈধ অভিবাসীর উপস্থিতি নাকি এই জীবিকাতেই! বুঝতে অসুবিধা হয় না, অনুপ্রবেশকারী, অভিবাসী বা বিদেশির নাম করে যোগী সরকার আসলে কাদের ডিটেনশন সেন্টারে ভরতে চায়।

অসমে ডিটেনশন সেন্টার তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের একটি যুক্তি ছিল উত্তর-পূর্বের সীমান্ত নিরাপত্তা। উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে কিন্তু সে যুক্তি খুব পোক্ত নয়। রাজ্যটির বহিঃসীমান্ত একমাত্র নেপালের সঙ্গে, বাকি সবই আন্তঃ-রাজ্য সীমান্ত। অনুপ্রবেশকারী বা অবৈধ বিদেশি চিহ্নিত করার কাজ পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যত কঠিন, উত্তরপ্রদেশে তত নয়। তার থেকেও জরুরি কথাটি হল, রাজ্যে সত্যিই বিপজ্জনক অনুপ্রবেশ হচ্ছে কি না তার নজরদারিও পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষে কঠিন কিছু নয়, এও তাদের নিয়মিত কাজের মধ্যেই পড়ে। তবু সেই কাজই যখন সরকারি ঢাকঢোল পিটিয়ে, ডিটেনশন সেন্টারের জুজু দেখিয়ে করা হয়, তখন বুঝতে হবে, এর এক রাজনৈতিক মতলব আছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে সাম্প্রতিক কালে অবৈধ অভিবাসী নিয়ে যে ধরপাকড় ও হেনস্থা-অভিযান চলছে, এসআইআর-আবহে অ-বিজেপি রাজ্যগুলিতেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যা নিয়ে খড়্গহস্ত— এ তারই অঙ্গ। ভোটের বাজারে সঙ্কীর্ণ স্বার্থসিদ্ধিতে এবং মানুষে মানুষে বিভাজনের বৃহত্তর উদ্দেশ্য হাসিল করতে এই ভয় দেখানো জারি থাকবে— অসমে, উত্তরপ্রদেশে, কিংবা অন্যত্র।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Detention Camp Uttar Pradesh Assam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy