Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
নোবেলজয়ী মার্কিন অধ্যাপক হ্যারল্ড ইলিয়ট ভারমাস-এর সাক্ষাৎকার

পথ বদলের সুযোগ থাকা ভাল

সাক্ষাৎকার: অগ্নি রায়, ছবি সৌজন্য: মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টার মনে রাখতে হবে ‘ক্যান্সার’ বলতে কিন্তু বিচিত্র ও জটিল পরিস্থিতির সমাহারকে বোঝায়। এর বহুমুখী বিস্তার, যার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে অনেকটাই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি আমরা।

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

প্রশ্ন: আপনার লেখা দি আর্ট অব পলিটিক্স অ্যান্ড সায়েন্স গ্রন্থটি জুড়ে শৈশবের কথা, ব্যক্তিগত স্মৃতির উদ্ভাস। কী ভাবে নস্টালজিয়া আপনার চিন্তাভাবনা ও বিজ্ঞানচেতনাকে প্রভাবিত করেছে?

হ্যারল্ড ইলিয়ট ভারমাস: নস্টালজিয়ার কোনও অব্যর্থ ভূমিকা আমার বৈজ্ঞানিক কাজকর্মে নেই। কিন্তু স্মৃতির ভূমিকা রয়েছে। বিজ্ঞানীকে মনে রাখতেই হয় পর্যবেক্ষণের বিস্তীর্ণ দিগন্তকে। নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করার সময় পর্যবেক্ষণগুলি স্মৃতি থেকে তুলে আনতে হয়। মনোগ্রাহী পরিণতি বা অর্থপূর্ণ ব্যাখ্যার জন্য তা জরুরি।

প্র: ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জেতার প্রশ্নে আপনি কতটা আশাবাদী? বিশ বছর আগে যা ছিল তার থেকে এখন এই অসুখের মোকাবিলা করাটা কি অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে?

উ: বহু বই লেখা হয়েছে এই প্রশ্নগুলি নিয়ে। তার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। তবে কিছু সত্যকে সামনে তুলে আনা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে ‘ক্যান্সার’ বলতে কিন্তু বিচিত্র ও জটিল পরিস্থিতির সমাহারকে বোঝায়। এর বহুমুখী বিস্তার, যার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে অনেকটাই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি আমরা। তবে এটাও ঠিক যে অন্য অনেক ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই সাফল্য এখনও আসেনি। তা ছাড়া যেগুলিতে কাজ হতে পারে সে রকম অনেক অস্ত্রই তো আমরা এখনও ব্যবহার করে উঠতে পারিনি। যেমন, ধূমপান একদম বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা, কিছু বিশেষ ভ্যাকসিনেশান আবশ্যিক করা, কোলন ক্যান্সারকে গোড়াতেই চিহ্নিত করা। অগ্রগতি অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক কিছু আবিষ্কার বাকি।

প্র: নেটে আপনার একটি বক্তৃতায় পড়লাম আপনি ব্যক্তি-কল্পনা ও উদ্ভাবন-শক্তির জয়গান করেছেন আমেরিকার ওপেন সোসাইটি নির্মাণের প্রশ্নে। ভারতে কিন্তু এখনও বাবা-মায়েরা সন্তানকে তাঁদের ঠিক করে নেওয়া রাস্তায় এগোনোর জন্য চাপ দেন। স্বাধীনতার পর উদ্ভাবনের প্রশ্নে দেশের সামগ্রিক খামতি থেকে যাওয়ার একটা কারণ বোধহয় এটা। কিছু পরামর্শ দেবেন?

উ: আমার নিজের আমেরিকান সিস্টেমের বাইরে অন্য কোনও দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরামর্শ দিতে আমি একটু দ্বিধাগ্রস্ত থাকি। তবে সাধারণ ভাবে মনে হয় যে, টিন এজ-এর পরেও নিজের কেরিয়ার বদলে নেওয়ার সুযোগ থাকলে ভাল। মানুষের আগ্রহ বদলায়, ফলে নতুন তৈরি হওয়া আগ্রহের ক্ষেত্রটিতে কাজের সুযোগ না পেলে শেষ পর্যন্ত ওই পরিবর্তিত মননের ফলে যে লাভ সমাজ পেতে পারত, তা থেকে বঞ্চিত হয়।

প্র: প্রশাসক হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে আপনি বৈজ্ঞানিক প্রকরণে এবং নতুন উদ্ভাবনে বড় পরিবর্তন এনেছেন। রাজনৈতিক নেতা এবং আমলাদের সামলেছেন কীভাবে?

উ: এটা বলার জন্য একটা পুরোদস্তুর বই লেখা উচিত! আমার মেমোয়ার্স-এ এই বিষয়ে বহু কথা বলাও হয়েছে। একটা বিষয় গোড়াতেই খুব স্পষ্ট করে বুঝে নিলে সুবিধা হয়। কোনও দেশের বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সেখানকার সরকারের বিরাট প্রভাব। সরকারে যাঁরা কাজ করেন (নির্বাচিত অথবা নির্বাচিত নন) তাঁদের অধিকাংশই বুদ্ধিমান মানুষ। সমাজের উন্নতিই চান। ফলে তাঁদের সম্মান দিয়ে কথা বলুন, স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা দিন, কী চাইছেন সেটা কারণ সহ জোরের সঙ্গে জানিয়ে দিন।

প্র: বিজ্ঞান ও সঙ্গীত, এই যুগলবন্দির জন্য আপনি বিখ্যাত। এরা কি একটি অপরের পরিপূরক?

উ: এটা একটা ভুল ধারণা। আমার সঙ্গীতের দৌড় খুব বেশি নয়। স্যাক্সোফোনের ছাত্র হিসাবে সাদামাটা যে অনুষ্ঠানগুলি করি তা থেকেই এটি বোঝা যায়। তবে আমার বড় ছেলে জ্যাকব প্রশিক্ষিত জ্যাজ-ট্রাম্পেট বাদক। নিজে সুরও দেয়। ‘জিনস অ্যান্ড জ্যাজ’ নামের একটি অনুষ্ঠান আমাদের রয়েছে যা দেখে আমার প্রতিভা সম্পর্কে দর্শকেরা আরও গুলিয়ে ফেলেন! সেখানে আমি ক্যান্সার গবেষণার স্নাইড দেখিয়ে বলতে থাকি, পাশাপাশি আমার ছেলের গ্রুপ বাজাতে থাকে।

প্র: ৫০ বছর আগে কলকাতা সফর করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আপনার।

উ: সাহা মেমোরিয়াল লেকচারে এটা বিশদে বলব বলে ঠিক করে রেখেছি। ছেষট্টি সালে যখন যাই তখন উত্তাল রাজনৈতিক আলোড়ন চলছে কলকাতায়। আমার মনে আছে রাগী রাগী ছেলেগুলো রাস্তায় নেমেছে। দমদম বিমানবন্দরে সশস্ত্র সেনা ঘুরছে। বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সত্যজিৎ রায় ছিলেন এক অসামান্য অতিথিপরায়ণ মানুষ। তিনি বাড়িতে ডেকেছিলেন আমাদের অনেককে। তাঁর ছবি নিয়ে আমাদের সঙ্গে অনেক কথাও বলেছিলেন। আমরা সবাই ছিলাম ওঁর ভক্ত। বিশ্ব জুড়ে এত নাম কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের মধ্যে বিনয়ের ঘাটতি দেখিনি কখনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE