ফাইল চিত্র।
বেনজির সাংবিধানিক সঙ্ঘাতের মুখে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের দুই সাংবিধানিক স্তম্ভ। কিন্তু প্রকাশ্য এবং বেশ বিরল পারস্পরিক সঙ্ঘাতে এখন তাঁরা। এমনিতেই সঙ্কটকাল এখন বাংলায়। দুই জনগোষ্ঠীর বিবাদে উত্তপ্ত বিস্তীর্ণ এলাকা। সরকারের এক ও একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত দ্রুত স্বাভাবিকতা ফেরানো। রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী, দু’জনেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে চান নিশ্চয়ই। কিন্তু একে অপরের সঙ্গে সঙ্ঘাতেও জড়ালেন সেই পথটাতে হাঁটতে গিয়েই।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যপাল তাঁকে অসম্মান করেছেন, রাজ্যপাল নিজের অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করেছেন।
রাজভবনের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালের এমন কোনও কথাই হয়নি, যাতে মুখ্যমন্ত্রী আহত হতে পারেন।
রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে সঙ্ঘাতের আবহ রাজ্যে বা দেশে এই প্রথম নয়। বাংলায় দীর্ঘ বাম শাসনকালে রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মতপার্থক্য একাধিক বার সামনে এসেছে। অধুনা বা সাম্প্রতিক অতীতে কখনও উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও রাজ্যে, কখনও দক্ষিণ ভারতে, কখনও খোদ নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের মধ্যে মতান্তর সামনে এসেছে। এই সব সঙ্ঘাত শুধু তিক্ততায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাজ্যপাল পদের প্রয়োজনীয়তা, ঔচিত্য, গুরুত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে তারা। পদটির অবলুপ্তির প্রস্তাবও উত্থাপিত হয়েছে কখনও কখনও। তেমন কোনও প্রস্তাব অবশ্য শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের অনুমোদন পায়নি, তেমন কোনও উদ্যোগও গৃহীত হয়নি। অতএব দেশের যে কোনও রাজ্যে রাজ্যপালই সাংবিধানিক প্রধান। রাজ্যপালের দফতরের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্ঘাতও কাম্য নয় সুতরাং।
কিন্তু সঙ্ঘাতটা সামনে এল। অত্যন্ত বিরল ভঙ্গিতেই সামনে এল। মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে প্রকাশ্যে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন, অসম্মানজনক এবং শাসানিমূলক কথা বলার অভিযোগ তুললেন, তার নজির এ রাজ্যে নেই। অভিযোগের মাত্রা এবং গুরুত্বই বলে দিচ্ছে, রাজ্যপালের দফতরের সঙ্গে সরকার প্রধানের সঙ্ঘাত কতটা তীব্র আজ।
রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথোপকথনের গোপনীয়তা বজায় রইল না কেন, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ঠিকই। কিন্তু সে প্রশ্নের চেয়েও গুরুতর হল মুখ্যমন্ত্রীর তোলা অভিযোগ। তিক্ততা এই পর্যায়ে পৌঁছনো উচিত হয়নি একেবারেই। সঙ্কটকালে হাতে হাত মিলিয়ে প্রশাসনিক সাফল্য সুনিশ্চিত করাই রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি পক্ষের কাজ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ঠিক বিপ্রতীপ ছবি ফুটে উঠল। মুখ্যমন্ত্রীকে এত গুরুতর অভিযোগ তুলতে হল কেন, সে প্রশ্নের ফয়সলা হওয়া জরুরি। তবে এ-ও বলি, চাপানউতোর নয়, সর্বাগ্রে সঙ্কটমুক্তি জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy