Advertisement
E-Paper

হস্তক্ষেপ হয়তো জরুরি, কিন্তু প্রশাসনিক অতিসক্রিয়তা কাম্য নয়

প্রথম প্রশ্ন হল, সরকারের হাতে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর এ ভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার প্রয়োজন পড়বে কেন? সরকারি বা সরকার পোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পঠন-পাঠনের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ যদি না থাকে, বিপুল সংখ্যক শিক্ষক পদ যদি শূন্য না থাকে, পরিকাঠামোগত অপ্রতুলতা যদি না থাকে, তা হলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীলতা এমনিতেই কমে যাওয়ার কথা।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ০৪:৩৩
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

স্বাস্থ্যের পর নজর পড়ল শিক্ষা ক্ষেত্রে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ে নানান অভিযোগ, তাই কর্তাব্যক্তিদের তলব করে সে নিয়ে বিশদে আলোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী, অবধারিত সতর্কবার্তাও দিলেন। বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রকেও এমনই এক বৈঠকে কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বারের বৈঠক যে হেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষা জগতকে নিয়ে, সে হেতু মুখ্যমন্ত্রীর সুর ছিল ঈষৎ নরম, স্বর কিয়ৎ সংযত। কিন্তু চড়া ‘ডোনেশন’-এর রেওয়াজ চলতে দেওয়া হবে না, বেশ স্পষ্ট করেই জানালেন সে কথা। ফি বা ডোনেশনের নামে যথেচ্ছাচার চলবে না, সোজাসাপটা বার্তা দিলেন।

এ পর্যন্ত সব ঠিকই আছে। জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে রাজ্যের মুখ্য জনপ্রতিনিধি এ ধরনের বিষয় নিয়ে সক্রিয় হবেন, তাতে কোনও অন্যায় নেই বলেই প্রতিভাত হচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি স্বাস্থ্য-শিক্ষা-শিল্প মহল থেকে কতগুলো প্রশ্নও উঠে আসছে।

প্রথম প্রশ্ন হল, সরকারের হাতে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর এ ভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার প্রয়োজন পড়বে কেন? সরকারি বা সরকার পোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পঠন-পাঠনের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ যদি না থাকে, বিপুল সংখ্যক শিক্ষক পদ যদি শূন্য না থাকে, পরিকাঠামোগত অপ্রতুলতা যদি না থাকে, তা হলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীলতা এমনিতেই কমে যাওয়ার কথা। সরকারি শিক্ষা পরিকাঠামোকে সেই পর্যায়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কেন হবে না?

দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা কতটা সমীচীন? এ কথা ঠিক যে জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলিতে সরকারি নজরদারি অনেক সময় জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপের এই চেষ্টা কত দূর পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য? সীমাটা ঠিক কোথায়?

মনে রাখতে হবে, এ রাজ্যে বেসরকারি উদ্যোগ বা বিনিয়োগের ছবিটা দীর্ঘ দিন ধরেই বেশ হতাশাজনক। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নির্মাণের মতো কয়েকটি মাত্র ক্ষেত্রে এখনও বেসরকারি পুঁজির উপস্থিতি এবং প্রবাহটা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পঠন-পাঠনের মানও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশ প্রশংসিত। এ কথা ঠিক যে, কোনও অজুহাতেই শিক্ষাকে ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হতে দেওয়া চলে না, শিক্ষা দেওয়ার নামে পড়ুয়ার পরিবারের উপর আর্থিক জুলুম চাপিয়ে দেওয়া চলে না। কিন্তু প্রশাসনিক অতিসক্রিয়তাও এর সমাধানের পথ হতে পারে না। অর্থাৎ, নজরদারি চলতে পারে, কিন্তু প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ নয়। সঙ্ঘাতের পথে যেতে হতে পারে, কিন্তু ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, সংঘর্ষ ঘটলে চলবে না। মুখ্যমন্ত্রী হিতার্থেই এই পদক্ষেপ করেছেন, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছি না। কিন্তু ভারসাম্য হারালে যে হিতে বিপরীত হতে পারে, বহু পড়ুয়ার বর্তমান এবং বহু তরুণের ভবিষ্যৎ বিঘ্নিত হতে পারে, সে কথাও মাথায় রাখতে হবে।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কর্তাব্যক্তিরা যে সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা হস্তক্ষেপ চাইছেন না, সে কথা বলাই বাহুল্য। এই হস্তক্ষেপ কী ভাবে এড়াবেন তাঁরা? মুখ্যমন্ত্রীই সে পথ বাতলে দিয়েছেন— আত্মনিয়ন্ত্রণ। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এ বার থেকে আর্থিক দেনা-পাওনার বিষয়ে যাতে স্ব-উদ্যোগেই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, মুখ্যমন্ত্রী তার জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ সংস্থা গড়ে দিয়েছেন। সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ এড়িয়ে যেতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষা ক্ষেত্রের সামনে এই আত্মনিয়ন্ত্রণই কিন্তু এখন শেষ সুযোগ। কারণ সারকথাটা মুখ্যমন্ত্রী শুরুতেই বলে দিয়েছেন— শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফি বা ডোনেশনের নামে আর্থিক যথেচ্ছাচার চলতে পারে না।

Anjan Bandyopadhyay Newsletter অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Mamata Banerjee মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় Educational System
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy