‘কালীপুজোয় লালজি আর হাতির সঙ্গে’ (রবিবাসরীয়, ৪-১১) পড়ে পুরনো স্মৃতি যেন আবার প্রাণ পেল। আমি এক জন বিজ্ঞানী, হাতি গবেষণার সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত। তালিম পেয়েছি লালজি বড়ুয়া, ইয়ান ডগলাস হ্যামিলটনের মতো প্রবাদপ্রতিম মানুষদের কাছে। নিয়মিত যাতায়াত ছিল উত্তর বাংলায় লালজির দুই ক্যাম্প ‘মূর্তি’ ও ‘বামনপোখরি’তে। ‘মাটিয়াবাগ’ প্যালেসের (গৌরীপুর, অসম) গোলঘরে বসে হাতির পাঠ নিয়েছি অনুগত ছাত্র হয়ে। সেখানে কখনও উপস্থিত পারু (পার্বতী বড়ুয়া), কখনও ফুচুদি (সঙ্গীতশিল্পী প্রতিমা বড়ুয়া), আবার কখনও জেঠিমা (শ্রীমতী বীণা বড়ুয়া)। ধৃতি (ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী) লালজিদের পারিবারিক বন্ধু। বড়ুয়া পরিবারের অন্ধিসন্ধি ওঁর জানা। এমন একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য দীপকান্ত লাহিড়ী চৌধুরীকে ধন্যবাদ। তবু বলতেই হচ্ছে কিছু তথ্যগত চ্যুতির কথা। যেমন রাজা প্রভাত বড়ুয়ার তিন ছেলের মধ্যে লালজি মেজো, তাই মেজো রাজকুমার, ছোট নন। ‘আস্তাবল’ ঘোড়া থাকার জায়গা। হাতি থাকার জায়গার নাম ‘পিলখানা’। ‘মাটিয়াবাগ’ কোচবিহারে নয়, তার অবস্থান গৌরীপুর, অসমে। আট বছরের দীপকান্ত যে হাতিতে সওয়ার হয়েছিলেন, তা নিশ্চিত ভাবেই ছিল ‘তীরথ সিং’। লালজির বয়সি ওঁর সবচেয়ে প্রিয় হাতি ‘প্রতাপ সিং’য়ের মৃত্যু হয়েছিল ওই সময়ের অনেক আগে।
আরও সংযোজনের জন্য জানাই, ‘মস্তে’র প্রভাবে থাকা ‘তীরথ সিং’ যে পাতাওয়ালাকে মারে, তার নাম ছিল ছোটু মিঞা। ছোটুকে মেরে জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পরে খুঁজে পাওয়া যায় তীরথ সিংকে। তখন সে উন্মত্ত। বন দফতরের গোপাল তাঁতি তাকে ঘুমপাড়ানি বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে নিস্তেজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওষুধের মাত্রা কম হওয়াতে সে দৌড়ে চলে যায় অনেকটা। হারিয়ে যায় জঙ্গলে। খোঁজ মেলে প্রায় দেড় দিন বাদে তখন সে মৃত। সময়মতো জল স্প্রে করতে না পারায় ও অ্যান্টিডোট না দিতে পারাতেই তার মৃত্যু হয়।
শান্তনু ঘোষ
সারদা গার্ডেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
যত দোষ
‘কালসর্প’ (১৫-১১) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের প্রেক্ষিতে কিছু বলবার জন্যই এই পত্র | এ কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, নাম বদলের রোগটি বহু পুরাতন। পুরনো নাম ব্যাপক ভাবে পরিবর্তন শুরু করে পাঠান এবং মুঘল শাসকেরা। বাংলার নবাবেরাও অনেক স্থানের নাম পরিবর্তন করে। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বাম আমলে সবচেয়ে বেশি নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। নাম পরিবর্তন করা হয়েছে বা হয়েছিল ঢাকার, কলকাতার, মুকসুদাবাদের, রাজমহলের যথাক্রমে জাহাঙ্গিরনগর, আলিনগর, মুর্শিদাবাদ, আকবরনগরে। অনেকগুলি স্থানের নাম মানুষের চাপেই পূর্বনামে ফিরে গিয়েছে। যেমন ঢাকা, কলকাতা, রাজমহল ইত্যাদি। আবার পুরনো নাম না হলেও ইংরেজদের তৈরি নতুন নামগুলিও পাল্টে দিয়েছিল বামপন্থী সরকার। আমহার্স্ট স্ট্রিট হয়ে গেল রামমোহন সরণি, কর্নওয়ালিস স্ট্রিট হয়ে গেল বিধান সরণি, ধর্মতলা স্ট্রিট হল লেনিন সরণি, অক্টারলোনি মনুমেন্ট হয়ে গেল শহিদ মিনার, ক্যালকাটা হয়ে গেল কলকাতা; আরও কত কী! ম্যাড্রাস, বোম্বাই, ত্রিবান্দ্রম, সব বদলে গেল! এই সব নাম পরিবর্তনে ভারতের সমন্বয়ী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যায়নি।
বুঝতে পারছি না, এখনই বা এত গেল গেল রব উঠছে কেন! সেই কথাটাই মনে পড়ছে, যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা! আর এটা করতে গিয়ে যে কোনও অছিলায় হিন্দুধর্ম ও হিন্দুত্ববাদকে গালাগাল দেওয়া অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। হিন্দুত্বকে আপনারা কালসর্পের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যেটা মেঠো রাজনীতিকরা করে থাকেন। সম্পাদকীয়তে যথার্থই বলা হয়েছে,‘‘হিন্দুধর্মের বিস্তৃত ও জঙ্গম পরিসরে যুগে যুগে বহুত্বের স্থান মিলিয়াছে, সেই আত্মীকরণের পথেই এই ধর্ম আপন প্রভাব বজায় রাখিয়াছে।’’ এটাই ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। এই জন্যই আক্রমণকারী শক, হুন প্রভৃতি জাতি ভারতের বিশাল সমাজদেহে লীন হয়েছে। ভারতীয় সভ্যতা কোনও দিনই আগ্রাসী ছিল না বা নেই।
কলকাতার নানা রাস্তার নাম, মনুমেন্টের নাম, ম্যাড্রাস, ত্রিবান্দ্রমের নাম পরিবর্তন করা যদি অন্যায় না হয়ে থাকে, তা হলে বিজেপি সরকার কোনও নাম পরিবর্তন করলেই তা ‘দোষ’ হয়ে যাবে কেন?
বিনয়ভূষণ দাশ
গোপজান, মুর্শিদাবাদ
কোন ভরসায়
‘ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা’ (১৬-১১) শীর্ষক খবরটা ঢাকা থেকে পাওয়া। তাতে জানা যাচ্ছে, ‘‘বন্দোবস্তের অভাব ছিল না। সীমান্তে ট্রানজ়িট ক্যাম্প গড়ে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সরকারি কর্তারা অপেক্ষাও করলেন দিনভর। ...সময় বাড়িয়ে বিকেল চারটে করা হয়। এক জনও ফিরে যেতে চাননি।’’ কবে তা হলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ফের শুরু হবে? ‘‘যখন রোহিঙ্গারা চাইবে।’’
পড়লে মনে হয় যে মায়ানমার সরকার চাইছে, আশ্রয়দাতা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও চাইছে। অথচ রোহিঙ্গারা নিজের দেশে ফিরতে চাইছেন না। যে কোনও মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হবে, নিজের দেশের ভিটেমাটি রুজিরুটি ফেলে তাঁরা অন্য দেশের দয়ার মুখাপেক্ষী হয়ে ভারতে বাংলাদেশে বা অন্যত্র পড়ে আছেন, এ কেমন মানুষ রোহিঙ্গারা?
ঘটনা কিন্তু তা নয়। ১১ নভেম্বর ২০১৮ বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের সরকারি প্রতিনিধিরা যখন বাংলাদেশের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলতে যান, তখন তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে দেশে ফিরতে হলে সরকারি ভাবে রোহিঙ্গাদের নিজস্ব জনগোষ্ঠীগত পরিচয় (ethnic identity) স্বীকার করে পূর্ণ নাগরিকত্ব দিতে হবে। মায়ানমার সরকার কি রোহিঙ্গাদের সেই দাবি মেনে নিয়েছে? অন্তত সে রকম খবর কোনও সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। সম্ভবত সেই কারণেই ইউএনএইচসিআর (United Nations High Commissioner for Refugees) এই প্রত্যাবাসন চুক্তির সমালোচনা করেছে।
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবর মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে দিল্লিতে রোহিঙ্গাদের যে ফর্ম ভরতে বলা হয়েছে, তাতে রোহিঙ্গাদের পরিচয় লেখা আছে: ‘‘আমি মায়ানমারের বাঙালি’’। ওই ফর্ম প্রস্তুত করেছে মায়ানমার এমব্যাসি। অথচ ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছে: মায়ানমার সরকার বলেছে যে তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নিতে রাজি। গত বছর ৩০ অক্টোবরের চুক্তিতে কিন্তু সে কথার উল্লেখ নেই। আর ১১ নভেম্বর পরিদর্শনে গিয়েও বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের প্রতিনিধিরা সেই আশ্বাস দেননি। তা হলে কোন ভরসায় রোহিঙ্গারা দেশে ফিরবেন? কোন পরিচয়ে? ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে ১৩৫টি জনগোষ্ঠী নাগরিকত্বের স্বীকৃতি পেলেও রোহিঙ্গারা বঞ্চিত হয়েছেন। সেই পরিচয়হীনতার জের ধরেই আজ চূড়ান্ত নির্যাতিত রোহিঙ্গারা দেশহীন রাষ্ট্রহীন ছন্নছাড়া।
জিতেন নন্দী
কলকাতা-১৮
হিসেব মিলবে?
এক সময়ে শুনতাম ‘‘মাও ফাও বলে কিছু নেই।’’ তবে এঁরা কোথা থেকে এলেন? কিষেনজিই বা কে ছিলেন? যা-ই হোক, এঁরা এখন মূলস্রোতে ফিরেছেন। সরকারি চাকরি পেয়েছেন।
প্রশ্ন হল, যে সমস্ত নিরীহ মানুষ এঁদের হিংসার শিকার হয়েছেন, এঁদের সৃষ্ট ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন, লাখ লাখ টাকার যে
সমস্ত সরকারি সম্পত্তি আন্দোলনের নামে নষ্ট করা হল, তার হিসাব এখন কে করবে?
প্রসূন কুমার মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-১০৮
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy