পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা, শুভ সন্ধিক্ষণের দ্বারপ্রান্ত মহালয়া। হিন্দু শাস্ত্র তেমনই বলে। আগামী এক পক্ষ কালকে যদি অশুভের বিরুদ্ধে শুভের চূড়ান্ত বিজয়ের কাল বলে ধরে নেওয়া যায়, তা হলে কিছুর সঙ্কল্প বা শপথ গ্রহণের উপযুক্ত ক্ষণ এটাই। তবে মহালয়ার এই উজ্জ্বল প্রাতে সর্বাগ্রে পাঠকদের জানাই শারদোত্সবের অসীম শুভেচ্ছা।
বঙ্গে এ উত্সব শুধু দুর্গাপুজো নয়, এ হল শারদোত্সব। হিন্দুর শাস্ত্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের পরিসর ছাড়িয়ে দশ দিকে বিপুল পরিব্যাপ্তি দশভুজার আরাধনা উপলক্ষে আয়োজিত এই উত্সবের। হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসিক, মুসলমান, খ্রিস্টান— গোটা বঙ্গদেশ লীন এই উত্সবে, গোটা উত্সবের সার্থকতা বাংলার এই প্রত্যেকটা ঘর-দুয়ারকে স্পর্শ করার মধ্যে। এমন শুভ ক্ষণে যাবতীয় অশুভ, যাবতীয় নেতি, যাবতীয় গ্লানি, যাবতীয় অপমান, যাবতীয় পরাজয়ের বিরুদ্ধে একত্র হওয়ার সঙ্কল্প আমাদের নিতে হবে। একত্র— শব্দটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আজ। নানা ভেদরেখা আমাদের আশেপাশে স্পষ্ট হয়ে উঠতে চাইছে। বিভাজনের নানা বেড়া বা প্রাচীর মাথা তুলতে চাইছে। অশুভ লক্ষণ ওইগুলোই। সব প্রতিকূলতা সরিয়ে একত্রে থাকতে পারলেই জয় আমাদের, জয় শুভের। প্রথম সঙ্কল্পটা তাই আজ গৃহীত হোক ঐক্যবদ্ধ থাকার লক্ষ্যেই।
দেবীপক্ষে দশভুজার আরাধনা যাবতীয় পীড়া, যাবতীয় দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যও। পীড়া কিন্তু অনেক কারণে উত্পন্ন হয়। দেশের পশ্চিম প্রান্তের কোনও ভূখণ্ড থেকে যখন চোদ্দ মাসের শিশুকন্যার ধর্ষণের খবর আসে, তখন অসীম পীড়া হয়, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। দেশের পূর্ব প্রান্তে যখন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বিপর্যস্ত হতে দেখা যায়, রাজনীতি হয়ে ওঠে হানাহানির নামান্তর, পড়ুয়ারাও সে হানাহানির বৃত্তের বাইরে থাকতে পারেন না, একে একে ঝরতে থাকে তরতাজা প্রাণ, তখন অস্তিত্বের অন্তঃস্থলে যন্ত্রণা শুরু হয়। দেশের সবচেয়ে বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যখন একের পর এক নারী যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলতে থাকেন কিন্তু ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের সিংহভাগ কুশীলব মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন অথবা দায় এড়াতে চান অথবা কুরুচিকর কটাক্ষে অভিযোগকারিণীকেই আক্রমণ করেন, তখন মন-মনন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।