Advertisement
০৪ মে ২০২৪

দুর্নিয়তি

ঘটনাটি কেন ঘটিল, সেই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য কোনও ধন্দ নাই।

মঙ্গলবার দন্তেওয়াড়ায় হামলা চালায় মাওবাদীরা। ছবি:পিটিআই।

মঙ্গলবার দন্তেওয়াড়ায় হামলা চালায় মাওবাদীরা। ছবি:পিটিআই।

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০৬
Share: Save:

মাওবাদীরা আরও এক বার প্রমাণ করিল, সভ্য সমাজে তাহাদের ঠাঁই হইতে পারে না। ২০১৩ সালের সুকমার স্মৃতি ফিরাইয়া আনিল মঙ্গলবারের দন্তেওয়াড়া। এই দফায় মাওবাদী আক্রমণের শিকার বিজেপি বিধায়ক-সহ চার জন। এই আক্রমণের কঠোর নিন্দা করা প্রয়োজন। স্পষ্ট বলা প্রয়োজন, বঞ্চিত মানুষের দোহাই পাড়িয়া এই হত্যার রাজনীতি কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নহে, এবং তাহাকে দমন করিবার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে প্রয়োজনে কঠোর হইতে হইবে। তবে, এক্ষণে স্মরণ করাইয়া দেওয়া বিধেয়, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার সহিত জনজীবনে রাষ্ট্রীয় হিংস্রতা আমদানি করিবার মধ্যে ফারাক আছে। মাওবাদী দমনের অজুহাতে এত দিন যে রাষ্ট্রীয় হিংস্রতা ভারত প্রত্যক্ষ করিয়াছে, তাহাও গণতন্ত্রের পক্ষে সমান লজ্জার। বস্তুত, আরও বেশি লজ্জার, কারণ গণতন্ত্রের প্রতি মাওবাদীদের দায়বদ্ধতা না থাকিলেও রাষ্ট্রের আছে। অন্য একটি আশঙ্কাও থাকিয়া যায়। পুলওয়ামা-বালাকোট যেমন ভোটের ময়দানে ব্যবহৃত হইতেছে, আশঙ্কা হয়, দন্তেওয়াড়ার ঘটনাক্রমও ব্যতিক্রম হইবে না— উদারপন্থায় বিশ্বাসী, রাষ্ট্রীয় পেশিশক্তির আস্ফালনে আশঙ্কিত, অর্থাৎ এক কথায় ‘আরবান নকশাল’-দের বিরুদ্ধে খাড়া করা ধারাবাহিক রাজনৈতিক ভাষ্যে এই পর্বটি যুক্ত হইবে। তাহাতে রাজনীতির সুবিধা হইবে বিলক্ষণ, কিন্তু তাহাতে যেমন এই প্রশ্নের উত্তর মিলিবে না যে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তারক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের কৃতিত্ব বিষয়ক গগনবিদারী সব ভাষণের পরও এই আক্রমণ সম্ভব হয় কী ভাবে, তেমনই সমস্যার কোনও সমাধানসূত্রও খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।

ঘটনাটি কেন ঘটিল, সেই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য কোনও ধন্দ নাই। আজ বস্তারে নির্বাচন। মাওবাদীদের উদ্দেশ্য অতি স্পষ্ট— তাহারা প্রবল ভীতির সঞ্চার করিয়া নির্বাচনী প্রক্রিয়াটিকে বানচাল করিয়া দিতে চাহে। সারা দিন জনশূন্য থাকিবার পর সন্ধ্যায় ভোটকেন্দ্র বন্ধ হইলে মাওবাদীরা গণতন্ত্রের প্রতি ব্যঙ্গের হাসি ছুড়িয়া দিবে। তাহারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নহে, ফলে নির্বাচন বানচাল করাই তাহাদের নিকট সাফল্য। অন্তত রাজনৈতিক ভাষ্য হিসাবে তাহারা যে প্রান্তিক মানুষদের কথা বলিয়া থাকে, দেশের শাসনপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের বৃহত্তম সুযোগটি হইতে তাঁহাদের বঞ্চিত করিয়া কী ভাবে তাঁহাদের মঙ্গলসাধন সম্ভব, এই প্রশ্নের উত্তর সশস্ত্র মাওবাদীদের নিকট আশা করা অর্থহীন। ইহাকে ভারতের দুর্নিয়তি বলিয়াই মানিয়া লইতে হইবে যে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক উৎসবটি এই সন্ত্রাসের বাস্তবকে সঙ্গে লইয়াই চলিবে। আশঙ্কা হয়, সন্ত্রাস ফুরায় নাই— আগামী দেড় মাসে হয়তো আরও আক্রমণের সাক্ষী থাকিতে হইবে। তাহার জন্যই প্রশাসনিক সক্রিয়তা প্রয়োজন। আরও বেশি জরুরি মাওবাদীদের রাজনৈতিক ভাষ্য হইতে তাহাদের হিংস্রতাকে পৃথক করা। হিংসা রাজনীতির অস্ত্র নহে, তাহা নিতান্তই আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন। হিংসার প্রশ্নটি প্রশাসন দেখুক। রাজনৈতিক মতবাদ বা ভাষ্যের সম্মুখীন হওয়ার দায়িত্ব রাজনীতির। এবং, সেই পরিসরে মাওবাদী রাজনীতির মতে বিশ্বাসীদের ‘দেশের শত্রু’ হিসাবে দাগাইয়া দেওয়ার বোধহীন প্রবণতাটি থামানো প্রয়োজন। মত না-ই মিলিতে পারে, কিন্তু তাহার উত্তর রাজনৈতিক তর্ক, রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন নহে। রাষ্ট্র দুধ-জলে ফারাক করিতে শিখিলে মঙ্গল, কারণ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনও উদারবাদীই মাওবাদী হিংস্রতার সমর্থক হইতে পারেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dantewada Naxal Attack BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE