আনন্দ মুখোপাধ্যায় ‘রাষ্ট্রের রোষানলে দগ্ধ’ (১০-১০) শীর্ষক প্রবন্ধটি যথার্থই লিখেছেন। এক রকম প্রত্যাশিত পথেই মোদী সরকার লাদাখে মানুষের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতে পরিবেশ আন্দোলনকর্মী ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুককে গ্রেফতার করল। অথচ, এই মানুষটির আদলেই থ্রি ইডিয়টস ছবির মুখ্য চরিত্রটি তৈরি হয়েছিল। পর্দার চরিত্রে ফুংসুক ওয়াংডু বা ‘র্যাঞ্চো’ নাম হলেও বাস্তবের সোনম ওয়াংচুক দেশের জন্য কী করেননি? তুষারাচ্ছাদিত লাদাখে সেনাদের জন্য এমন ঘর তৈরি করেছেন, যেখানে উষ্ণতার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। ফলে পরিবেশ দূষিত হয় না। এমন ধরনের কৃত্রিম হিমবাহ বা বরফের স্তূপ তৈরির কৌশল উদ্ভাবন করেছেন, যা অসময়ে পানীয় ও সেচের জলের জোগান দেয়। তাঁর স্বশাসনের আকাঙ্ক্ষাটি যথার্থ। লাদাখে শিল্পায়নের ফলে রসাতলে যাবে পরিবেশ, তাই এর বিরোধিতা করেছেন। শিল্পবান্ধব মোদী সরকারের তা পছন্দ হয়নি। কেন্দ্রের জবাবে বিরোধিতা আর রাষ্ট্রদ্রোহ গুলিয়ে গিয়েছে। সরকারি বয়ানে তিনি ‘পাকিস্তানের চর’। মানে ‘দেশদ্রোহী’। রাষ্ট্রের পক্ষে বিপজ্জনক। এক সময়ের ‘নয়নের মণি’ থেকে তিনি এখন রাতারাতি ‘চোখের বালি’।
মোদী সরকার যেখানে তাদের সাজানো ছক অনুযায়ী চলতে ব্যর্থ হয়, যেখানকার পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় অর্থাৎ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, প্রতিবাদ, ক্ষোভ বিক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে, সেখানেই মোদী-শাহ বিদেশি শক্তির ভূত খুঁজতে থাকেন। অতঃপর তাঁদের বিরুদ্ধে করা হয় নির্মম পদক্ষেপ। এমনটা আগেও বহু বার হয়েছে। কাশ্মীরে এমনটাই দেখে অভ্যস্ত মানুষ। মোদী-নীতি মণিপুরকে অশান্ত করেছে। লাদাখ সেই পথে হাঁটলে ভারতের পক্ষে সমস্যা বাড়বে। ভুললে চলবে না, লাদাখের এক দিকে পাকিস্তান, অন্য দিকে চিন। মণিপুরের অশান্ত থাকা ও লাদাখের শান্তিভঙ্গের মধ্যে আকাশপাতাল তফাত।
প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত, ব্যান্ডেল, হুগলি
অপব্যবহার
আনন্দ মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধটি ভারতীয় আইন ব্যবস্থার সর্বগ্রাসী রূপকে আরও এক বার স্মরণ করিয়ে দিল। রাষ্ট্রীয় পীড়নের ইতিহাস দীর্ঘ। সেই তালিকায় এ বার জুড়ল সোনম ওয়াংচুকের নাম। দীর্ঘ কাল ধরে হিমালয়ের পরিবেশ রক্ষা, লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা এবং তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান-সহ নানান দাবি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন শিক্ষাবিদ ও পরিবেশকর্মী সোনম। এমন দাবির পক্ষ নিয়ে কিছু প্রবীণ মানুষ-সহ তিনি অনশনও শুরু করেন।
দীর্ঘ এক পক্ষকাল পরে দু’জন অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়লে এই সংবাদ আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তাতে ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলির আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নেয়। ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর নির্মম ভাবে গুলি চালায়। ফলে চার জনের মৃত্যু এবং অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হন। এই সংবাদে সোনম অনশন প্রত্যাহার করেন এবং বিশৃঙ্খলার পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন চালানোর অনুরোধ করেন। তা সত্ত্বেও, ‘জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক’ এমন অভিধা তাঁর উপর চাপিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ)-এ তাঁকে গ্রেফতার করে সরকার। এও এক একুশে আইন। এই আইনের আওতায় ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ এমন সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে দীর্ঘ কাল বিনা বিচারে লৌহ কপাটের অন্তরালে সরকার রাখতে পারে। স্বাধীনতার আগে এবং স্বাধীনোত্তর ভারতে নানা নামে এমনই কালা আইন বলবৎ ছিল, আজও আছে।
দেশের নিরাপত্তা, আইন শৃঙ্খলা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সরকারের হাতে অসীম ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। ফলে কেউ কণ্ঠ তুললেই সরকারের রোষানল থেকে রেহাই পায় না। এমন কালা কানুনে কতটা সুফল মেলে, তা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলি বার বার প্রশ্ন তুললেও আজ পর্যন্ত কোনও সদুত্তর মেলেনি। কারণ কোনও কালেই এর বিরুদ্ধে সংগঠনগুলি একজোট হতে পারেনি। এর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলিও সে ভাবে কোনও দিন সরব হয়নি। ফলে এমন পরিস্থিতিতে একনায়কতন্ত্রী বা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যাঁরা সরব হয়েছেন, তাঁদেরই এ ভাবে বন্দি করা হয়েছে। এ আইনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে গেলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। নয়তো হাই কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত পরামর্শদাতা বোর্ডের উপর আস্থা রাখতে হয়। তিন সপ্তাহের মধ্যে গঠিত কমিটি তাদের মতামত জানায়। সে ক্ষেত্রেও দেখা গেছে প্রায় সিংহভাগ রায় রাষ্ট্রের পক্ষে ধার্য হয়েছে। ভাবার বিষয় হল, এমন আইনের আওতায় নাগরিকের মৌলিক অধিকার বাক্স্বাধীনতাও হরণ করা হয়। আসলে বিরুদ্ধ কণ্ঠস্বরকে দমন করতেই এমন আইনের আশ্রয় নেওয়া। উদাহরণ, অধ্যাপক জি এন সাইবাবা-সহ তাঁর সঙ্গীদের ২০১৪ সালের মে মাসে গ্রেফতার করা হয়। ২০২২ সালে আদালত মুক্তি দিলে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দেয় ফলে তাঁকে জেলেই থাকতে হয়। ২০২৪ সালে আদলতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তেলঙ্গানার সমাজকর্মী অধ্যাপক কবি ভারাভারা রাও-কে ২০১৮ সালে গ্রেফতার করা হয়। জামিনে মুক্ত হলেও এখনও মামলা চলছে।
স্মরণীয়, রাষ্ট্রপুঞ্জ আয়োজিত জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে সোনম ওয়াংচুক অংশগ্রহণ করেছিলেন পাকিস্তানে গিয়ে। সরকার বিষয়টি ভাল ভাবে গ্ৰহণ করেনি। সে কারণেই তাঁকে সরকারের রোষানলে পড়তে হল। এ ভাবেই চিরকাল ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’।
সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪
প্রক্রিয়ায় গলদ
রাজ্যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। পুজোর আগেই তড়িঘড়ি করে বিএলও-দের দিয়ে বর্তমান ভোটার তালিকার সঙ্গে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজ ও পরিবারের নাম ম্যাপিং-এর কাজ নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে করানো হয়েছে। অধিকাংশ বিএলও-র দাবি, এই কাজে তাঁদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। ফলে প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। কেবল নিজের এবং পিতা-মাতার ম্যাপিং করানো হয়েছে মুর্শিদাবাদে। ঠাকুরদার ম্যাপিং-এর উল্লেখ থাকলেও তা করানো হয়নি, হয়নি গৃহবধূদের ম্যাপিংও।
অনেকের ক্ষেত্রে ভোটার তালিকায় নাম সংশোধন কিংবা পরিবর্তন হয়ে গেছে এত দিনে। ডব্লিউবি দিয়ে থাকা এপিক নম্বরও পাল্টে গেছে তাঁদের। অনেকের ক্ষেত্রে পিতার ভোটার তথ্যে নাম এবং নিজের ভোটার তথ্যে পিতার নামের ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। সরেজমিনে বাবা-ছেলের সম্পর্ক দেখা গেলেও কাগজের তথ্য বা নথি দেখিয়ে পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করা যায় না। সেগুলো কী হবে? কী ভাবে ভোটার তালিকায় নাম গৃহীত হয়েছে? প্রশ্ন থাকছে। বাড়ির নম্বরের ভিন্নতাও নজরে পড়ে। বর্তমানে নতুন ভোটারের আবেদন (ফর্ম-৬) অনলাইনে করার সময় বাড়ির নম্বরের জায়গায় গ্রাম বা পাড়ার নাম বসিয়ে দেন আবেদনকারী।
সেই ভাবেই আবেদন গৃহীত হয়ে ভোটার তালিকায় বাড়ির নম্বরের স্থানটি অসঙ্গতিপূর্ণ ও সংযোগহীন হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী কালে এই তথ্যটি সংশোধনের কোনও পদ্ধতি নেই নির্বাচন কমিশনের কাছে। নতুন নাম তুলতে সাধারণ ভাবে বসবাসের প্রমাণ হিসেবে পঞ্চায়েতের শংসাপত্র বা বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি নথি হিসেবে আবশ্যিক করা হোক। বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে নতুন নাম তুলতে বাবার বাড়ির পঞ্চায়েতের শংসাপত্র বা বিবাহের শংসাপত্রও নেওয়া উচিত। সর্বোপরি, সব নথি অনলাইনে আপলোডের ব্যবস্থা রাখা হোক। ব্লক অফিসে ক্যাম্প করে আঙুলের ছাপ বা আধার কার্ড সংযোজন করা হোক প্রত্যেক বৈধ ভোটারের তথ্যের সঙ্গে।
হামিম হোসেন মণ্ডল, ঝাউবনা, মুর্শিদাবাদ
চার্জের সুযোগ
প্রতি দিনই দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ লোকাল ট্রেনে করে যাতায়াত করেন। কিন্তু লোকাল ট্রেনে মোবাইলে বা ল্যাপটপে চার্জ দেওয়ার কোনও জায়গা না থাকায় অনেকেই সমস্যায় পড়েন। তাই লোকাল ট্রেনেও মোবাইল এবং ল্যাপটপ চার্জিংয়ের ব্যবস্থা করা হোক।
তাপস দাস, সিঙ্গুর, হুগলি
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)