Advertisement
E-Paper

ব্রহ্মাস্ত্র

বাক্যটি এই রকম: বর্তমান ভারতে নাগরিকরা যাহাতে শাসকের সমালোচনা করিবার স্বাধীনতা দাবি না করে, তাহার জন্য লাগাতার ভয়ের শৃঙ্খলে তাহাদের বদ্ধ রাখা হয়।

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
কনহইয়া কুমার

কনহইয়া কুমার

কানহাইয়া কুমার সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সরল কতকগুলি প্রশ্নের মাধ্যমে এ দেশের বর্তমান সমাজ-রাজনীতির একটি ভয়ানক অসুখকে তুলিয়া ধরিলেন। প্রশ্নগুলি নিম্নাকার: ২০১৬ সালে জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি চত্বরে বক্তৃতাদানের কয়েক সপ্তাহ পরে তাঁহাকে যে গ্রেফতার করা হইয়াছিল, তাহার যুক্তিটি কী। যদি ওই বক্তৃতায় তিনি বেআইনি কিছু বলিয়া থাকেন, তবে তো পুলিশ তাঁহাকে তখনই গ্রেফতার করিতে পারিত। তাহা না করিয়া এতগুলি দিন অপেক্ষার কারণ কী। গ্রেফতারের পর জামিনে ছাড়া পাইলেন তিনি, ভাল কথা, কিন্তু তাহার পর আজ পর্যন্তও পুলিশ সে বিষয়ে কোনও চার্জশিট তৈরি করিতে পারিল না কেন। যদি তিনি নির্দোষ হইয়া থাকেন, তবে তাঁহাকে বৎসরের পর বৎসর ধরিয়া দোষীর ন্যায় বোধ করা হইতেছে কেন। যদি তিনি আর পাঁচ জন সাধারণ নাগরিক হইতে পৃথক না হন, তাহা হইলে গত আড়াই বৎসরব্যাপী পুলিশি নিরাপত্তা তাঁহাকে চব্বিশ ঘণ্টা ঘিরিয়া থাকে কেন।— সব কয়টি প্রশ্নের উত্তরই যে একটি বাক্যে প্রকাশ করা সম্ভব, ঠিক সেই জন্যই তিনি প্রশ্নগুলিকে এমন ভাবে সাজাইয়াছেন। বাক্যটি এই রকম: বর্তমান ভারতে নাগরিকরা যাহাতে শাসকের সমালোচনা করিবার স্বাধীনতা দাবি না করে, তাহার জন্য লাগাতার ভয়ের শৃঙ্খলে তাহাদের বদ্ধ রাখা হয়। ‘ভয়’ এখন এই দেশের শাসকের হাতে প্রধান অস্ত্র।

দুই বৎসর আগেকার বক্তৃতাটিতে সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে ধৃত ও ফাঁসিপ্রাপ্ত আফজ়ল গুরুর প্রসঙ্গ টানিয়া কানহাইয়া কুমার ভারতীয় রাষ্ট্রের কাশ্মীর নীতির তীব্র নিন্দা করেন। তাঁহার নিজের ব্যাখ্যায়, তিনি ‘ভারত হইতে’ স্বাধীনতার কথা বলেন নাই, ভারতীয় রাষ্ট্রের অনাচার হইতে স্বাধীনতার কথা বলিয়াছিলেন। তাঁহার বক্তৃতার বাকি অংশের সঙ্গে এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট মিলিয়া যায়। কিন্তু জাতীয়তাবাদের ধ্বজাটি বিজেপি সরকারের অতি প্রয়োজনীয়, সুতরাং জাতীয়তাবাদের জুজু ছড়াইবার প্রকল্পে কানহাইয়াদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসাবে দাগানো ও দেখানোর পদ্ধতিটি বিশেষ ‘উপকারী’। সেই পদ্ধতি সমানে চলিতেছে। কাশ্মীর, সেনাবাহিনী, হিন্দুধর্ম, মধ্যযুগীয় ইতিহাস— নানা প্রসঙ্গে এই পদ্ধতির ব্যবহার দেখা গিয়াছে। জালন্ধরের কুড়ি বছরের কন্যা গুরমেহর কৌর হইতে বলিউডের চলচ্চিত্র-নির্দেশক সঞ্জয় লীলা ভংশালী, কত নামই স্মৃতিপথে উদ্ভাসিত হয়।

ভয় প্রদর্শনের কৌশল কোনও বিশেষ দল বা রাজনীতির একচেটিয়া ভাবিলে অবশ্য ভুল হইবে। অবস্থাগতিকে ইহা এখন দেশের সামগ্রিক পরিবেশের চিহ্নক। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘প্রয়োজন’-এ পিটুনির বন্দোবস্ত, কিংবা নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারীদের অকারণ কারাবাস করানোর ব্যবস্থা যে রাজ্যে চালু, সেখানে ভয়ের রাজনীতিকে কোনও দূরের রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত করিয়া দেখা অসম্ভব। নাগরিক মানসে ভয় প্রবেশ করাইতে পারিলে সহজেই বিরোধিতার পরিসরটিকে সঙ্কুচিত করিয়া দেওয়া যায়। সুতরাং কানহাইয়া কুমারের বক্তব্যটিকে প্রসারিত করিয়া বলা ভাল, গণতন্ত্রের কাঠামোর মধ্যে থাকিয়া নিরন্তর গণতন্ত্রকে ধ্বংস করিবার ব্রহ্মাস্ত্র তৈরি করা হইতেছে। তাহার নাম ভয়।

Jawaharlal Nehru University JNU Student Academics Fascism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy