‘জয়োল্লাসের বোমায় প্রাণ গেল বালিকার’ (২৪-৬) শীর্ষক খবরটি মর্মস্পর্শী, আতঙ্কেরও। রাজনৈতিক আশ্রয়ে দাগি দুষ্কৃতী, হিংস্র অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে কতটা নৃশংস কাজ করতে পারে, নদিয়ার কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে সেই প্রমাণটি ভয়ঙ্কর ভাবে উঠে এল। নিজেদের দলের বিপুল জয়ের আনন্দে দুর্বৃত্তরা মোলান্দি গ্রামের ফুলের মতো সুন্দর দশ বছরের এক বালিকাকে সকেট বোমার আঘাতে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করেছে। সংবাদ-সূত্রে জানতে পারি, সন্তানহারা পরিবারটি (ছবি) কান্নায় ভেঙে পড়ে জানিয়েছে, তারা বিরোধী দল করে বলে টার্গেট করেই তাদের কন্যাকে ওরা এ ভাবে খুন করল। এই কিশোরী কন্যাই ছিল তাদের জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। এটা তো প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির এক ঘৃণ্য নমুনা। নির্বাচনের জয়ের উল্লাসে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট গুন্ডাবাহিনীর এমন ব্যাপক বোমাবাজি ও সংঘর্ষের জেরে এক বালিকার এই মর্মান্তিক প্রাণহানি সংসদীয় রাজনীতিতে এক অশুভ বার্তা তুলে ধরে।
এই হিংসার প্রতিরোধে রাজ্যের নির্বাচনী আধিকারিক ও প্রশাসনিক আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত ব্যর্থতা, সর্বোপরি দায়িত্ববোধহীন আচরণই খোলাখুলি প্রকাশ পায়। খবরে উঠে আসে, এই এলাকায় ২০২৩ সাল থেকেই দুই বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এই খবরটি পুলিশ-প্রশাসনের জানা ছিল না, এমনটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তা হলে কোনও হিংসাত্মক ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে প্রশাসন কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যথোচিত কঠোর পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হল না? একটি উপনির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন স্থলের আশপাশের এলাকায় কতটা পরিমাণে বোমা-বারুদ, বেআইনি অস্ত্র মজুত হয়েছিল, কে জানে! ক্ষমতাশালী দলের অনুগামী দুষ্কৃতীরা নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে এলাকায় নানা রকম হুমকি, যেমন ‘ভোট মিটলে দেখে নেব’— গোছের কথাবার্তা প্রায়ই সাধারণ মানুষকে শুনিয়ে থাকে। এত দিন সেই হুমকিগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা করা হয়নি কেন? কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে রাজনৈতিক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে তমান্না খাতুনের নৃশংস মৃত্যু এই ভয়ানক ছবিটিকেও সামনে এনেছে।
অবশ্য অভিজ্ঞতা বলে, এই রাজ্যের প্রায় প্রতি নির্বাচনে সাধারণ লোকের রক্তক্ষরণ একটি স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। তাই প্রশ্ন, আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে কি আদৌ শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে?
পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি
রাজনীতির রক্ত
এই রাজ্যে কোনও নির্বাচন এলেই একটা আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হয়। ভয় হয় বোমাবাজি, গোলাগুলিতে আরও কত প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে? যার মারাত্মক বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল সাম্প্রতিক কালীগঞ্জের উপনির্বাচনেও। নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের দিন ভোটগণনার শেষ লগ্নে বিজয় উল্লাসে মত্ত তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ছোড়া সকেট বোমায় খুন হয়ে গেল এক সিপিএম সমর্থক পরিবারের দশ বছরের কন্যা তমান্না খাতুন।
এ বড় মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, বোমাবাজির ঘটনা ঘটার এক ঘণ্টা পর পুলিশ আসে! বিষয়টি নিয়ে এখনও চলছে রাজনৈতিক তরজা, বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন। মনে পড়ে গেল, বাম আমলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুনে রক্তঝরা সময়ের চিত্র কতটা ভয়াবহ ছিল! আসলে যে মায়ের কোল খালি হয়, তিনিই কষ্টটা বোঝেন। বামেরাও নির্বাচনের আগে-পরে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে বহু মানুষের রক্ত ঝরিয়েছিল, সে ইতিহাস ভুললে চলবে? রাজনীতিতে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বা রাজনীতির ছত্রছায়ায় দুষ্কৃতীদের বিচরণ নতুন কিছু নয়। পার্থক্য হল, আগে রাজনৈতিক নেতারা দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন, আর এখন দুষ্কৃতীরাই রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করে। এ এক ভয়ঙ্কর সামাজিক অবক্ষয়ের ফল, যেখানে পুলিশ দুষ্কৃতীদের ভয়ে টেবিলের নীচে লুকিয়ে থাকে বা পুলিশকে সহ্য করতে হয় রাজনৈতিক নেতাদের কুৎসিত গালিগালাজ।
প্রশ্ন তোলা যায়, এত বোমা-বারুদ, বন্দুক জমা হচ্ছে কী ভাবে? পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তবে কী কাজ করে? কেন তাদের কাছে খবর থাকবে না? তা ছাড়া গণনা শেষ না হতেই, চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই কী ভাবে বিজয়োল্লাস? কেনই বা নির্বাচন ঘিরে এমন বদলার রাজনীতি? এই ঘটনায় কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে, কারণ সামনেই ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন। ভয় লাগে আরও কত রক্ত ঝরবে, আরও কত প্রাণহানি হবে? এ সব বন্ধ করার জন্য পুলিশের কি করণীয় কিছুই নেই?
দেবাশ্রিত রায়, রানাঘাট, নদিয়া
স্কুলে ফোন
বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার যে ভাবে বাড়ছে, তা দুশ্চিন্তার। অনেক ছাত্রছাত্রীর পকেটে থাকে স্মার্টফোন। শিক্ষক পড়াচ্ছেন, পিছনের বেঞ্চে বসে ছাত্র অনলাইনে ভিডিয়ো দেখছে বা গেম খেলছে— এমন দৃশ্য বিরল নয়। অনেক সময় ক্লাস চলাকালীন সমাজমাধ্যমের নোটিফিকেশন তাদের মনোযোগ ঘুরিয়ে দেয়। ফলে পাঠের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে, পড়াশোনার মানও নীচে নেমে যাচ্ছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে গোপনে ছবি তোলা, ভিডিয়ো করা বা অন্যকে অপমান করার মতো ঘটনা বেড়ে চলেছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সহপাঠীদের হেনস্থা করার জন্যও মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফোন নিষিদ্ধ করলেও ছাত্রছাত্রীরা নানা উপায়ে ফোন লুকিয়ে আনছে। এই সমস্যার সমাধান কী? বর্তমান যুগে প্রযুক্তি ছাড়া চলা কঠিন। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও অনেক সময় প্রযুক্তির সহায়তা প্রয়োজন। তাই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নয়, বরং সঠিক নিয়ম, পর্যবেক্ষণ ও দায়িত্বশীলতার পাঠ দিয়েই মোবাইল ব্যবহারে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব। বিদ্যালয়গুলিতে মোবাইল ব্যবহারের স্পষ্ট নীতিমালা চালু করা উচিত। ক্লাস চলাকালীন মোবাইল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে হবে, এবং নিয়ম ভাঙলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা থাকা দরকার। পাশাপাশি, অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। তাঁদের বোঝাতে হবে, সন্তান বিদ্যালয়ে পড়তে যায়, মোবাইল নিয়ে সময় কাটাতে নয়। শিক্ষক-অভিভাবক মিলে নিয়মিত আলোচনা হলে ছাত্রদের আচরণেও পরিবর্তন আসবে।
অংশুমান ভঞ্জ, এগরা, পূর্ব মেদিনীপুর
অনেক বরুণ
‘বরুণ-খুনের দিনে বিক্ষোভে এসইউসি’ (৬-৭) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। গত ৫ জুলাই সুটিয়ার প্রতিবাদী শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের বাড়ির সামনে তাঁর মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সুটিয়ার প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি থেকে সদস্যরা। ২০১২ সালে ৫ জুলাই বরুণ বিশ্বাসকে গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। সেই সময় গাইঘাটার একের পর এক গণধর্ষণের বিরুদ্ধে এলাকায় প্রতিবাদী মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মৃত্যুর ১৩ বছর পরেও তাঁকে ভুলতে পারেননি এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে তাঁর স্কুলের শিক্ষকরা। ২০২২ সালে ৫ জুলাই তাঁর কর্মক্ষেত্র মিত্র ইনস্টিটিউশন-এর শিক্ষকরা পড়ুয়াদের প্রতি একটা বার্তা দিয়েছিলেন— শুধু পড়াশোনায় ভাল হলেই হবে না, বরুণ বিশ্বাসের মতো শিরদাঁড়া সোজা রাখা এক জন প্রতিবাদী মানুষ হতে হবে।
সম্প্রতি রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতনে শিক্ষাঙ্গন যখন কলুষিত, তখন বলাই যায়— এক জন বরুণ বিশ্বাস চলে গেলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে জন্ম হোক হাজার বরুণ বিশ্বাসের।
সুব্রত পাল, কলকাতা-৩৮
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)