রাজকুমার চক্রবর্তী তাঁর ‘সবাই এখন ইতিহাসবোদ্ধা’ (১৯-১১) প্রবন্ধে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, সে সম্পর্কে দু’-চার কথা। এটা ঠিক যে, বর্তমানে সমাজমাধ্যমে এমন বেশ কয়েক জনকে দেখা যায়, যাঁরা অবলীলায় সমস্ত বিষয়ে মন্তব্য করেন এবং অন্য কারও মতের বিরোধিতা করতে গিয়ে অশালীন ভাষায় ব্যক্তি-আক্রমণ করতেও দ্বিধা করেন না। এঁদের জ্ঞানের পুঁজি হল, প্রবন্ধে উল্লিখিত ‘সামাজিক স্মৃতি’, যা গড়ে উঠেছে জনশ্রুতি, লোককথা, জনপ্রিয় চলচ্চিত্র, চায়ের দোকানের আড্ডা, ওয়টস্যাপ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে। গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন চর্চার সেখানে প্রবেশ নিষেধ।
সবাই সব কিছু জানবে বা সব বিষয়ে পারদর্শী হবে, এমনটা সম্ভব নয়। কোনও কিছু না জানার মধ্যে লজ্জা বা কুণ্ঠা থাকারও প্রয়োজন নেই। জানার জন্য পৃথিবীর বিশাল জ্ঞানভান্ডার সবার জন্য সব সময়েই উন্মুক্ত রয়েছে। কিন্তু না জেনে সব বিষয়ে আলটপকা মন্তব্য করা চিন্তার দৈন্যকেই প্রকাশ করে। অনস্বীকার্য যে, সমাজমাধ্যমের বেশ বড় অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রের বকলমে শাসক দলের আইটি সেল। তাই রাষ্ট্রের নামে শাসক দল যা চায়, তারা জনগণকে সেই রকম জানতে উদ্বুদ্ধ করে এবং দিনের শেষে তেমনই জানতে বাধ্য করে। শাসক দল অবশ্যই চাইবে নাগরিকের উপর দলের প্রভাব গভীর থেকে গভীরতর হোক এবং সেই হেতু চলে শাসক দলের নিজস্ব বক্তব্য ও মতাদর্শের অবিশ্রান্ত প্রচার।
সমস্যা হল, এর মাধ্যমে অনেক মিথ্যা কথাও সত্য বলে প্রতিভাত হয়। বর্তমানে এ দেশে প্রতি দিন টিভিতে চলা ধারাবাহিক কিংবা চলচ্চিত্রের বিষয় হিসেবে সনাতন ধর্ম অথবা ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কহীন দেশপ্রেমের আধিক্য তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। সেখানে বাস্তবতার নিরিখে নয়, ধর্মের আবেগের সঙ্গে দেশপ্রেমের মশলা মিশিয়ে, কাল্পনিক দেশনায়ক তৈরি করে, তথ্যভিত্তিক ইতিহাস বিসর্জন দিয়ে মনের মতো ইতিহাস তৈরি করাই এখন সাধারণ প্রবণতা। বলা বাহুল্য, এ এক মারাত্মক প্রবণতা।
ইতিহাসকে জানতে গেলে নিরবচ্ছিন্ন তথ্যভিত্তিক পাঠই একমাত্র পথ। ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপনা, সাময়িক ভাবে কিছু মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হলেও, আখেরে সত্যই প্রকাশ পায় ও চিরস্থায়ী হয়। প্রতিনিয়ত অসত্য প্রচারকে অপপ্রচার বলা যেতে পারে, কিন্তু তা ইতিহাস হয় না। বিকৃত ইতিহাস কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বাধ্য।
সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি
নগদের অভাব
বর্তমান ভারতে এক গভীর সঙ্কট ধীরে ধীরে জনজীবনকে গ্রাস করছে— খুচরোর অভাব। বাজারে ১০০ টাকার নীচের খুচরো কাগজের নোট কার্যত অদৃশ্য। ফলে সাধারণ মানুষ প্রতি দিনের লেনদেনে সমস্যায় পড়ছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল লেনদেন, যার কারণে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের অসুবিধা হচ্ছে। নোটবন্দির পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় নগদবিহীন অর্থনীতিকে উৎসাহ দিচ্ছে। মোদী সরকারের দাবি, এতে দুর্নীতি কমবে ও স্বচ্ছ অর্থনীতি গড়ে উঠবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। গ্রামীণ ও দরিদ্র মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই এখনও ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত নন, তাঁরা নগদের উপর নির্ভরশীল। অথচ, ৫, ১০, ২০ টাকার নোট এখন বাজার থেকে প্রায় উধাও। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে ছোট মূল্যের নোট ছাপানো ও বিতরণ হ্রাস পাওয়ায় নগদ প্রবাহ সঙ্কুচিত হয়েছে। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিকশাচালক, হকার, দিনমজুর থেকে নিত্যযাত্রীরা চরম সমস্যায় পড়েছেন।
সরকার বলছে, ডিজিটাল পেমেন্টই ভবিষ্যতের পথ। কিন্তু সেই পথে হাঁটতে গিয়ে মানুষ এখন নতুন ফাঁদে পড়ছেন। ফিশিং লিঙ্ক, ভুয়ো কাস্টমার কেয়ার, ইউপিআই প্রতারণা এখন দৈনন্দিন ঘটনা। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচার থাকলেও, গ্রামীণ মানুষ সেই বার্তা পুরোপুরি বুঝতে না পারায় সাইবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
অর্থাৎ, এক দিকে বাজারে খুচরো টাকার অভাব, অন্য দিকে অনলাইন লেনদেনের ঝুঁকি— ডিজিটাল ব্যবস্থার নিরাপত্তা এখন প্রশ্নের মুখে। দেশে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে দেখা যাচ্ছে, ছোট মূল্যের নোট বাজারে ছাড়া বন্ধ বা সীমিত করা হয়েছে। আরবিআই এই অবস্থাকে ‘ডিজিটাল ব্যবহারের বৃদ্ধি’-র ফল বলে ব্যাখ্যা দিচ্ছে। বাস্তবে এটি সরকারের নগদবিহীন অর্থনীতির কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ, যা কর্পোরেট ও ব্যাঙ্কনির্ভর ব্যবস্থাকে সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু সমাজের নিচুতলার মানুষ, যাঁরা ব্যাঙ্কের বাইরে বা ডিজিটাল ব্যবস্থায় অনভ্যস্ত, পড়ছেন মুশকিলে।
সরকার ও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের উচিত কম মূল্যের নোট পর্যাপ্ত ছাপা ও সরবরাহ নিশ্চিত করা, সাইবার সুরক্ষার পরিকাঠামো জোরদার করা এবং গ্রামীণ মানুষের ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার ঘটানো। না হলে, ‘ডিজিটাল ভারত’-এর জৌলুসের নীচে দেশের আর্থিক বঞ্চনা ও সাইবার শোষণের অন্ধকার আরও গভীর হবে।
পিনাকী মুখোপাধ্যায়, কোন্নগর, হুগলি
দৃষ্টান্ত স্থাপন
মৌপিয়া মুখোপাধ্যায়ের ‘আবার কবে এমন কাঁদব’ (১৫-১১) প্রবন্ধ সম্পর্কে কিছু কথা। মুম্বইয়ে এই প্রথম বার ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতে নিলেন ভারতের মেয়েরা। তাঁরা দেখিয়ে দিলেন, কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও দলগত চেষ্টায় বিশ্বজয়ী হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখেন। তাঁদের এই সাফল্য কেবল খেলাধুলায় নয়, নারীর ক্ষমতায়নেরও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অন্য দিকে, ২৯ অক্টোবর অম্বালা এয়ারবেস থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধজাহাজ রাফালে সওয়ার হন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ওই যুদ্ধবিমানে সওয়ার হয়ে তিনি এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনিই প্রথম রাষ্ট্রপতি, যিনি বায়ুসেনার দু’-দু’টি আলাদা রকম যুদ্ধবিমানে চড়েছেন— ২০২৩-এ অসমের তেজপুরে সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানে সওয়ার হয়েছিলেন। তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, ভারতের মেয়েরা আজ কোনও ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই। রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ এবং হরমনপ্রীতদের সাফল্য দেশের তরুণ প্রজন্মকে আগামী দিনে নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত করবে।
অজয় ভট্টাচার্য, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
নজির
মৌপিয়া মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধের শিরোনাম শুধুমাত্র মহিলাদেরই নয়, সমগ্র ভারতবাসীর মনের কথা। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ক্ষেত্রে মরণপণ লড়াইয়ে দলগত বা একক ভাবে কোনও ভারতীয় ক্রীড়াবিদ যখন বিশ্বজয় করেন, তখন আমরা আবেগতাড়িত হই। তবে টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতীয় মহিলা দলের জয়ের ফলে দেশবাসী, বিশেষত মহিলাদের আবেগ যেন ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। এই আবেগ শুধুমাত্র অধরা বিশ্বকাপ লাভের জন্য নয়, ঘরে-বাইরে সমস্ত বঞ্চনা, উপেক্ষাকে জয় করার।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭
খারাপ সিঁড়ি
বালিগঞ্জে বিজন সেতুর সামনে কর্নফিল্ড রোড ও একডালিয়ার সংযোগ স্থলে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের উপরে ফুটব্রিজের এক দিকে যে চলমান সিঁড়িটি আছে, সেটি বহু কাল বিকল হয়ে পড়ে আছে। কাছেই একটি স্কুল আছে। প্রতি দিন বহু শিক্ষার্থী এই রাস্তা পার হয়। তা ছাড়া, বিজন সেতু দিয়ে প্রতি দিন প্রচুর গাড়ি চলাচল করে। এটি খারাপ থাকায় স্থানীয় মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের রাস্তা পার হওয়া খুবই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
চৈতালী বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-১৯
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)