Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
United Nations

উন্নয়নের পাঠ

তবে এই বৎসরের রিপোর্টে যাহা দেখানো হইয়াছে, তাহা ২০১৯ সালের মানব উন্নয়নের চিত্র। তখনও করোনাভাইরাস আসে নাই, দেশবাসীর জীবন-জীবিকায় অতিমারিজনিত অভূতপূর্ব দুরবস্থা তখন ছিল না।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:২৮
Share: Save:

রাষ্ট্রপুঞ্জের মানব উন্নয়ন সূচকে নামিয়া গিয়াছে ভারত। ১৮৯টি দেশের মধ্যে তাহার স্থান ১৩১। শ্রীলঙ্কা, চিন, ভুটান তাহার আগে, অব্যবহিত পশ্চাতে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানব উন্নয়ন প্রকল্প দেশে দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নের বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করিয়া থাকে, সেখানে আগের বছরের স্থান হইতে ভারত দুই ধাপ নামিয়াছে। তাহার অর্থ ইহা নহে যে, ভারতে উন্নয়ন হয় নাই। তাহার অর্থ, অন্য দেশগুলি ভারত অপেক্ষা ভাল ফল করিয়াছে।

তবে এই বৎসরের রিপোর্টে যাহা দেখানো হইয়াছে, তাহা ২০১৯ সালের মানব উন্নয়নের চিত্র। তখনও করোনাভাইরাস আসে নাই, দেশবাসীর জীবন-জীবিকায় অতিমারিজনিত অভূতপূর্ব দুরবস্থা তখন ছিল না। সেই নিরিখেও ভারতের পয়েন্ট পতন, মাথাপিছু জাতীয় আয় হ্রাস ভাবিবার কথা বইকি। কোভিডপীড়িত এই বৎসরে মানব উন্নয়নের হিসাব মিলিবে পরের বৎসর, সেই খতিয়ান যে স্বস্তির হইবে না, তাহাও এক প্রকার নিশ্চিত। দেশে কর্মসংস্থানের চিত্র করোনা-পূর্ব সময়ে আদৌ ভাল ছিল না, এই বৎসর কর্মহীনতা তুঙ্গস্পর্শী হইয়াছে। জিডিপি-র রেকর্ড সঙ্কোচন হইয়াছে। সরকার আশা করিয়াছিল, বাজারের হাতে ভার তুলিয়া দিলে ভাল হইবে, চাহিদা-জোগানের সাম্যাবস্থায় অর্থনীতির চাকা ঘুরিবে। কিন্তু দরিদ্র, অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিতদের অবস্থা ফিরে নাই। সামাজিক পরিসরগুলির উন্নয়নে বাজেট-বরাদ্দ কমাইয়া দিয়াছে সরকার, খাদ্যাভাব ও অপুষ্টি বাড়িয়াছে। শিক্ষাও চরম বিপর্যস্ত, শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত শিক্ষা ও মিড-ডে মিল-সহ সামগ্রিক ব্যবস্থাটিই এত ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে যে, কোভিডোত্তর বিপুল পরিমাণ স্কুলছুটের আশঙ্কা করিতেছে শিক্ষাক্ষেত্র। রিপোর্টে বলা হইয়াছে, আর্থিক নিরাপত্তা ও জমির মালিকানা থাকিলে নারীর নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন বাড়ে, পরিবার ও সমাজে লিঙ্গভিত্তিক হিংসা কমিয়া আসে। তাহা কত দূর হইয়াছে, আদৌ হইয়াছে কি না তাহা পরের বৎসরের হিসাব বলিবে সত্য, কিন্তু সরকারকে অবিলম্বে ইহা গুরুত্ব দিয়া দেখিতে হইবে। রাজনীতি বা অন্য লাভালাভের চিন্তা না করিয়া আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দরিদ্রের অর্থাভাব, মধ্যবিত্তের ক্রমাগত ব্যয়সঙ্কোচ-সহ হতবল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রের হাল ধরিতে হইবে। সমাজে উন্নয়ন ও সক্ষমতার মূল চাহিদাগুলি পূরণ করিতে হইবে রাষ্ট্রকেই।

এই প্রেক্ষিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মানব উন্নয়নচিত্র দেখিতে পারে ভারত। তালিকায় ভারতের পরে স্থান পাইলেও গত এক দশকে বেশ কয়েকটি সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ আগাইয়া আছে। শিশুমৃত্যুর হার ও টিকাকরণে তাহার সাফল্য ভারত অপেক্ষা ভাল। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক, লিঙ্গভিত্তিক উন্নয়ন সূচক, এমনকি গত বৎসরের বিশ্ব সুখসূচকেও ভারত বাংলাদেশের পিছনে ছিল। যে দেশ হইতে বিস্তর মানুষ আসিতেছেন এবং ভবিষ্যতেও আসিবেন বলিয়া কেন্দ্রীয় সরকার উত্তেজিত, সাম্প্রতিক তথ্যে প্রকাশ— বেআইনি ভাবে আসা বাংলাদেশিরা বরং স্বদেশেই ফিরিতেছেন বেশি। অতিমারিতেই হউক বা নিরাপদ সময়ে, সামাজিক ক্ষেত্রগুলিকে রাষ্ট্র গুরুত্ব বা অগ্রাধিকার দিতেছে বুঝিয়াই তাঁহাদের এই প্রত্যাবর্তন। রাষ্ট্রীয় প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও দূরদর্শিতাই সমাজে মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করে। হউক ক্ষুদ্র প্রতিবেশী, বাংলাদেশের কাছে ভারতের সেই পাঠ লওয়া দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

United Nations China India Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE