Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: আশ্চর্য চিড়িয়াখানা

‘‘একস্থানে সিংহের স্ত্রীপুরুষ দুই আছে তাহার বয়স দেড় বৎসর সে পাণ্ডুবর্ণ নির্ম্মল শরীর তাহার লাঙ্গুল গোলাঙ্গুলাকৃতি কিন্তু অতিশান্ত যাহারা আহারাদি দেয় তাহাদের কথানুসারে সে চলে। ছোট২ চারি পাঁচ ব্রাঘ্র আছে তাহার মধ্যে একটা ব্রাঘ্র সে খোলসা ও মনুষ্যের দ্বেষ করে না ও সে মনুষ্যের মত খাটে শয়ন করে ও লোক নিযুক্ত আছে তাহাকে বাতাস করে।’’

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

‘এশিয়ার প্রথম চিড়িয়াখানা’ (রবিবাসরীয়, ২০-১) নিবন্ধে অমিতাভ কারকুন ১৮৩১ সালে ‘সমাচার দর্পণ’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানার জন্তুজানোয়ারদের বিষয়ে বর্ণনা দিয়েছেন উদ্ধৃতি সহকারে। ১৮৩১ নয়, প্রতিবেদনটি ‘সমাচার দর্পণ’-এ প্রকাশিত হয়েছিল ২৫ অগস্ট ১৮২১ (১১ ভাদ্র ১২২৮) সালে। সেখানে সেই সময় ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের বিষয়ে আরও কিছু বিবরণ দেওয়া হয়েছিল।

‘‘একস্থানে সিংহের স্ত্রীপুরুষ দুই আছে তাহার বয়স দেড় বৎসর সে পাণ্ডুবর্ণ নির্ম্মল শরীর তাহার লাঙ্গুল গোলাঙ্গুলাকৃতি কিন্তু অতিশান্ত যাহারা আহারাদি দেয় তাহাদের কথানুসারে সে চলে। ছোট২ চারি পাঁচ ব্রাঘ্র আছে তাহার মধ্যে একটা ব্রাঘ্র সে খোলসা ও মনুষ্যের দ্বেষ করে না ও সে মনুষ্যের মত খাটে শয়ন করে ও লোক নিযুক্ত আছে তাহাকে বাতাস করে।’’

‘‘...গর্দ্দভের আকার এক বড় ঘোড়া আছে সে পীত বর্ণ ও দেখিতে অতি সুন্দর লোকে কহে যে ঐ ঘোড়া এক দিনের মধ্যে পঞ্চাশ ক্রোশ চলিতে পারে কিন্তু কেহ কদ্যাপি তাহার উপরে সওয়ার হয় নাই। এবং তিন চারি পাঁচ ভালুক ও দুই তিন প্রকার বানর ও দুই তিন প্রকার বিড়াল আছে। ...নবহলন্ডীয় একপ্রকার হং‌স আছে সে নীল বর্ণ এ তাহার ওষ্ঠ রক্তবর্ণ ও সে অতি মনোহর আর নূতন২ অনেক২ প্রকার পক্ষী আছে তাহার নাম সকল জানা নাই।’’

ব্যারাকপুরের এই চিড়িয়াখানার একটি ঘটনার কথা প্রকাশিত হয়েছিল ১৫ জানুয়ারি ১৮৪৬ সালে, ‘ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়া’ পত্রিকায়। এক বার চিড়িয়াখানার একটি বাঘ দারোয়ানের নজর এড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে উদ্যান থেকে। দু’তিনটে ষাঁড়কে মেরে সে ঢুকে পড়ে ডেপুটি গভর্নরের ঘোড়ার আস্তাবলে। কিন্তু সেখানে সে একটি ঘোড়ার লাথি খায়। শেষে মালি তাকে গুলি করে।

লর্ড ওয়েলেসলি নির্মিত এই চিড়িয়াখানাটি যে সেই সময় কতখানি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল তার বিবরণ পাওয়া যায় সেই সময়ের বিভিন্ন ব্যক্তির লেখার মধ্যে। ১৮২২ সালে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে বেড়াতে এসেছিলেন ফ্যানি পার্কস। তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্তে ব্যারাকপুরের এই চিড়িয়াখানাটির বিবরণ দেওয়া আছে। সেই সঙ্গে উল্লেখ করা আছে লাটবাগানের বাগানবাড়ি, সেখানকার ঘোড়াদৌড়ের অনুষ্ঠানে কলকাতার লোকজনদের সমাগমের কথা, প্রচুর অর্থ ব্যয়ে লেডি আর্মহাস্টের জাঁকজমকপূর্ণ বাজি পোড়ানোর উৎসবের বিবরণ ইত্যাদি।

১৮২০ সালে আঁকা একটি চিত্র থেকে জানা যায় ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানায় হাতির পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন গভর্নর জেনারেল ও তাঁদের অতিথিরা। ১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক চিঠিতে লর্ড ডালহৌসি লিখছেন, ‘‘গঙ্গার তীরে পার্ক পরিবেষ্টিত সুন্দর মনোরম মাঠ, সুন্দর বাগান, পক্ষিশালা, পশুশালা আমার দেশকে মনে করিয়ে দেয়।’’

বস্তুত বিলেতের অভিজাত বংশের সন্তান লর্ড ওয়েলেসলি চেয়েছিলেন তাঁর স্বপ্নের ব্যারাকপুর হয়ে উঠুক ইংল্যান্ডের ক্ষুদ্র সংস্করণ। কলকাতা থেকে যাতায়াতের সুবিধার জন্য তিনি শ্যামবাজার থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত শুধু রাস্তা (বর্তমান বিটি রোড) তৈরি করেই ক্ষান্ত হননি, তার সৌন্দর্যায়নের জন্য রাস্তার দুই ধারে তিনি সারি সারি গাছ লাগিয়েছিলেন।

ব্যারাকপুর যাওয়ার সময় লাটসাহেব যখন কলকাতার গভর্নর হাউস থেকে রওনা দিতেন, তখন সঙ্কেতের মাধ্যমে তাঁর আগমন বার্তা জানিয়ে দেওয়া হত পথের বিভিন্ন স্থানে। কলকাতার গভর্নর হাউস থেকে পতাকা উড়িয়ে সঙ্কেত দেওয়া হত পাইকপাড়া টাওয়ারকে, সেখান থেকে সুখচর টাওয়ার হয়ে সঙ্কেত পৌঁছে যেত ব্যারাকপুর লাটভবনে।

কলকাতার গভর্নর হাউসের নির্মাণ শেষ করেই লর্ড ডালহৌসি ব্যারাকপুরে প্রায় দু’লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু এই কাজে কোম্পানির অনুমতি না নেওয়ার ফলে তিনি কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরদের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন ও ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। শেষে ১৮৫০ সালের জুলাই মাসে গভর্নরের পদ ত্যাগ করে ওয়েলেসলি দেশে ফিরে যান।

পরবর্তী গভর্নর হিসেবে লর্ড কর্নওয়ালিস দ্বিতীয় বার কার্যভার গ্রহণ করার পরে এই একতলা অসমাপ্ত ভবনটিকে ভেঙে ফেলা হয়। এই নির্মীয়মাণ ভবনটির উত্তর-পূর্ব দিকে লর্ড ওয়েলেসলি আরও একটি অস্থায়ী ভবন নির্মাণ করেছিলেন। এই ভবনটিই বিভিন্ন সময়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে ধীরে ধীরে লাটভবন হিসেবে গড়ে ওঠে।

রাহুল বড়ুয়া

কলকাতা-৭৪

দৃঢ় দ্বিজেনবাবু

সদ্যপ্রয়াত দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ছিলেন এক দৃঢ়চেতা সঙ্গীতশিল্পী। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করি।

সত্তরের দশকে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে দ্বিজেনবাবু গান গাইতে বসে শুরু করলেন একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। দ্বিতীয় গানটিও রবীন্দ্রসঙ্গীত হওয়াতে ছাত্রদের মধ্যে চাপা গুঞ্জন। দ্বিজেনবাবু গানটি থামিয়ে বললেন, এর পরেই আমি আধুনিক গান গাইব, আপনারা শান্ত হয়ে বসুন। কিন্তু কিছু ছেলে চিৎকার করে বললেন, না না, কোনও বাংলা গানের প্যানপেনানি চলবে না, হিন্দি গান করুন। দ্বিজেনবাবু আবার বাংলা গান শুরু করতেই, দর্শকাসন থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি।

দ্বিজেনবাবু গান থামিয়ে বললেন, আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইতে এসেছি। এখানে রবীন্দ্রসঙ্গীত আর বাংলা আধুনিক গানই গাইব। যাঁদের শুনতে ভাল লাগবে না, তাঁরা বাইরে চলে যান। আর না হলে আমিই চলে যাব আপনাদের টাকা ফেরত দিয়ে।

এর পর দ্বিজেনবাবু আধুনিক আর রবীন্দ্রসঙ্গীত মিলিয়ে প্রায় ১৮-২০টা গান গেয়েছিলেন নির্বিঘ্নেই। কয়েক জন মাত্র শ্রোতা তাঁর ঘোষণার পর বাইরে বেরিয়ে গেলেও, অধিকাংশ আসনই পূর্ণ ছিল।

হৃষীকেশ বসাক

কাঁকসা, পশ্চিম বর্ধমান

সেই ট্র্যাডিশন

‘‘ক্লান্তি নিয়েও ‘ট্রিপ’-এ চালক, নজরদারির দায় নিয়ে ঠেলাঠেলি’’ (১১-১) নিবন্ধের প্রেক্ষিতে দু’টি ঘটনা বলি। চাকরির জন্য আমায় প্রায়ই কলকাতা থেকে মালদহ যাতায়াত করতে হত। এক বার স্টেট ট্রান্সপোর্টের সরকারি বাস রাত দশটায় এসপ্লানেড ডিপো থেকে ছেড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা পর কৃষ্ণনগরে বিশ্রামের জন্য দাঁড়াল। চা-জল ইত্যাদি পর্ব সেরে, বাস আবার ছেড়ে দিল। এর পর কিছু ক্ষণের মধ্যেই বহরমপুর শহরে বাস ঢুকছে, বাস ডিপোতে দাঁড়াল না, টেনে চলল। যাত্রীরা অধিকাংশই তখন নিদ্রামগ্ন। প্রায় ঘণ্টাখানেক চলার পরে বোঝা গেল, আমরা আবার কৃষ্ণনগর শহরে প্রবেশ করছি। যারা ঘুমোইনি, তারা হইহই করে নিদ্রামগ্ন যাত্রীদের জাগিয়ে তুললাম। চালক ও পরিচালক উভয়েরই বোধ হয় নিদ্রাদেবীর উপাসনায় ব্যাঘাত ঘটল। বাস দাঁড়াল, আলো জ্বলে উঠল। চালক ও পরিচালকের মধ্যে একে অপরকে দোষারোপ করে বাদানুবাদ শুরু হল। বোঝা গেল, বহরমপুর থেকে ফরাক্কা যাওয়ার আগে অর্ধেক টার্ন নেওয়ার সময় ভুলক্রমে পুরো টার্ন নেওয়াতেই এই বিপত্তি। এও জানা গেল, চালক দিনের ট্রিপ শেষ করে আবার রাতের ট্রিপে লম্বা সফরের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়েছেন।

আর এক বার, পুজোর সময় ভোরবেলা গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়েছি সপরিবার ঠাকুর দেখতে। উত্তর কলকাতায় কিছু ঠাকুর দেখার পর দক্ষিণ কলকাতায় যাওয়ার বাসনা জানাতেই, চালক মুখ ভার করে বললেন, তিনি ও দিকটা ভাল চেনেন না। বলেকয়ে, নিয়ে চললাম। প্রতিটি প্যান্ডেলে আমাদের নামিয়ে দিয়ে চালক দূরে ফাঁকা জায়গায় গাড়িটি নিয়ে রাখছেন এবং মোবাইল ফোনে ডাকলে প্যান্ডেলের সামনে আসছেন। কিন্তু মাঝে মাঝেই ফোনে সাড়া দিচ্ছেন না। খুঁজেপেতে দেখা গেল, তিনি গাড়ির ভিতর ঘুমোচ্ছেন। জিজ্ঞেস করে জানা গেল, রাতভর গাড়ি চালিয়ে ঠাকুর দেখিয়েছেন এবং তার পর আবার আমাদেরও দেখাতে বেরিয়েছেন।

শ্যামল গুহরায়

কলকাতা-৭৪

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Zoo India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE