Advertisement
E-Paper

উত্সবের সূচনা হোক শপথে-সঙ্কল্পে

বঙ্গে এ উত্সব শুধু দুর্গা পূজা নয়, এ হল শারদোত্সব। হিন্দুর শাস্ত্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের পরিসর ছাড়িয়ে দশ দিকে বিপুল পরিব্যাপ্তি দশভূজার আরাধনা উপলক্ষে আয়োজিত এই উত্‌সবের।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩০
এই মহালয়ায় শপথ নেওয়া যাক— স্ব-পীড়ন আর নয়, কারও যন্ত্রণার কারণ আমরা হয়ে উঠব না, মানবতার যে কোনও সঙ্কট রুখব হাতে হাত রেখে। ফাইল চিত্র।

এই মহালয়ায় শপথ নেওয়া যাক— স্ব-পীড়ন আর নয়, কারও যন্ত্রণার কারণ আমরা হয়ে উঠব না, মানবতার যে কোনও সঙ্কট রুখব হাতে হাত রেখে। ফাইল চিত্র।

পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা, শুভ সন্ধিক্ষণের দ্বারপ্রান্ত মহালয়া। হিন্দু শাস্ত্র তেমনই বলে। আগামী এক পক্ষ কালকে যদি অশুভের বিরুদ্ধে শুভের চূড়ান্ত বিজয়ের কাল বলে ধরে নেওয়া যায়, তা হলে কিছুর সঙ্কল্প বা শপথ গ্রহণের উপযুক্ত ক্ষণ এটাই। তবে মহালয়ার এই উজ্জ্বল প্রাতে সর্বাগ্রে পাঠকদের জানাই শারদোত্সবের অসীম শুভেচ্ছা।

বঙ্গে এ উত্সব শুধু দুর্গাপুজো নয়, এ হল শারদোত্সব। হিন্দুর শাস্ত্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের পরিসর ছাড়িয়ে দশ দিকে বিপুল পরিব্যাপ্তি দশভুজার আরাধনা উপলক্ষে আয়োজিত এই উত্‌সবের। হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসিক, মুসলমান, খ্রিস্টান— গোটা বঙ্গদেশ লীন এই উত্সবে, গোটা উত্সবের সার্থকতা বাংলার এই প্রত্যেকটা ঘর-দুয়ারকে স্পর্শ করার মধ্যে। এমন শুভ ক্ষণে যাবতীয় অশুভ, যাবতীয় নেতি, যাবতীয় গ্লানি, যাবতীয় অপমান, যাবতীয় পরাজয়ের বিরুদ্ধে একত্র হওয়ার সঙ্কল্প আমাদের নিতে হবে। একত্র— শব্দটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আজ। নানা ভেদরেখা আমাদের আশেপাশে স্পষ্ট হয়ে উঠতে চাইছে। বিভাজনের নানা বেড়া বা প্রাচীর মাথা তুলতে চাইছে। অশুভ লক্ষণ ওইগুলোই। সব প্রতিকূলতা সরিয়ে একত্রে থাকতে পারলেই জয় আমাদের, জয় শুভের। প্রথম সঙ্কল্পটা তাই আজ গৃহীত হোক ঐক্যবদ্ধ থাকার লক্ষ্যেই।

দেবীপক্ষে দশভুজার আরাধনা যাবতীয় পীড়া, যাবতীয় দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যও। পীড়া কিন্তু অনেক কারণে উত্পন্ন হয়। দেশের পশ্চিম প্রান্তের কোনও ভূখণ্ড থেকে যখন চোদ্দ মাসের শিশুকন্যার ধর্ষণের খবর আসে, তখন অসীম পীড়া হয়, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। দেশের পূর্ব প্রান্তে যখন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বিপর্যস্ত হতে দেখা যায়, রাজনীতি হয়ে ওঠে হানাহানির নামান্তর, পড়ুয়ারাও সে হানাহানির বৃত্তের বাইরে থাকতে পারেন না, একে একে ঝরতে থাকে তরতাজা প্রাণ, তখন অস্তিত্বের অন্তঃস্থলে যন্ত্রণা শুরু হয়। দেশের সবচেয়ে বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যখন একের পর এক নারী যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলতে থাকেন কিন্তু ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের সিংহভাগ কুশীলব মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন অথবা দায় এড়াতে চান অথবা কুরুচিকর কটাক্ষে অভিযোগকারিণীকেই আক্রমণ করেন, তখন মন-মনন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আবারও বলি, পীড়া আরও অনেক কারণে উত্পন্ন হয়, এই কয়েকটি দৃষ্টান্তেই সীমাবদ্ধ নয় পীড়ার উত্স। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই স্পষ্ট বোঝা যায়, পীড়ার উত্সগুলির সৌজন্যে আমরাই। আমরা নিজেরাই নিজেদের পীড়িত করি, নিজেরাই যন্ত্রণার কারণগুলো নির্মাণ করি, নিজেরাই নিজেদের রক্তাক্ত করি। এই মহালয়ায় তাই শপথ নেওয়া যাক— স্ব-পীড়ন আর নয়, কারও যন্ত্রণার কারণ আমরা হয়ে উঠব না, মানবতার যে কোনও সঙ্কট রুখব হাতে হাত রেখে।

আরও পড়ুন: শুধু রসগোল্লায় নয়, বঙ্গ-কলিঙ্গ যুযুধান মহালয়ার গঙ্গা পাড়েও

আরও পড়ুন: বহিরাগতেরা পালাচ্ছেন, গুজরাতে ধৃত ৩৪২

এই শপথ বা এই সঙ্কল্প প্রথমবার নিচ্ছি, এমন নয়। এ রকম অনেক সঙ্কল্প আগেও অনেক বার নিয়েছি হয়ত। তবু সঙ্কট পিছু ছাড়েনি। তা বলে কি সঙ্কল্প গ্রহণ করা ছেড়ে দেব? কখনওই নয়। এই শপথ, এই সঙ্কল্পগুলোই বার বার মনে করিয়ে দেয়, দিকভ্রান্ত হলে চলবে না। এই শপথ, এই সঙ্কল্পগুলো ফিরে ফিরে আসে বলেই মানবতার সঙ্কটে এখনও আমরা পীড়া বোধ করি। এই শপথ, এই সঙ্কল্পগুলোই বিভাজন মুছে আজও আমাদের একত্র রাখে, আজও মহালয়া এলেই উত্সব স্পর্শ করে এ বঙ্গভূমির প্রতিটি ঘর-দুয়ারকে।

উত্সব আনন্দময় হোক।

Newsletter Editorial News Durga Puja Mahalaya মহালয়া Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy