Advertisement
E-Paper

চাষির নিজের পায়ে দাঁড়াতে জরুরি কিসান ক্রেডিট কার্ড

প্রাকৃতিক দুর্যোগেও চাষিদের নিশ্চিন্তে রাখতে পারে কিসান ক্রেডিট কার্ড (কেসিসি)। কারণ, কেসিসি-র মাধ্যমে সাধারণ চাষিরা ব্যাঙ্ক অথবা সমবায় সমিতিতে ঋণ নিলে তাঁদের জমি বিমার আওতায় চলে আসে। খাতায়কলমে জেলার বেশির ভাগ চাষির হাতে কিসান ক্রেডিট কার্ড পৌঁছে গেলেও, বাস্তবে জেলার এমন অনেক চাষিই রয়েছেন যাঁদের হাতে এখনও পৌঁছয়নি এই কার্ড

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০৬:৪০
সাম্প্রতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোরোর ফলন। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

সাম্প্রতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোরোর ফলন। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চাষের খেত। বাপ, ঠাকুর্দাদার খেতে সারা বছর বিরামহীন চাষেই অভ্যস্ত পূর্ব বর্ধমান জেলার কয়েক লক্ষ চাষি। পালা করে তাঁরা ধান, আলু, পাট, পেঁয়াজ, আনাজের মতো ফসল উৎপাদন করে। এ অঞ্চলের অর্থনীতির মূল ভিত্তিই হল চাষ। চাষের হাত ধরেই ধীরে ধীরে সুখের মুখ দেখেছেন এই জেলায় অনেক পরিবার। বদলেছে জীবনযাত্রার ধরন। দিন বদলালেও এখনও চাষই এই এলাকা চালিকা শক্তি। এক চাষে লোকসানের মুখ দেখলে অন্য চাষ তার ধাক্কা সামলেছে। কিন্তু, ফসলের লাভজনক দর না মিললে অনেক সময়ে চাষির ভাঁড়ারে নগদে টান পরে। যার সুযোগ নেয় মহাজনেরা। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে জমিতে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে বহু চাষিকে হা হুতাশ করতে দেখা যায়। দুর্দিনে চাষির রক্ষা কবচ হতে পারে কিসান ক্রেডিট কার্ড (কেসিসি)।

খাতায়কলমে জেলার বেশির ভাগ চাষির হাতে কিসান ক্রেডিট কার্ড পৌঁছে গেলেও, বাস্তবে জেলার এমন অনেক চাষিই রয়েছেন যাঁদের হাতে এখনও পৌঁছয়নি এই কার্ড। আবার কেউ কেউ এই কার্ড পেলেও তার সুবিধা নিতে পারেননি। কিসান ক্রেডিট কার্ড আসলে এক ধরনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। এই অ্যাকাউন্টটির জন্য দেওয়া হয় ডেবিড কার্ড। মহাজনী ঋণের ক্ষেত্রে চাষিদের যেখানে বছরে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ সুদ গুনতে হয়, সেখানে কিসান ক্রেডিট কার্ডে বাৎসরিক তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্য সুদ দিতে হয় ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ঠিক সময়ে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারলে সরকারি ভাবে ৩ শতাংশ সুদের ছাড়ও মেলে। এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোন কিছু বন্ধকী ছাড়াই মেলে ঋণ। কোন কোন চাষে, কোন জেলায়, কত খরচ তার উপরেই নির্ভর করে বিঘা প্রতি ঋণের অঙ্ক। যাঁরা কোনও একটি মরসুমে একাধিক ফসলের চাষ করেন, তাঁদের সব ফসল ধরে কষা হয় ঋণের অঙ্ক। এক বার কেসিসি চালু হয়ে গেলে টানা পাঁচ বছর ধরে মেলে ঋণ। এমনকি, প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে বাড়তে থাকে ঋণের পরিমাণ। চাষ চলাকালীন ঋণের টাকা দফায় দফায় তোলা যায় এবং ফেরৎ দেওয়া যায়। ফলে সুদের পরিমাণও কম হয়। জমির উন্নতি, কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে মেলে ঋণ।

বর্তমানে চাষের প্রতিটি মরসুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় লেগেই থাকছে। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় কখনও শিলাবৃষ্টি, কখনও ঝড়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। কখনও আবার অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে ফসল। আবার কোনও সময়ে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল না মেলায় মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসল। ফলে, হাজার হাজার চাষির মাথায় হাত পড়েছে। চলতি মরসুমে এই জেলার পূর্বস্থলী ১, পূর্বস্থলী ২, মেমারি ২, খণ্ডঘোষ, রায়না, জামালপুর, মঙ্গলকোটের মতো বেশ কয়েকটি ব্লকে দফায় দফায় ঝড়-বৃষ্টিতে বহু চাষির বোর ধান, আনাজ, তিল, পাটের ফলনের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু, অনেকেই হয়তো জানেন না, এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও চাষিদের নিশ্চিন্তে রাখতে পারে কেসিসি। কারণ, কেসিসি-র মাধ্যমে সাধারণ চাষিরা ব্যাঙ্ক অথবা সমবায় সমিতিতে ঋণ নিলে তাঁদের জমি বিমার আওতায় চলে আসে। আলুর মতো দু’-একটি ফসল ছাড়া সরকারি উদ্যোগে চাষিদের বিমার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জমা দেওয়া হয়। ফলে ঋণ নেওয়া চাষির জমি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হলে বিমা সংস্থার কাছ থেকে পৌঁছে যায় ক্ষতিপূরণে অর্থ। পাশাপাশি, চাষিদের নানান সরকারি সুযোগ, সুবিধা পেতে কেসিসি কাজে আসে।

চাষের জন্য বিভিন্ন মরসুমে অর্থের যোগান দেওয়া কেসিসি পেতেও চাষিদের খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় না বলে জানান কৃষি দফতরের কর্তারা। অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে ব্যাঙ্ক, সমবায় সমিতি অথবা কৃষি দফতরে আবেদন জানাতে হয়। এ ক্ষেত্রে কৃষি ঋণের আবেদনপত্রের সঙ্গে চাষিরা নিজের ছবি, চাষযোগ্য জমির নথি, বসবাসের স্থায়ী ঠিকানার মতো বেশ কিছু নথিপত্র জমা দিতে হয়। ভাগচাষিদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পরে এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানের শংসাপত্র। তবে এক বার কেসিসি হয়ে গেলে প্রয়োজন রয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের পরে পুনর্নবীকরণের। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত লেনদেন ঠিক থাকলে ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের চিঠি লিখে জানিয়ে দিতে হবে তাঁর জমির পরিমাণ এবং চাষযোগ্য ফসল আগে যা ছিল তা অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে অনিয়মিত ঋণের ক্ষেত্রে টাকা সুদ-সহ পরিশোধ করা হলে তবে তা নবীকরণ করা হয়। কেসিসি ঋণ নিয়মিত চালু থাকলে চাষের মরসুমের শুরুতে ব্যাঙ্কে একটি দরখাস্ত জমা দিতে হয়। এর পরেই নিয়ম অনুযায়ী ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ঋণের সীমা বাড়িয়ে দেবেন। পাশাপাশি, কেসিসি ঋণ সংক্রান্ত কোনও সহায়তা বা তথ্যের প্রয়োজন হলে চাষিদের সাহায্য করবেন এলাকার কৃষি দফতর, সমবায় এবং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

কেসিসি নিয়ে সরকারি তরফে প্রচারেও কোন খামতি নেই। বিভিন্ন মেলা, কৃষি প্রদর্শনীতে কেসিসির সুবিধা নিয়ে প্রচার চালানো হয়। সারা বছর গ্রামীণ সমবায় গুলিতে বিভিন্ন আলোচনা সভার আসরেও কৃষি কর্তারা তুলে ধরেন চাষির এই রক্ষা কবচটির কথা। তবে তা সত্ত্বেও জেলার চাষিদের একটা অংশ এখনও রয়েছে কেসিসির বাইরে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেসিসির জন্য বাধা হয়েছে দাঁড়িয়েছে জমির প্রয়োজনীয় নথিপত্র। কৃষি কর্তারা জানিয়েছেন, তা সত্ত্বেও চাষিদের একাংশ সদিচ্ছার অভাবে কেসিসির সুযোগ নিতে পারেন না। অথচ মহাজনী ফাঁদ থেকে বেরিয়ে চাষির নিজের পায়ে দাঁড়াতে কেসিসির কোনও বিকল্প নেই।

Kisan Card Farmers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy