E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ক্রিকেটের যোদ্ধারা

জাতীয় স্তরে খেলার কোনও সুযোগ তিনি পাননি। তবে তা না পেলেও, ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক স্তরে খেলার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, দেশের জার্সিটাও যাঁর গায়ে ওঠেনি, সেই ক্রিকেটেরই প্রশিক্ষক হয়ে তাঁর মাথায় উঠল বিশ্বসেরার মুকুট।

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৪৪

‘ভেঙেছ দুয়ার’ (৩-১১) শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদগুলিতে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ জয়ের কথা আলোচিত হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে এই চিঠি। আমাদের মেয়েদের এই বিশ্বকাপ জয় এক অসাধারণ কীর্তি।

বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের প্রতিটি খেলায় আমাদের এই মেয়েরা শরীরের সমস্ত শক্তি নিংড়ে দিয়েছেন। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং প্রতিটি ক্ষেত্রে একশো শতাংশ শক্তি দিয়ে গোটা মাঠ দাপিয়েছেন। মাঠে উপস্থিত দর্শকদের সঙ্গে সারা দেশের মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় সে ছবি দেখেছেন আর আনন্দে ফেটে পড়েছেন। কখনও আবার আনন্দে অশ্রু ঝরিয়েছেন। সে দিন দূরদর্শনের পর্দায় যাঁরা ভারতের এই সংগ্রামী মেয়েদের কঠিন পরিশ্রম, নিষ্ঠা, স্বেদ ঝরানোর চলমান ছবি দেখেছি, তাঁরা প্রকৃত অর্থেই ভাগ্যবান। এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হওয়া এক বিরাট প্রাপ্তি। একাগ্রতা, নিষ্ঠা, আন্তরিক তাগিদ ও প্রচেষ্টা থাকলে কোনও ভাবেই যে তাকে দমিয়ে রাখা যায় না, প্রতিভার জাগরণ ঘটবেই তার সাক্ষাৎ প্রমাণ আমাদের দেশের এই বীরাঙ্গনারা আর এঁদের প্রশিক্ষক, ক্রিকেট যোদ্ধা, অমল মুজুমদার। প্রচারবিমুখ, কর্মযোগী মানুষটি প্রশিক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্তির পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে মেয়েদের শুধু অনুশীলন করিয়ে গিয়েছেন। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এই মানুষটিও বঞ্চিত, না পাওয়ার ব্যথায় দীর্ণ।

মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্যদের এই দ্রোণাচার্যের ক্রিকেটে আবির্ভাবের সময়ের ছবিটাও মনে রাখার মতো। নব্বইয়ের দশকে আনন্দবাজার পত্রিকাতেই পড়েছিলাম তাঁর বিশ্বরেকর্ডের খবর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আবির্ভাবেই ২৬০ রান করে ৭৩ বছরের বিশ্বরেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন।

তাঁর সম্বন্ধে সেই সময় আরও অনেকেই তাঁদের অভিমত প্রকাশ করেছিলেন যা আমরা তখন সংবাদপত্রের পাতায় পড়ে আশান্বিত হয়েছিলাম। রবি শাস্ত্রী, কার্সন ঘাউড়ি ও সন্দীপ পাটিল অমলকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। ঘাউড়ি বলে ফেলেছিলেন, “দু’-এক বছরের মধ্যেই ওর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা উচিত। আমি নিশ্চিত অমল জাতীয় দলে খেলবেই।” বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী, অথচ এত দক্ষতা থাকলেও, তাঁকে নিয়ে তখন এত ইতিবাচক প্রশংসাজনক আলোচনা হলেও, তাঁকে বঞ্চিত হতে হয়েছে। জাতীয় স্তরে খেলার কোনও সুযোগ তিনি পাননি। তবে তা না পেলেও, ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক স্তরে খেলার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, দেশের জার্সিটাও যাঁর গায়ে ওঠেনি, সেই ক্রিকেটেরই প্রশিক্ষক হয়ে তাঁর মাথায় উঠল বিশ্বসেরার মুকুট। কিছু না পেলেও এখানেই তাঁর সব কিছু পাওয়া হয়ে গেল।

পথপ্রদর্শক, পরামর্শদাতা, প্রশিক্ষক হিসাবে শান্ত সংযত নিরহঙ্কারী এই মানুষটির নামও ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমরা গর্বিত আমাদের এই সোনার মেয়েদের জন্য, গর্বিত এই মানুষটির জন্য।

অমলকুমার মজুমদার, শিবপুর, হাওড়া

নতুন প্রভাত

ভারতীয় মেয়েদের বিশ্বজয় দেশের ক্রিকেটীয় সংজ্ঞার সঙ্গেই বদলে দিল ঝুরঝুরে সব ধ্যানধারণাকেও। মেয়েদের ক্রিকেটের সূচনা হয় প্রায় আড়াইশো বছরেরও আগে। ১৭৪৫ সালের ২৬ জুলাই ইংল্যান্ডে ব্রেমলে এবং হেমব্লেডন-এর মধ্যে একটি ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে ক্রিকেটে নারীদের প্রথম পদার্পণ। সেই গ্রাম দু’টির গৃহপরিচারিকারা নিজেদের মধ্যে ক্রিকেট খেলেন। উভয় দলেই ছিলেন ১১ জন করে নারী খেলোয়াড় আর ছিলেন দু’জন আম্পায়ার।

১৯৭৩ সালে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয় ‘উইমেন’স ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র হাত ধরে। অপরিষ্কার ডরমেটরি, শৌচালয়ের অভাব, বিদেশ সফরের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ জোগাড় করতে না পারা, ক্রিকেট কিট ভাগ করে খেলা— এই ছিল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের চিত্র। মহিলা ক্রিকেটের উদ্যোগ পর্বের কান্ডারি শান্তা রঙ্গস্বামী থেকে বর্তমানের হরমনপ্রীত-রিচা, সবাই নারী ক্ষমতায়নের পরম্পরাগত ধ্বজাধারী। অনর্গল প্রতিকূলতার আড়াল ঠেলে সূর্য ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই সৃষ্টি বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্ত।

সুদীর্ঘ ৫২ বছরের খরা কাটিয়ে বিশ্বকাপ জয় প্রজন্মের পর প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের এক প্রতীক। মহিলা ক্রিকেটের এই যাত্রা কেবল ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতি নয়, এটি সমাজের সেই পরিবর্তনকেও প্রতিফলিত করে, যেখানে মহিলারা সর্বোচ্চ স্তরে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম।

অমিয় বিশ্বাস, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা

হৃদয়ে আঘাত

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্তের “‘মেয়েদের’ নয়, আজ দিনটা ভারতের” (২-১১) শীর্ষক প্রতিবেদনের পাশে বেরিয়েছিল রঞ্জন পালের ‘মেয়ে কেন? শিশুর মুখে বিষ, ঠাকুমা অভিযুক্ত’ শীর্ষক সংবাদটিও। প্রথম পাতায় পাশাপাশি দু’টি খবর পড়ে স্তব্ধ হয়ে রইলাম। আজও বহু ঘরে চলছে একই ঘটনা। হয় কন্যাভ্রূণ হত্যা, নয়তো শিশুকন্যাকে মেরেই ফেলা হচ্ছে এ ভাবে, অবলীলায়! আমাদের দেশ নাকি আধুনিক মানসিকতায় অনেক এগিয়েছে বলে শোনা যায়, এই তার নমুনা? পুঁথিগত শিক্ষা, ডিগ্রিই তো সব নয়, আগে মনের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হবে।

সুপর্ণা ঘোষ, কলকাতা-৩২

অনুচিত

প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক এবং প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে দু’-একটি কথা বলেছিলেন। তা নিয়ে বহু বিতর্ক চলেছে। কথার চেয়ে কাজকে বেশি গুরুত্ব দেওয়াই ঠিক নয় কি? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি থাকাকালীন ভারতের পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটারদের সমান পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা চালু হয়। বহু প্রশাসক এমন প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা কার্যকর করতে পারেননি, সৌরভের সময়েই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে যা এক মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত। তাঁর সভাপতিত্বকালে মহিলাদের জন্য আইপিএল চালুর উদ্যোগ করা হয়েছিল। যে টুর্নামেন্ট মহিলাদের ক্রিকেটকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে, তার ভিত্তিটি স্থাপন করেছিলেন সৌরভ। সেগুলি কিন্তু ভুলে যাওয়া অনুচিত।

পার্থপ্রতিম মিত্র, ছোটনীলপুর, বর্ধমান

শামি বাদ!

২০২৩ বিশ্বকাপে ভারতকে ফাইনালে তোলার পিছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল তাঁর। মাস কয়েক আগের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় ছিলেন তিনি। অথচ আশ্চর্যজনক ভাবে সেই মহম্মদ শামি-ই কিনা বাদ পড়েছেন গম্ভীর-আগরকরদের নির্বাচিত ভারতীয় দল থেকে! একেবারে যুক্তিহীন ভাবেই ভারতীয় দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে বাংলার পেসারকে। শামিকে দলে না নেওয়ার কারণ হিসাবে নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর জানিয়েছেন, শামির ফিটনেস নিয়ে তাঁদের কাছে নাকি কোনও ‘আপডেট’ নেই! অথচ শামি বাংলার হয়ে রঞ্জি খেলতে নেমে প্রায় ৪০ ওভার বল করে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছেন এবং নির্বাচকদের কড়া জবাব দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নির্বাচিত ভারতীয় ‘এ’ দলেও ব্রাত্য শামি। সেখানেও বিবেচনা করা হয়নি দেশের অন্যতম সফল পেসারকে।

প্রশ্ন উঠছে, শামির মতো এক জন ‘ম্যাচ উইনার’কে দল থেকে ছেঁটে ফেলে কী বার্তা দিতে চাইছেন গম্ভীর-আগরকররা? ঘরোয়া ক্রিকেটে এক দিকে যখন বল হাতে আগুন ঝরাচ্ছেন শামি, তখন তাঁকে জাতীয় দলের ত্রিসীমানায় না রাখার সিদ্ধান্তে ঠিক কী সুবিধা হবে ভারতের?

সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian cricketer Indian Women Cricket team

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy