ত্রাণ বিলি ঘিরে গঙ্গারামপুর পুরসভায় হুলস্থুল।
রাজনীতিকরা যদি ঘোলা জলে স্বস্তি বোধ করেন, তাহলে ঘোলা জলেই থাকুন। কিন্তু দয়া করে নাগরিককে ওই ঘোলা জলে নাকানিচোবানি খাওয়াবেন না। প্রবল বর্ষণে বানভাসি দশা এক শহরের। কিন্তু রাজনীতির টানাপড়েন তালা লাগিয়ে দিল ত্রাণের ঘরে। আর সেই ন্যক্কারজনক সক্রিয় ভূমিকা নিলেন জেলাশাসক। আর কত নীচতা দেখতে হবে আমাদের?
অল্প সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে গঙ্গারামপুর পুরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়েছিল কয়েকদিন আগেই। সামান্য বিরতির পরে ফের প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে গঙ্গারামপুর-সহ গোটা দক্ষিণ দিনাজপুরে। ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ হেন অবস্থায় ত্রাণ সামগ্রী বণ্টন শুরু করতে চেয়েছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান। কিন্তু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যেহেতু অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে, সেহেতু তিনি ত্রাণ সামগ্রীও বণ্টন করতে পারবেন না বলে হইচই জুড়ে দিলেন তাঁর বিরোধীরা। জেলাশাসক আচমকা সক্রিয় হয়ে উঠলেন কোনও এক অদৃশ্য ‘কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে। তালা লাগিয়ে দিলেন ত্রাণ সামগ্রীর ঘরে। অভিযোগ অন্তত তেমনই।
এই ঘটনা কী ভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব? রাজনীতি, সরকার, প্রশাসন— এই সব কিছুরই উদ্দেশ্য তো নাগরিকের সেবা। কী এমন ঘটছে যে, সেই মূল উদ্দেশ্যটাই অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে? রাজনীতিকরা এবং প্রসাশকরা জনসেবাটা বাদ দিয়ে বাকি সব কিছু করছেন! এইখানে নেমে গেল রাজনীতি! রাজনীতির জল এত ঘোলা হয়ে গেল যে, তাতে নাকাল হতে হচ্ছে দুর্গত হয়ে পড়া নাগরিককেও! প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় দশা সাধারণ নাগরিকের, পুরসভার গুদামে ত্রাণ সামগ্রীও মজুত রয়েছে কিন্তু রাজনীতির টানাপড়েনে সে গুদামঘরে তালা পড়ে গেল!
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: গঙ্গারামপুর পুরসভায় হুলস্থুল, ত্রাণের ঘরে তালা, আধিকারিককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যদি অনাস্থা আনা হয়ে থাকে, তাহলেও যত ক্ষণ না সেই অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হচ্ছে, তত ক্ষণ চেয়ারম্যান পদে থাকা ব্যক্তি কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন— নিয়ম তো এমনই। পরিস্থিতি যদি আপৎকালীন হয়ে ওঠে, তাহলে তো অন্য সব জটিলতা ভুলে গিয়ে আগে সঙ্কটের নিরসনে জোর দেওয়া উচিত। তার বদলে সাধারণ নাগরিকের সঙ্কট আরও বাড়িয়ে তুললেন রাজনীতিকরা? ধরে নিলাম রাজনীতিকরা কাণ্ডজ্ঞানহীন। প্রশাসনিক কর্তারা কী করছিল? চেয়ারম্যান ত্রাণ বিলি করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যদি সংশয় থেকে থাকে, তাহলে জেলাশাসক নিজে ত্রাণ বণ্টন করতে পারতেন। তা না করে ত্রাণের ঘরে তালা লাগানোর নির্দেশ দিলেন! বিস্ময়ের আর অবধি থাকে না। কোনও অদৃশ্য রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর নিজে ক্ষমতা জাহির করার তাগিদে ত্রাণ বিলি বন্ধের নির্দেশ দিতেই পারে, ক্ষমতা জাহির করার তাগিদে ত্রাণ বিলির দিনক্ষণ স্থির করে দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করতেই পারে। কিন্তু কর্তব্য এবং দায়দায়িত্বের ন্যূনতম বোধটাকেও ছুড়ে ফেলে দিয়ে একজন জেলাশাসক সেই কণ্ঠস্বরকে সন্তুষ্ট করাতেই আসল কর্তব্য হিসেবে ধরে নেবেন কেন? রাজনীতি এবং প্রশাসনকে আর নীচে নামাবেন না। পরিস্থিতিটাকে আর লজ্জাজনক করে তুলবেন না। নাগরিকের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে কিন্তু অনেক কিছুই ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy