Advertisement
E-Paper

রাজনীতি এতটাই অসারগর্ভ? প্রশ্ন উঠে যাবে সাধারণ্যে

রাজনীতিকদের এ কথা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দলগুলি সাধারণ জনতার ভাল লাগা-মন্দ লাগা বা সাধারণ মানুষের ভাবাবেগের মধ্যেই বেঁচে থাকে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৫৬
গ্রাফিক্স:শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক্স:শৌভিক দেবনাথ।

কিছু দিন ধরে প্রায় নিথর-নিস্তরঙ্গ হয়ে থাকা পুকুরটায় ঢিল পড়ল যেন একটা। বঙ্গের রাজনীতিতে আবার একটু ঢেউ উঠল যেন। বিস্তর গুঞ্জন, কানাঘুসো, জল্পনায় যবনিকা ফেলে অবশেষে বিজেপি-তেই সামিল হলেন তৃণমূল-ত্যাগী মুকুল রায়। গোটা ঘটনাপ্রবাহের দিকে উৎসুক নজর রাখছিলেন যাঁরা, সেই সাধারণ জনতা সাগ্রহে প্রত্যক্ষ করলেন এক রাজনীতিকের সবুজ থেকে গেরুয়া হয়ে ওঠার পর্ব। এই দলবদলের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী, তাও সকলে সোৎসাহে শুনলেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে যে, খুব গুরুতর এক রাজনৈতিক ঘটনাকে যথোপযুক্ত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সব কিছু দেখে-শুনে আবডালে গিয়ে যে কিয়ৎ হাসাহাসিই করলেন জনগণ, তা হয়তো রাজনীতিকদের নজরে নাও পড়তে পারে।

মুকুল রায় কোন দলে থাকবেন, তা মুকুল রায়ই স্থির করবেন নিশ্চয়ই। বিজেপি-তে কাকে ঢুকতে দেওয়া হবে, কাকে দেওয়া হবে না, সে সিদ্ধান্তও অবশ্যই বিজেপি নেতৃত্বই নেবেন। কিন্তু রাজনীতিকদের এ কথা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দলগুলি সাধারণ জনতার ভাল লাগা-মন্দ লাগা বা সাধারণ মানুষের ভাবাবেগের মধ্যেই বেঁচে থাকে। তাই এমন কোনও দৃশ্যপটের জন্ম দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলির উচিত নয়, যা সাধারণের ভাবাবেগে বা বিশ্বাসে-আস্থায়-ভরসায় ধাক্কা দিয়ে দিতে পারে।

আরও পড়ুন

বিজেপি সাম্প্রদায়িক নয়, ধর্মনিরপেক্ষ দল: মুকুল

সারদা কাণ্ড, নারদ কাণ্ড বা অন্য নানা কাণ্ডের কথা তুলে ধরে তৃণমূলকে এবং তৃণমূলের প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় নেতা-নেত্রীকে বার বার আক্রমণ করেছে বিজেপি। সেই আক্রমণ এখনও চলছে। ভবিষ্যতেও চলবে। বিজেপির নিশানায় থাকা তৃণমূল নেতাদের সেই তালিকায় কিছু দিন আগে পর্যন্তও অনেকটা জায়গা জুড়ে ছিল মুকুল রায়ের নাম। আজ হঠাৎ মুকুল রায়ের পরিচয় এবং ভাবমূর্তি বদলে গিয়েছে বিজেপির কাছে। আজ মুকুল শুধুই ‘সুদক্ষ সংগঠক’ এবং ‘একনিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মী’।

তৃণমূলের ছবিটাও খুব অন্য রকম নয়। দলীয় কাঠামোয় দীর্ঘ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক পরের স্থানটিই নির্দিষ্ট ছিল মুকুল রায়ের জন্য। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দল আলো করে বিরাজ করতেন মুকুল রায়। তাঁর ‘সাংগঠনিক সক্ষমতার’ ভূয়সী প্রশংসা হত গোটা দলে। ‘বিমুগ্ধ বিস্ময়ে’ এবং ‘শ্রদ্ধাবনত ভঙ্গিতে’ মুকুল রায়ের দিকে চেয়ে থাকতেন তৃণমূলের নানা স্তরের নেতা-কর্মী। যে মুহূর্ত থেকে তাঁর বিজেপি-ঘনিষ্ঠতা জল্পনায় এসেছে, সেই মুহূর্ত থেকেই আচমকা যেন বদলে গিয়েছে মুকুলের সব মূল্যায়ন। মুকুল রায়ের কোনও সক্ষমতাই যেন আজ নজরে পড়ে না। তৃণমূলের কাছে তিনি আজ শুধু অপদার্থতা, অসততা, বিশ্বাসঘাতকতার পরাকাষ্ঠা।

মুকুল রায় নিজেও কিন্তু এই অল্প কিছু দিন আগে পর্যন্ত নিজেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সৈনিক বলে দাবি করে এক বুক গর্ব অনুভব করছিলেন। তৃণমূলের কোনও বিকল্প বা প্রতিপক্ষ বাংলার রাজনীতিতে রয়েছে বলে তিনি মনে করছিলেন না। অভূতপূর্ব উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছিলেন রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে। কিন্তু খুব দ্রুত মন বদলে গিয়েছে তাঁর। বাংলার মানুষ তৃণমূলের শাসনে হাঁফিয়ে উঠেছে বলে মুকুল রায় এখন ‘বিশ্বাস’ করছেন।

আবার বলি, দল ছাড়া বা দল ধরার অধিকার সাংবিধানিক ভাবেই পেয়েছেন মুকুল রায়রা। দলকেও মুকুল রায়দের ছাড়া বা ধরার অধিকার সংবিধানই দিয়েছে। সেই অধিকার প্রয়োজন মতো প্রয়োগ করায় বাধা নেই।

কিন্তু দলত্যাগ বা শিবির বদল সংক্রান্ত যুক্তিগুলি আর একটু সারগর্ভ এবং বিশ্বাসযোগ্য হওয়া দরকার। না হলে সাধারণ জনতার বিশ্বাসের ভিত টলে যায়।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Mukul Roy BJP মুকুল রায় বিজেপি TMC Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy