Advertisement
১১ মে ২০২৪

রক্ষাকবচ রয়েছে তো, নাকি শুধু বাগাড়ম্বরেই রবিনহুড?

যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও রোজ প্রশ্ন উঠছে, রণকৌশলটা আদৌ সঠিক তো? অভিজ্ঞ সমর বিশারদরা, পোড় খাওয়া যোদ্ধারা একে একে মুখ খুলছেন। কালো টাকার সাম্রাজ্যে আঘাত হানার চেষ্টা হয়েছে যে কৌশলে, তার ভ্রান্তি এবং তা থেকে আসন্ন বিপদ নিয়ে তাঁরা একে একে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও রোজ প্রশ্ন উঠছে, রণকৌশলটা আদৌ সঠিক তো? অভিজ্ঞ সমর বিশারদরা, পোড় খাওয়া যোদ্ধারা একে একে মুখ খুলছেন। কালো টাকার সাম্রাজ্যে আঘাত হানার চেষ্টা হয়েছে যে কৌশলে, তার ভ্রান্তি এবং তা থেকে আসন্ন বিপদ নিয়ে তাঁরা একে একে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

অমর্ত্য সেন থেকে কৌশিক বসু, মনমোহন সিংহ থেকে রঘুরাম রাজন, মীরা সান্যাল থেকে প্রভাত পট্টনায়ক— একের পর এক বিশ্বখ্যাত ও লব্ধপ্রতিষ্ঠ অর্থনীতিবিদের কণ্ঠে আশঙ্কার স্বর। কালো টাকার কারবারিদের এ পথে জব্দ করা যায় না, ভারতীয় অর্থনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করার উপযুক্ত পথ এটি একেবারেই নয়, যে পদক্ষেপ ভারতের সরকার নিয়েছে, তাতে বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে চলেছে ভারতীয় অর্থনীতি, বিশেষত মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত— অর্থনীতির মহামহিম কণ্ঠস্বরগুলিতে আসন্ন বিপদের এই রকমই আভাস এখন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যে পদক্ষেপ আপনি করেছেন, তা এক বিরাট অর্থনৈতিক পদক্ষেপ। এত বড় সিদ্ধান্তটা নেওয়ার আগে উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ নিয়েছিলেন তো? যদি নিয়েই থাকেন, তা হলে এত সংশয়ের অবকাশ কেন? এই সব ক’টি কণ্ঠস্বর এবং সব ক’টি সংশয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত— এমনটা নিশ্চয়ই বলবেন না। এঁদের মধ্যে কারও সঙ্গে হয়তো রাজনীতির নিবিড় যোগ, কিন্তু অধিকাংশই সে বৃত্তের বাইরে। সর্বোপরি, রাজনীতির যোগ থাক বা না থাক, অর্থনীতির এই দিগ্‌গজদের কেউই কিন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় নিয়ন্ত্রিত নন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দ্বারা প্রেরিতও নন। তা সত্ত্বেও বার বার আশঙ্কা আর সংশয়ের বাণী উচ্চারিত হচ্ছে যখন, তখন সে সবের যাবতীয় সারবত্তাকে কী ভাবে অস্বীকার করা যায়?

দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের উপরেই সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসতে চলেছে বলে আশঙ্কা ধ্বনিত হয়েছে। সাধারণ নাগরিকের জীবনে সমস্যা যতটা জট পাকিয়েছে এ যাবৎ, তার চেয়েও অনেক বড় বিপর্যয় অপেক্ষায়, এমনও শোনা যাচ্ছে। যে ধরনের বিপর্যয় আর জটিলতার আশঙ্কা ধ্বনিত হচ্ছে, সে সব যে আসতে পারে, তা সরকারের নীতি নির্ধারকদের মাথায় ছিল তো? যুদ্ধে নামার আগে সাধারণ নাগরিককে সম্ভাব্য সব বিপদ থেকে আগলে রাখার মতো রক্ষাকবচ সঙ্গে নেওয়া হয়েছে তো? এই প্রশ্নচিহ্নগুলোর নিরসনের সময় কিন্তু এসে গিয়েছে।

বাগাড়ম্বর, জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেমের জিগির, কালো টাকার বাপান্ত, ধনীর ধন ছিনিয়ে নেওয়ার হুঙ্কার, দরিদ্রের সহায় হয়ে ওঠার আশ্বাস— সবই রয়েছে সরকারের কণ্ঠস্বরে। কিন্তু অর্থনীতির সুগভীর পরিসর থেকে যে প্রশ্নগুলো উঠে আসছে, তার কোনও যুক্তিযুক্ত উত্তর নেই, উত্তর দেওয়ার চেষ্টা নেই, সংশয় খণ্ডনের তাগিদও নেই।

বাগাড়ম্বরে রবিনহুড সাজা যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তাতে অর্থনীতি স্বস্তি পাচ্ছে না। সিদ্ধান্ত যে শুধু রাজনৈতিক স্বার্থ মাথায় রেখে গৃহীত হয়নি, জাতীয় স্বার্থও যে সুরক্ষিত, এ বার তা যুক্তি দিয়ে বোঝানোর সময় এসে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anjan Bandyopadhyay Newsletter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE