Advertisement
E-Paper

যুগান্তকারী

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ ০০:২৭
টি-টোয়েন্টিমুখর, বিনোদনসর্বস্ব ক্রিকেটকালে অস্টে্রলিয়ার মাঠে ভারতের এই জয় টেস্ট ক্রিকেটের ধ্রুপদী মূল্যবোধে বিশ্বাস ফিরাইয়া আনিয়াছে।

টি-টোয়েন্টিমুখর, বিনোদনসর্বস্ব ক্রিকেটকালে অস্টে্রলিয়ার মাঠে ভারতের এই জয় টেস্ট ক্রিকেটের ধ্রুপদী মূল্যবোধে বিশ্বাস ফিরাইয়া আনিয়াছে।

জর্জ ডব্লিউ বুশ সিনিয়র সদ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতিয়াছেন। সচিন তেন্ডুলকরের টেস্ট অভিষেক হয় নাই, বিরাট কোহালি নবজাতক মাত্র। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দল সেই যে ব্রিসবেনের মাঠে টেস্ট হারিয়াছিল, ফের হারিল বত্রিশ বৎসর পরে, এই সপ্তাহে। এই প্রথম কোনও এশীয় দল দুর্ভেদ্য গ্যাবা-দুর্গ জয় করিল, এবং শুধু ম্যাচ নয়, সিরিজ়ও। বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি ভারতেরই রহিল, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানটি হাতে আসিল, বহু রেকর্ড গড়া হইল। কিন্তু তাহা তো কত ম্যাচেই হইয়া থাকে। ইহা ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ় সিরিজ় ছিল না, ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথও নহে। ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর ঘিরিয়া ব্যক্তিগত বা দলীয় কীর্তি কম নাই, তিন বৎসর আগেই ভারত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই টেস্ট সিরিজ় জয় করিয়া আসিয়াছে। তথাপি ভারতের এই সাম্প্রতিক সিরিজ় জয় ঘিরিয়া এহেন গণ-উন্মাদনা কেন? কেন ইহাকে ‘ঐতিহাসিক’, ‘বিশ্বকাপ জয়ের সমান কৃতিত্ব’ ইত্যাদি বলা হইতেছে?

কারণ, টি-টোয়েন্টিমুখর, বিনোদনসর্বস্ব ক্রিকেটকালে এই জয় টেস্ট ক্রিকেটের ধ্রুপদী মূল্যবোধে বিশ্বাস ফিরাইয়া আনিয়াছে। ক্রিকেটবেত্তামাত্রেরই মত, ক্রিকেটারের আসল দক্ষতার পরীক্ষা টেস্টের ময়দানে। সেখানে তিল তিল করিয়া পুঁজি গড়িতে হয়, বিপক্ষের শত প্রলোভনে না ভুলিয়া, মন চাহিলেও আক্রমণ গুটাইয়া রক্ষণ নিশ্ছিদ্র করিয়া তুলিতে হয়। ইহা চক্ষু-কর্ণ-হস্ত-পদ-মস্তিষ্কের নিখুঁত সংযোগ ও সঞ্চালনার অধ্যবসায়, চাপের মুখে স্নায়ুকে স্ববশে রাখিবার সাধনা। ভারতের এই জয় যুগান্তকারী, কারণ সে এই নিয়ন্ত্রণের সাধনায় সিদ্ধ হইয়াছে। সিরিজ়ের প্রথম টেস্টে ৩৬ রানে অল আউট হইয়া কলঙ্কভাগী হইয়াছিল যে দল, পরের ম্যাচেই তাহারা তুখোড় খেলিয়া জয়ে ফিরিয়াছে। তৃতীয় টেস্টে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখ হইতে ড্র ছিনাইয়া আনিয়াছে, শেষ টেস্টে শেষাবধি রাশ ধরিয়া রাখিয়া বীরোচিত জয়।

এই জয় ঐতিহাসিক, কারণ তা দেখাইয়া দিয়াছে, তাবৎ ক্রিকেটীয় পরিসংখ্যানের বাহিরেও টেস্ট ক্রিকেটে অবিনশ্বর ও অবিস্মরণীয় কিছু উপাদান রহিয়া যায়। করোনাকালীন বায়ো বাবল-এর বিস্তর বিধিনিষেধ, অধিনায়কের দেশে প্রত্যাবর্তন, চোট পাইয়া একের পর এক টেস্টে একাধিক খেলোয়াড়ের বিদায়, খেলা চলাকালীন জাতিবিদ্বেষী মন্তব্য, কিছুই ভারতীয় দলকে দমাইতে পারে নাই। পিতৃবিয়োগের ব্যক্তিগত শোক ভুলিয়া তরুণ ভারতীয় বোলার দ্বিগুণ উদ্যমে উইকেট লইতে ঝাঁপাইয়াছেন। নেট বোলার হিসাবে দলের সহিত সফররত স্পিনারকে শেষ টেস্টে মূল একাদশে নামিতে হইয়াছে, তিনিও সর্বস্ব উজাড় করিয়া দিয়াছেন। শেষ দুই টেস্টে চরম আহত অবস্থাতেও পাহাড়ের ন্যায় রক্ষণ লইয়া ব্যাটিং করিয়া গিয়াছেন তিন ভারতীয় ব্যাটসম্যান। শতরানের ফুলঝুরি বা দশ উইকেটের ঐশ্বর্য নাই, দলীয় কীর্তির উদ্‌যাপন আছে। কেহ চোট পাইয়া সরিয়া গেলে আনকোরা এক জনের দায়িত্ব লইবার দার্ঢ্য আছে। সর্বোপরি আছে এই বিশ্বাস, হতাশার অতল হইতে উঠিয়া আসিয়া উত্তুঙ্গ সাফল্যশৃঙ্গ স্পর্শ করা যায়। টেস্ট ক্রিকেটে দলের ধার-ভার বুঝা যায় তাহার রিজ়ার্ভ বেঞ্চ দেখিয়া। ভারতীয় টেস্ট দল এই সিরিজ়ে সেই শক্তিশালী রিজ়ার্ভ বেঞ্চকে আবিষ্কার করিল। এই আত্ম-আবিষ্কারও যুগান্তকারী।

India Cricket australia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy