Advertisement
০৪ অক্টোবর ২০২৩
National news

অক্ষয় ছিল তাঁর গণভিত্তি, তাই অক্ষয় রইল মহিমাও

জনসমর্থনই শেষ কথা গণতন্ত্রে, জনগণই ঈশ্বর, গণভিত্তিই বিচারের চূড়ান্ত মাপকাঠি— আরও এক বার প্রমাণিত হল ভারতীয় রাজনীতির সুপ্রশস্ত মঞ্চে।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর ভক্তেরা।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর ভক্তেরা।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২৯
Share: Save:

জনসমর্থনই শেষ কথা গণতন্ত্রে, জনগণই ঈশ্বর, গণভিত্তিই বিচারের চূড়ান্ত মাপকাঠি— আরও এক বার প্রমাণিত হল ভারতীয় রাজনীতির সুপ্রশস্ত মঞ্চে। জয়রাম জয়ললিতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সমগ্র ভারতে প্রবহমান বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারা দাক্ষিণাত্যমুখী হল। আক্ষরিক অর্থেই জনসমুদ্রে ভেসে অন্তিম প্রস্থান হল জয়ললিতার। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী সাক্ষী থাকলেন সে মহিমান্বিত শেষ যাত্রার। শ্রদ্ধাবনত ভঙ্গিতে শেষ যাত্রার সাক্ষী রইল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও।

রাজনৈতিক জীবনে বিতর্ক কিন্তু কম ছিল না জয়ললিতাকে ঘিরে। বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত হয়েছেন। নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে। আবার বিপুল জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে বার বার ফিরেও এসেছেন। অতএব জয়ললিতা মহিমান্বিতই থেকেছেন।

তামিলনাড়ুতেই সীমাবদ্ধ ছিল রাজনৈতিক ভিত্তি। কিন্তু নিজের রাজ্যে বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে একাধিক বার উপচে পড়া জনসমর্থন পাওয়ার সুবাদে জাতীয় রাজনীতিতে নানান সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। সে সব সময়েও এই তামিল নেত্রী যে শুধু সুনামই কুড়িয়েছেন, তেমন কিন্তু নয়। কখনও কংগ্রেসের হাত ধরেছেন, কখনও বিজেপির জোটসঙ্গী হয়েছেন, কখনও তৃতীয় বিকল্পে সামিল হয়েছেন, কখনও আবার তাঁর আনা অনাস্থা প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকারের পতন ঘটেছে। স্বাভাবিক ভাবেই বৈরিতা কুড়োতে হয়েছে বিস্তর, রাজনৈতিক সম্পর্কে ভাঙা-গড়ার সাক্ষীও হতে হয়েছে বহু বার। কিন্তু সব চড়াই-উতরাইয়ের শেষে জনভিত্তিটা ঠিক ধরে রেখেছেন। অতএব জয়ললিতা মহিমান্বিতই থেকেছেন।

রাজনীতিতে এই মহিমান্বিত অবস্থানটা ধরে রাখাই যে শেষ কথা, প্রয়াণেও জয়ললিতা তার প্রমাণ রেখে গেলেন। তামিল রাজনীতিতে তাঁর ঘোর প্রতিপক্ষ যাঁরা, তাঁরা প্রশংসা বর্ষণ করলেন। জাতীয় রাজনীতিতে পরস্পরের প্রবল প্রতিপক্ষ দলগুলির নেতৃত্বও জয়ললিতার জন্য একই বিন্দুতে এসে মিললেন। সর্বোপরি এঁদের সকলকে জয়ললিতা যেন দেখিয়ে গেলেন, কী বিপুল এক সমাগম বিলাপে বিহ্বল তাঁর শোকে।

জয়ললিতা আসলে বুঝিয়ে গেলেন, রাজনৈতিক সড়কের এক পাশে ক্লেদ আর কালিমা, অন্য পাশে সুনাম আর ঔজ্বল্যের অস্তিত্ব চিরন্তন। কিন্তু ইতি আর নেতির সে হিসেবের অনেক ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক মহিমার এক অন্যতর স্তরে পৌঁছে যাওয়ার নামই রাজনৈতিক সাফল্য। গণতন্ত্রে সে সাফল্য বা সে গরিমা শুধুমাত্র অক্ষয় গণভিত্তির জোরেই অর্জন করা যায়। যে পথেই হোক, সে জনভিত্তি গড়তে পেরেছিলেন জয়রাম জয়ললিতা। তাই সফল রাজনীতিকের শিরোপা নিয়েই অন্তিম প্রস্থান হল তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE