Advertisement
E-Paper

সীমানাহীন, বিভাজনহীন ভালবাসার শপথ নেওয়া যাক

স্বাধীনতার মুহূর্তও ছিল আমাদের কাছে যন্ত্রণার, দেশভাগের সেই যন্ত্রণাজর্জর প্রজন্মের উত্তরসূরি আমরা এখন সাক্ষী থাকছি নিরন্তর আঘাতের, যে আঘাতের লক্ষ্য দেশের মধ্যে আর একটা দেশের অলিখিত মানচিত্র খোদাই করা।  আমরা, স্বাধীন একটা দেশ, দেশভাগের যন্ত্রণাউত্তর দেশ, আবার একটা ভাগের ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছি। সমাজ ভাগের ষড়যন্ত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৮ ০০:২৮
মানুষের প্রতি মানুষের অনিবার ভালবাসা, সেটাই হোক অঙ্গীকার।

মানুষের প্রতি মানুষের অনিবার ভালবাসা, সেটাই হোক অঙ্গীকার।

সহজ কথাটা সহজ করে বলে ফেলাই ভাল। বাহাত্তুরে হলাম আমরা এই স্বাধীন ভারত, তবু সাবালকত্ব প্রাপ্তির দিকে এক পা এগোতে পারলাম না। ক্রমাগত পিছনে হাঁটছি। জয় হিন্দ বলে ঘোষণায় দেশপ্রেমের যে গৌরবগাথার ঐতিহ্য, তাকেই প্রাচীর হিসেবে তুলে ধরছি সামনে, এবং তার আড়াল থেকেই মেঘনাদ হয়ে বাণ ছুড়ছি ক্রমাগত, বিদ্বেষ ও ঘৃণার তীব্র বিষে মেশানো সেই বাণের অগ্রভাগ।

স্বাধীনতার মুহূর্তও ছিল আমাদের কাছে যন্ত্রণার, দেশভাগের সেই যন্ত্রণাজর্জর প্রজন্মের উত্তরসূরি আমরা এখন সাক্ষী থাকছি নিরন্তর আঘাতের, যে আঘাতের লক্ষ্য দেশের মধ্যে আর একটা দেশের অলিখিত মানচিত্র খোদাই করা। আমরা, স্বাধীন একটা দেশ, দেশভাগের যন্ত্রণাউত্তর দেশ, আবার একটা ভাগের ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছি। সমাজ ভাগের ষড়যন্ত্র।

না হলে সানিয়া মির্জার মতো টেনিসতারকা, যাঁর ফোরহ্যান্ড স্ম্যাশ কত বার যে ভারতকে বিজয়ীর মঞ্চে দাঁড় করিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই, সেই খেলোয়াড়কেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ১৪ অগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে শুনতে হয়, আপনার স্বাধীনতা দিবস তো আজকেই, নাকি! ন্যূনতম আত্মমর্যাদার বোধরহিত একদল লোক বিষাক্ত নজরে এই কথাগুলো বলতেই থাকে, তার কারণ এই নয় যে, সানিয়া মির্জার স্বামী শোয়েব মালিক পাকিস্তানি, আসলে স্ক্যানারের নীচে চলে আসেন সানিয়ারা তাঁদের ধর্মের কারণে, তাঁরা মুসলমান বলে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এবং সেই জন্যেই টিটাগড় ইয়ুথ ফোরাম যখন ১৪ অগস্ট রাতে জশন-ই-আজাদি নামের কবিতা উৎসব পালন করে, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল হয়, কারণ মুসলিম আর ১৪ অগস্ট মানেই পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন। সেই একই সময়ে বেহালায় শোভন চট্টোপাধ্যায় বা লেকটাউনে সুজিত বসুরা একই ভাবে স্বাধীনতার উৎসব পালন করছেন এবং তার জন্য কোনও জবাবদিহির প্রয়োজন পড়ছে না শুধুমাত্র এই কারণেই, যে তাঁরা হিন্দু কুলতিলক। চট্টোপাধ্যায় বা বসুরা মুসলমান হতে পারেন না।

এই সব কাণ্ড যখন হতে থাকে, তখন এক অবধারিত সুচিন্তিত বিস্মৃতির অকূল পাথারে ডুবে থাকে অসমের বানভাসি এক স্কুলে তেরঙ্গা উঁচিয়ে ধরা হায়দর অথবা জিয়ারুলের নাম। যে হায়দরের নাম এনআরসি-র প্রাথমিক তালিকায় উঠবে না এবং প্রশ্নগুলো উঠতে থাকবে এরা অনুপ্রবেশকারী নাকি যথাযথ বাসিন্দা?

আরও পড়ুন: পরের ১৫ অগস্ট এ দেশ তার থাকবে তো? দুরুদুরু বুকেই পতাকা তুলল সেই হায়দর

আসলে হৃদয়ের মানচিত্রে এক বড় জঙ্গির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ফেলেছি আমরা, তার নাম ঘৃণা। জাতির নামে, সম্প্রদায়ের নামে, গোত্রের নামে, বর্ণের নামে ক্রমাগত ঘৃণার চালান হতে থেকেছে হৃদয়ে। শিরা, উপশিরা, রক্তসরণি বেয়ে আসমুদ্র হিমাচলে কীভাবে তা ছড়িয়ে পড়েছে, আমরা যাঁরা সাধারণ নাগরিক, আন্দাজও পাইনি।

দেশের সারসত্য যদি মানুষ হয়, সেই সত্যে কোথাও টান পড়ছে, টান পড়ানো হচ্ছে। এক জাতি-এক প্রাণ, একতার কথা বলব আর ক্রমাগত চাষ করব বিদ্বেষ, বিভাজন, ঘৃণার, এর চেয়ে বড় দ্বিচারিতা আর কিছু হতে পারে না। দেশ নিয়ে যদি ন্যূনতম গর্বের ভাগীদার হতে চাই, তবে তার জন্য অর্জন করতে হবে যোগ্যতা। আমরা তার জন্য প্রস্তুত?

আরও পড়ুন: 'আপনার স্বাধীনতা দিবস কবে?' টুইটারে খোঁচার সপাটে জবাব সানিয়া মির্জার

তাহলে এই স্বাধীনতা দিবসেই একটা শপথ নেওয়া যাক। বিভাজনহীন, সীমানাহীন এক অনিবার ভালবাসা মানুষের প্রতি মানুষের, সেটাই হোক এ বারের অঙ্গীকার।

Newsletter Independence Day Anjan Bandyopadhay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Sania Mirza সানিয়া মির্জা হায়দর অসম টিটাগড় Assam Titagarh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy