Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সহ-বাস

মেয়েরা ১৮ এবং পুরুষরা ২১ হইলে তবেই সেই বিবাহ আইনসিদ্ধ বলিয়া ধরা হয়। সেই আইন অনুযায়ীই কেরলের ২০ বৎসর বয়সি থুশারা এবং নন্দকুমারের বিবাহকে গত বৎসর কেরল হাইকোর্ট তাহার রায়ে বাতিল বলিয়া ঘোষণা করিয়াছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ভারতে ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ পুরুষ এবং ‘বিবাহযোগ্য’ পুরুষের বয়সের মধ্যে তিন বৎসরের ব্যবধান কি এই বার মুছিবার সময় হয় নাই? সর্বোচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক একটি রায় পড়িয়া সেই প্রশ্ন তোলা যাইতে পারে। এই দেশের আইনে ছেলে, মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রাপ্তবয়স্ক হইয়া উঠিবার বয়স ১৮। কিন্তু বিবাহযোগ্য বয়সের ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে তিন বৎসরের একটি সচেতন ফাঁক রাখা হইয়াছে। মেয়েরা ১৮ এবং পুরুষরা ২১ হইলে তবেই সেই বিবাহ আইনসিদ্ধ বলিয়া ধরা হয়। সেই আইন অনুযায়ীই কেরলের ২০ বৎসর বয়সি থুশারা এবং নন্দকুমারের বিবাহকে গত বৎসর কেরল হাইকোর্ট তাহার রায়ে বাতিল বলিয়া ঘোষণা করিয়াছিল। কারণ বিবাহের সময় পাত্রী ১৮ পার হইলেও পাত্র তাহার জন্য নির্ধারিত বিবাহযোগ্য বয়স, ২১ পার হয় নাই। ফলত উচ্চ আদালত থুশারার দায়িত্ব তাহার বাবার হাতেই অর্পণ করে, অপ্রাপ্তবয়স্ক স্বামীর হাতে নহে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কেরল হাইকোর্টের রায় খারিজ করিয়া থুশারা কাহার সঙ্গে থাকিতে চাহে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত লইবার অধিকার তাহার হাতেই অর্পণ করিয়াছে। এবং জানাইয়াছে যে, তাহাদের বিবাহ আইনসম্মত নয় বটে, কিন্তু লিভ-ইন সম্পর্কের অধিকার তাহাদের আছে।

অর্থাৎ, একসঙ্গে থাকিবার ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কতা অর্জনই শেষ কথা, বিবাহযোগ্যতা নহে। প্রশ্ন উঠিবে, পুরুষের বিবাহযোগ্য বয়সই বা তবে ২১-এ বাঁধিয়া রাখা হইবে কেন? বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েদের এবং ছেলেদের বয়স ভিন্ন রাখিবার পশ্চাতে কিছু শারীরবৃত্তীয় কারণ থাকিতে পারে, কিন্তু পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার অবদান বোধ করি অনেক বেশি। এই মানসিকতা বলে, স্ত্রী অপেক্ষা স্বামীকে, আসলে পরিবারের কর্তাকে বয়সের দিক হইতে কিছু আগাইয়া থাকা উচিত। ধরিয়া লওয়া হয়, পরিবারে মূল উপার্জনকারী পুরুষরাই। সুতরাং, জীবিকাক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হইয়া তবেই তাহার পরিবারের দায়িত্ব লওয়া উচিত। ওই তিন বৎসরের ব্যবধান সেই যুক্তিতেই। কিন্তু যুগ বদলাইয়াছে। এখনও নিশ্চয়ই সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিবারে পুরুষই উপার্জন করে, কিন্তু নীতি হিসাবে, উপার্জনের অধিকার ও দায়িত্ব একমাত্র পুরুষের— এমন ধারণা এখন সম্পূর্ণ অচল। সুতরাং আইন করিয়া পুরুষের বিবাহের বয়স বেশি রাখিবার কোনও যুক্তি আর নাই।

কিন্তু আইন বদলাইলেও সমাজ কি তাহা মানিবে? বহু ক্ষেত্রেই আইনে যাহা স্বীকৃতি পাইয়াছে, সমাজ তাহাকে মানিতে বহু সময় লইয়াছে। সেই ২০১০ সাল হইতে সুপ্রিম কোর্ট লিভ-ইন সম্পর্ক লইয়াই বেশ কিছু ঐতিহাসিক রায় দিয়াছে। যেমন, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ না হইয়াও যদি এক জন নারী এবং পুরুষ স্বামী-স্ত্রী হিসাবে একত্রে বসবাস করেন, তবে তাঁহাদের আইনসম্মত ভাবে বিবাহ হইয়াছে, ধরিয়া লইতে হইবে এবং সঙ্গীর মৃত্যুর পর তাঁহার সম্পত্তির অধিকারও অন্য জন পাইবে। এবং তাঁহাদের সন্তান আইনি স্বীকৃতি পাইবে বলিয়াও রায় দেওয়া হয়। কিন্তু সমাজে এখনও অবিবাহিত দম্পতিরা মহানগরের বুকে থাকিবার উপযুক্ত জায়গা খুঁজিয়া পায় না, প্রতিবেশীদের ব্যঙ্গ এবং পুলিশি হেনস্থা প্রায়শই তাহাদের সঙ্গ ছাড়ে না। সুতরাং, আদালতের স্বীকৃতি মিলিলেও সমাজের বাধা কাটে নাই। তাহার জন্য আরও অপেক্ষা করিতেই হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Supre Court Live-In Relationship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE