‘বাঙালি তবু নিশ্চুপ, উদাসীন’ (৬-৪) শীর্ষক নিবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাঙালি তো ইদানীং এমনই; সিলেক্টিভ প্রতিবাদে অভ্যস্ত।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা শিল্পীর স্বাধীনতা যে এই প্রথম লঙ্ঘিত হল তা-ও নয়। এই ছবি বন্ধের প্রতিবাদে যাঁরা আজ পথে নেমেছেন, তাঁদের মধ্যে এক বিশেষ রাজনৈতিক শিবিরের লোকজনও আছেন, যাদের ৩৪ বছরের রাজত্বকালেই তসলিমা নাসরিনকে এক রাতের মধ্যেই এ রাজ্য থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল। তাঁর বই নিষিদ্ধ হয়েছিল এদের হুকুমেই। সে জমানায় অন্তত দু’টি নাটক ও একটি সিনেমাও সরকারি বিরূপতার সম্মুখীন হয়েছিল। তখন কিন্তু ওই শিবির নিশ্চুপ নিষ্ক্রিয় উদাসীন ছিল, এ সত্য। ঠিক যেমন বাধাপ্রাপ্ত ওই নাটক দু’টির নির্দেশকদ্বয় এখন নীরব থাকাই শ্রেয় মনে করছেন।
ক্ষমতা চিরকালই প্রতিস্পর্ধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে চায়, সে ক্ষমতা যদি এক সময়ের প্রতিবাদের প্রতীক হয়, তবুও। ক্ষমতাই বোধ হয় ব্যক্তির এমন রূপান্তর ঘটায়। আদর্শের আড়ালে সব শাসকের অন্তরের রূপ একই— এ প্রতীতি তা হলে ভ্রান্ত নয়!
আজ যাঁরা কিছু প্রাপ্তির আশায় বা কিছু হারানোর আশঙ্কায় কিংবা নিছক ভয়েই নিশ্চুপ, তাঁরা হয়তো সাময়িক ভাবে বিস্মৃত যে স্বাধীনতা অবিভাজ্য, মতপ্রকাশের অধিকারও। কিন্তু এই নিশ্চুপ থাকা আসলে যে কিছু দেয় না, বরং ন্যুব্জ করে শিরদাঁড়া, এ আর কবে বুঝব!
শান্তনু রায়
কলকাতা-৪৭
সেই ডাকাতেরা
হুমায়ুন কবিরের ‘শাঁজুর মোড়’ (রবিবাসরীয়, ২১-৪) গল্প প্রসঙ্গে বলি, সাজুর মোড় বা সাজির মোড় হয়তো-বা ‘শাঁজুর মোড়’ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের (কলকাতা-শিলিগুড়ি জাতীয় সড়ক) উপর অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাসস্টপ। এখানে নেমে ঐতিহাসিক স্থান সুতি অথবা নিমতিতা রাজবাড়ি সরাসরি যাওয়ায় যায়। সত্যজিৎ রায় এই নিমতিতা রাজবাড়িতে ‘জলসাঘর’, ‘তিনকন্যা’ ও ‘সমাপ্তি’ ছবির চিত্রগ্রহণ করেন।
জমিদার জ্ঞানেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর কন্যার বিবাহে কাজী নজরুল ইসলাম নিমতিতায় বরযাত্রী হিসেবে এসেছিলেন। সেখানে তিনি যোগীরাজ বরদাচরণকে প্রত্যক্ষ করেন। পরবর্তী কালে তিনি বরদাচরণের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
নবাব মিরকাশিমের আমলে ‘সুতি’র যুদ্ধ সম্বন্ধে আমরা সকলেই অবগত। এই সুতি বা ঔরঙ্গাবাদ বা ধুলিয়ান বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক মানচিত্রে একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য স্থান। ঔরঙ্গাবাদ-ধুলিয়ান হল বিড়ি শিল্পের পীঠস্থান।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লেখ্যাগারের সংরক্ষিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের সিআইডি শাখার বিভিন্ন নথি থেকে এই এলাকার ডাকাত সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানা যায়। অঞ্চলটি মুর্শিদাবাদ জেলার সমসেরগঞ্জ থানা এলাকার অন্তর্গত। ১৯২০-৪০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে বিভিন্ন ডাকাত দল ভীষণ সক্রিয় ছিল।
উল্লেখযোগ্য ছিল— ভাসাই পাইকরের ডাকাত দল (যার সদস্য সংখ্যা ছিল ১৯২ জন, এরা ৭২টি ডাকাতি করেছিল), রহমত পাইকরের ডাকাত দল, ভবানীপুর-তোফাপুরের ডাকাত দল (সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৯ জন)। এই সমস্ত ডাকাত দলের সদস্য ছিল মূলত নিম্ন-হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোক।
হুমায়ুনবাবুর গল্পে উল্লিখিত সাজিরুল বা কার্তিক ডাকাত হয়তো এই রকম কোনও দলের সদস্য। এদের ডাকাতির কর্মকাণ্ড ধুলিয়ান, ঔরঙ্গাবাদ, মালদহ জেলার কিয়দংশ, বিহারের বারহারওয়া ও পাকুড় (বর্তমান ঝাড়খণ্ড) অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
সাজিরুল বা শাঁজু, থানার বড়বাবুর বদান্যতায় বা পরামর্শে ডাকাতি ছেড়ে বাদশাহি রোডের ধারে চা-তেলেভাজার দোকান করে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে এসেছিল। সাজিরুল এবং তার স্ত্রী আসিয়া বিভিন্ন তথ্য থানায় সরবরাহ করত। ধীরে ধীরে সমগ্র অঞ্চলটিতে ডাকাতদের উপদ্রব কমে যায়। সাজিরুলের নামানুসারে এই অঞ্চলটি কালক্রমে সাজির মোড় বা সাজুর মোড় নামে পরিচিত হয়।
(তথ্যসূত্র: ধুলিয়ান ইতিবৃত্ত, সুমিত ঘোষ। ‘লিস্ট অফ অ্যাক্টিভ ড্যাকইট গ্যাং ইন বেঙ্গল ১৯৩০, সিআইডি নম্বর ৩০৮, ৩১৩, সিআইডি রেকর্ডস, গভর্নমেন্ট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল)।
সুমিত ঘোষ
লেখ্যাগারিক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লেখ্যাগার, কলকাতা-৭৩
অবদানের কথাই
পথের পাঁচালী উপন্যাসের চিত্রস্বত্ব বিষয়ে দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের লেখা চিঠির (‘চিত্রস্বত্ব’, সম্পাদক সমীপেষু, ২৬-৪) উত্তরে জানাই, এ নিয়ে আমি আমার প্রতিবেদনে (‘তিনি ছিলেন ভারতীয় সিনেমার...’, পত্রিকা, ৬-৪) যা লিখেছিলাম, তা দেবকীবাবুর পুত্র চলচ্চিত্রকার দেবকুমার বসুর থেকে পাওয়া। এই ছবির চিত্রস্বত্ব কেনা নিয়ে পত্রলেখক যা জানিয়েছেন, তা সকলেরই জানা। সত্যজিৎ রায়, অনিল চৌধুরী, চণ্ডীদাস চট্টোপাধ্যায়ের লেখাও আমি পড়েছি। ঘটনাটি নিয়ে সমসাময়িক পত্রপত্রিকা ও ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভের মনোগ্রাফটি পড়ে চিত্রস্বত্ব কেনা নিয়ে জটিলতার পুরো ছবিটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়।
সত্যজিৎ চিত্রস্বত্ব না কিনেই ‘পথের পাঁচালী’র শুটিং শুরু করে দেন, যদিও রমাদেবীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। সেই সময়ের নিরিখে এটা খুব অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। প্রযোজকের সন্ধানে সত্যজিৎ রায় ও অনিল চৌধুরী ‘কল্পনা মুভিজ়’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা নিজেরাই দেবকীকুমার বসুকে দিয়ে ছবিটি করবে বলে উদ্যোগী হয়। রমাদেবীর সঙ্গে কথাও বলে। দেবকীকুমার বসুর কাছে প্রস্তাব রাখা হয়। দেবকীবাবু রাজি হন। এ খবর পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন সত্যজিৎ দেবকীকুমারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি সব শুনে কল্পনা মুভিজ়ের উদ্যোগ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালী’র চিত্রস্বত্ব কেনেন।
‘পথের পাঁচালী’র চলচ্চিত্রায়ন সম্ভব হওয়ার নেপথ্যে দেবকীবাবুরও যে অবদান ছিল, প্রতিবেদনে সেটাই উল্লেখ করা হয়েছে। সেই কারণে সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালী’র বিশেষ শো-তে দেবকীবাবুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, এবং ছবি দেখে এক জন আচার্যের মতো দেবকীবাবু মন্তব্য করেছিলেন “পরাজয় যে এত মধুর তা আমি জানতাম না।” এই ঘটনার কথা দেবকুমার বসুর স্মৃতিতে
আজও উজ্জ্বল।
সুদেষ্ণা বসু
কলকাতা-৫৪
আপডেট
‘হালনাগাদ’ (১০-৪) শীর্ষক চিঠিতে, ‘আপডেট’, ‘আপডেটেড’ ইত্যাদি শব্দের বাংলা কী হতে পারে, তা নিয়ে লেখা হয়েছে। আপডেট হল আপ টু ডেট করা। বাংলা অনুবাদে ‘অদ্যায়ন’, আপডেটেড হল ‘অদ্যায়িত’। একটু স্বাধীনতা নিলে নিপাতনে অদ্যয়িত, অদ্যয়ন শ্রুতিসুখকর। ‘হালতামামি’ আর ‘হালফেরত’ শব্দ দু’টিতে, একটিতে হাল অর্থ ‘বর্তমান’, অন্যটিতে ‘অবস্থা’। আপডেট মানে কিন্তু সম্ভাব্য সর্বশেষ তারিখের নবীকরণ।
তুষারকান্তি চৌধুরী
উত্তরপাড়া, হুগলি
জলকষ্ট
এই প্রখর গ্রীষ্মে হাওড়া ডোমজুড়ের মাকড়দহ-১নং গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষজন দীর্ঘ দিন যাবৎ তীব্র জলকষ্টের শিকার। বার বার পঞ্চায়েতে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোনও সুরাহা হয়নি। এলাকার মানুষ টাইমকলের জন্য পঞ্চায়েত অফিসে সাত হাজার টাকা করে জমা করার পর, দিনকয়েকের জন্য টাইমকলে জল পেয়েছিলেনে। বর্তমানে ৭ মাস তাঁরা নির্জল।
রমা বন্দ্যোপাধ্যায়
ডোমজুড়, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy