Advertisement
২৯ মার্চ ২০২৩
Mental Depression

সম্পাদক সমীপেষু: নিঃসঙ্গ শৈশব

আধুনিক সময়ে শিশুদের একাকিত্ব এবং তার ফলস্বরূপ এক অবসাদগ্রস্ত জীবনে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনা আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি জানি। কিন্তু তার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা কেউ করছি কি?

A photograph of a child sitting on a wall
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:১৫
Share: Save:

ঈশা দাশগুপ্তের ‘হারল কারা, সেটা কিন্তু স্পষ্ট’ (১২-১) শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, জীবনে জিততে গেলে যে কিছু ক্ষেত্রে হারতে হয়, অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, সেটা মানতে আমরা রাজি নই। বর্তমানে মানুষ কিছু শিখতে চায় না, বরং শেখানোতেই যেন বেশি উদ্গ্রীব। আধুনিক সময়ে শিশুদের একাকিত্ব এবং তার ফলস্বরূপ এক অবসাদগ্রস্ত জীবনে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনা আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি জানি। কিন্তু তার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা কেউ করছি কি?

Advertisement

এমন নয় যে, ইদানীং কালে এই বিষয় নিয়ে চর্চা কিছু কম হয়েছে, বা সাধারণ নাগরিক, বিশেষ করে শহুরে নাগরিক এই বিষয়ে সচেতন নন। কিন্তু এই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে মানসিক স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। শুধু আলোচনায় তো আর সমস্যার সমাধান হবে না। সমাধান বার করার উদ্যোগের বড় অভাব। আসলে পেয়ে-যাওয়া সুবিধা ছাড়তে রাজি নয় কেউ। ছোট পরিবারে থাকার যে ব্যবহারিক সুবিধা আমরা ভোগ করছি, তার বিন্দুমাত্রও ত্যাগ করতে আমরা অনাগ্রহী।

শিশুদের অবসাদগ্রস্ততা, আদর্শহীনতা, দিশাহীন জীবনের কারণ বহুলাংশে লুকিয়ে আছে পারিবারিক একাকিত্বের মধ্যে। যে মানসিক পরিচর্যা আগে সহজলভ্য ছিল যৌথ পরিবারে, এখন তা অপ্রতুল। এক সঙ্গে থাকলে এক দিকে যেমন দায়িত্ব, কর্তব্যবোধ গড়ে ওঠে, তেমনই বিপদে একে অপরের পাশে থাকার মতো নির্ভরতাও থাকে, মানসিক বিকাশের পথে যেটা খুবই জরুরি। যৌথ পরিবার ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। পরিত্রাণের উপায় কী? টিভি চ্যানেলের প্রলোভন, মুঠোফোনের মাধ্যমে আন্তর্জালের সুবিশাল সাম্রাজ্যের আনন্দ লাভের লোভ সামলে, সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের সময় কাটানোই একমাত্র পথ। শিশুর মানসিক বিকাশ সঠিক না হলে ইঁদুর দৌড়ে ব্যর্থ হলেই সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়তে চায়। জীবনযুদ্ধে জয়ের সঙ্গে পরাজয় সম্বন্ধে সম্যক ধারণা, এবং তার মুখোমুখি হয়ে প্রয়োজনে নিরুত্তাপ ভাবে পরাজয়কে স্বীকার করতে না পারলে হেরে যাওয়াই ললাট লিখন।

সুরজিত কুন্ডু

Advertisement

উত্তরপাড়া, হুগলি

গল্প শুনুক

‘হারল কারা, সেটা কিন্তু স্পষ্ট’ প্রবন্ধটি একটি বাস্তব সমস্যাকে তুলে ধরেছে। ‘লোনলিনেস এপিডেমিক’ সারা বিশ্বেই জ্বলন্ত সমস্যা। শহরাঞ্চলে এখন বেশির ভাগ দম্পতির একটা করে সন্তান, এবং তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে ফ্ল্যাটে বাস করে। যেখানে দাদু-ঠাকুমার উপস্থিতিই বিরল, তো কাকু-কাকিমা, জেঠু-জেঠিমার উপস্থিতি একান্ত অসম্ভব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মাসি-পিসি, মামা, কাকু-জেঠু— এই শব্দগুলি অপ্রচলিত হয়ে যাবে, সুতরাং তুতো ভাই-বোনের সম্পর্কটাও শেষ হয়ে যাবে। দাদু-ঠাকুমা হয়তো বৃদ্ধাশ্রমে, ফ্ল্যাটতুতো কাকিমা-জেঠিমাও অচেনা, সুতরাং শিশুদের নিঃসঙ্গতা বাড়বে। তাদের সঙ্গী হবে কেবলমাত্র একটি মুঠোফোন। তৈরি হবে কিছু আত্মকেন্দ্রিক ‘কেরিয়ারিস্ট’। নেশার রমরমা বাড়বে, কেউ কেউ আবার হারিয়েই যাবে চিরতরে। আমরা অবিভাবকরাই কি এই পথ তৈরি করে দিচ্ছি না? তাঁদের ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেলিং’-এর শিকার হয়ে অনেক সন্তান করুণ পরিণতি বেছে নেয়।

মুঠোফোন হাতে না দিয়ে শিশুদের গল্প শোনানো, বা গল্পের বই দেওয়া জরুরি। প্রতিটি স্কুলে মনোবিদ দরকার, যাঁরা সামান্য অসঙ্গতি দেখলে অভিভাবকদের সচেতন করবেন। সব শেষে, শিশুদের বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করে যে সব ‘রিয়্যালিটি শো’, সেগুলি বন্ধ করা প্রয়োজন। এমনকি এখন শিশুসন্তানের খাওয়ার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দিয়ে বাবা-মায়েরা অর্থ রোজগারের কাজে শিশুদের যে ভাবে ব্যবহার করছেন, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। শিশুরা শৈশব হারাচ্ছে, তা তাঁরা বুঝতেও পারছেন না।

দেবযানী চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা-৮৬

স্বেচ্ছাসেবক

কর্মীর অভাবে রাজ্যের সরকার পোষিত বহু গ্রন্থাগারের ঝাঁপ বন্ধ হওয়া ঠেকাতে বিনে মাইনের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল রাজ্য সরকার (‘গ্রন্থাগারে বেতনহীন স্বেচ্ছাসেবক’, ১২-১)। সংবাদটির শিরোনাম চোখে পড়তেই খটকা লাগে। স্বেচ্ছাশ্রম তো সাধারণত আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে সম্পর্কহীন হয়ে থাকে। তা হলে ‘বেতনহীন স্বেচ্ছাসেবক’-এর কথা আসে কী করে? শহর কি গ্রাম, আশপাশের গ্রন্থাগারগুলিতে ঢুঁ মারলেই জানা যাবে, সেগুলি চলছে কিছু বিদ্যানুরাগীর অকৃত্রিম ভালবাসার যষ্টিতে ভর দিয়ে। এই সরকার মেলা-খেলা, কি পুজো-মোচ্ছবে দেদার টাকা ঢালতে পারে। গ্রন্থাগার চালানোর সময়েই কেবল ‘শূন্য ভাঁড়ার’-এর কুমিরছানা তুলে ধরা হয়। আজ এক বিরাট সংখ্যক সরকার পোষিত গ্রন্থাগারে ঝাঁপ খোলার লোক নেই। আরও বহু দরজা বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায়। সরকার পোষিত গ্রন্থাগার থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পুনর্নিয়োগ করলেও কম-বেশি পারিশ্রমিক দিতেই হবে। কিন্তু সরকার চাইছে পুরোপুরি ‘নিখরচা’-র ব্যবস্থা। স্বেচ্ছাসেবকেরা আগেও বেতনহীন ছিলেন। প্রস্তাবিত ব্যবস্থাতেও তা-ই থাকবেন। দুয়ের মধ্যে তফাতটা হল, ‘নিয়োগ’ করার মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকদের একটা ন্যূনতম প্রশাসনিক আওতার মধ্যে নিয়ে আসতে চায় সরকার। ঠিক নিয়মিত চাকরির কাছি নয়, একটা সুতোর বন্ধন। দীর্ঘ দিন থেকে রাজ্যের গ্রন্থাগারগুলি কর্মী-স্বল্পতায় ভুগছে। যাঁরা গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠ নিয়ে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছেন, তাঁরা হয়তো এই তৃণখণ্ড আঁকড়ে ধরবেন এই ভরসায় যে, হয়তো স্থায়ী নিয়োগের সময়ে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ঠিক যেমন আশ্বাসে কলেজে আংশিক সময়ের শিক্ষক, স্কুলে পার্শ্বশিক্ষক বা সিভিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রন্থাগারগুলিতে স্থায়ী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তার আগে ‘শূন্যতা-ঠেকানো’র ব্যবস্থা হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ। স্থায়ী পদ পূরণের আগে আপাত-নিয়োগের এমন উদাহরণ অভিনব।

রাজ্যের ২৩টি জেলার গ্রামীণ গ্রন্থাগারে ৭৩৮টি গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগের জন্য অর্থ দফতরের স্বীকৃতি পাওয়া গিয়েছিল প্রায় দু’বছর আগে। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। উপযুক্ত যোগ্যতা নিয়ে হাজার হাজার প্রার্থী বেকার বসে আছেন। বাহিনীর কলেবর প্রতি বছর বাড়িয়ে চলেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরোনো বিরাট সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী। অথচ, শূন্য পদের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। গ্রন্থাগার ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে যোগ্যতা অনুসারে তাঁদের নিযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। প্রস্তাবিত ‘বেতনহীন স্বেচ্ছাসেবক’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গ্রন্থাগারে স্থায়ী নিয়োগের সম্ভাবনা আরও সুদূরপরাহত হবে। এই সিদ্ধান্ত এক দিকে যেমন শিক্ষা ও সচেতনতার যাত্রাপথে এক বিশাল ফাটল, অন্য দিকে তা দীর্ঘ দিন অপেক্ষারত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে গভীর হতাশা সৃষ্টি করবে।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি

শ্রীরামপুর, হুগলি

নাম নয়, পদ

‘খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পও নাম বদলে এ বার প্রধানমন্ত্রীর নামে’ (১২-১) শিরোনামটি বিভ্রান্তিমূলক। মনে হতে পারে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের সঙ্গে নিজের নামটি জুড়ে দিয়েছেন। কার্যত ঘটেছে ঠিক উল্টো। অতীতে বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রীদের (একটি বিশেষ পরিবারের) নাম যুক্ত ছিল, মোদী সেগুলিকে নামের ভার থেকে মুক্ত করেছেন। ‘প্রধানমন্ত্রী’ একটি সাংবিধানিক পদ, নরেন্দ্র মোদী চিরকাল প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না। তাই প্রকল্পগুলির নামের সঙ্গে ‘প্রধানমন্ত্রী’ শব্দটি জুড়ে দিলে তা কখনওই প্রধানমন্ত্রীর ‘নামের সঙ্গে’ জুড়ে দেওয়া হয় না।

জয়দীপ দত্ত

কলকাতা-১০

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.