শুভময় মৈত্রের ‘জাতপাতের অঙ্কের বাইরে’ (৩০-১০) প্রবন্ধটি এক মৌলিক প্রশ্ন তুলে ধরে— জাতপাতের রাজনীতির জটিল জাল থেকে মুক্ত হয়ে আমরা কোন পথে এগোব? এই মুহূর্তে, সর্দার বল্লভভাই পটেলের দেড়শোতম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্নটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ ও রাজ্যগুলিকে ঐক্যের সূত্রে বেঁধেছিলেন, তাঁর দর্শনের ভিত্তি ছিল বাস্তববোধ, দূরদর্শিতা ও অবিচল নীতি। আজকের রাজনীতিতে সেই নীতিরই অতি প্রয়োজন। প্রবন্ধে প্রশান্ত কিশোরের ‘জন সুরাজ পার্টি’-র (ছবি) যে মূল বক্তব্য এসেছে, তা হল, রাজনীতিকে আবার জনতার হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। জনগণ কেবল সুবিধাভোগী নয়, বরং নীতি নির্ধারণ ও দায়বদ্ধতার সক্রিয় অংশীদার। তিনি পুরনো ‘ভাতা-নির্ভর’ রাজনীতির সমালোচনা করে বলেছেন, উন্নয়ন ও জনগণের অংশগ্রহণই রাজনীতির মূল ভিত্তি হওয়া উচিত। এই দর্শনের সফল প্রয়োগ তখনই সম্ভব, যখন শাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও গণ-সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।
জাতপাতের বিভাজন শুধু সামাজিক অন্যায় নয়, শিক্ষার ক্ষেত্রেও গভীর ফারাক তৈরি করেছে। শহরের এক প্রান্তে যখন শিশুরা স্মার্টফোন বা ট্যাবের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিচ্ছে, তখন প্রান্তিক অঞ্চলের বহু পড়ুয়া ন্যূনতম ডিজিটাল সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ফলে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ বাস্তবে অসমান ভারতকেই আরও স্পষ্ট করছে। এই ব্যবধান ঘোচাতে হলে তিনটি পদক্ষেপ জরুরি— সরকারি বিদ্যালয়ে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ ও ট্যাব বা কম্পিউটারের সরবরাহ নিশ্চিত করা। শিক্ষক প্রশিক্ষণের সঙ্গে ডিজিটাল শিক্ষাদান বাধ্যতামূলক করা। এবং, গ্রামীণ এলাকায় কমিউনিটি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, যেখানে শিক্ষার্থী, কৃষক ও মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী অনলাইন দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। জাতপাত বা অনগ্রসরতার সীমা ভেঙে শিক্ষার এই ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিই হতে পারে প্রকৃত সমতা প্রতিষ্ঠার ভিত্তি।
বিনামূল্যে শিক্ষা, পেনশন, সরকারি চাকরির রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির উপরে ভর করেই এত কাল নেতা-মন্ত্রীরা আসন দখল করে আসছেন। অথচ, রাজ্যের সীমিত রাজস্ব ও ঋণের ভারের মধ্যে এই সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উপায় কী, তার কোনও স্বচ্ছ ব্যাখ্যা নেই। ফলে প্রতিশ্রুতিগুলি ভোটের প্রাক্কালে হাততালি পেলেও, জনগণের দীর্ঘমেয়াদি আস্থা অর্জন করতে পারে না। এর সমাধান হল, প্রতিশ্রুতির আগে বাস্তবসম্মত অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলা। রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জনগণকে সুযোগ ও পরিবেশ সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী করে তোলা, যাতে তাঁরা নিজের ভাগ্য নিজে গড়ে তুলতে পারেন।
আজকের রাজনীতিতে নেতৃত্বের একটি পরিষ্কার ইমেজ, পরিণত দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিক মূল্যবোধের অভাব প্রকট। প্রকৃত নেতা তিনিই, যিনি দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কঠিন সিদ্ধান্ত নেন, যদি তা জনগণের মঙ্গলের জন্য প্রয়োজন হয়। সর্দার পটেলের জন্মজয়ন্তী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়— মহান নেতৃত্ব গড়ে ওঠে দৃঢ়তা, নীতি ও নিঃস্বার্থ সেবার সমন্বয়ে। তিনি যদি ৫৬২টি দেশীয় রাজ্যকে এক করতে পারেন, তবে আমরা কি পারি না বিভাজনের রাজনীতি ভেঙে অখণ্ড উন্নয়নের পথ তৈরি করতে? আজ আমাদের প্রয়োজন নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেখানে থাকবে নৈতিকতা, বাস্তববাদিতা এবং সর্বোপরি দেশের একতা ও অখণ্ডতা রক্ষার তাগিদ।
অলোক কুমার মুখোপাধ্যায়, সোদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
সিঁদুরে মেঘ
শুভময় মৈত্র তাঁর উত্তর-সম্পাদকীয়তে ভারতীয় রাজনীতি এবং বিহারের সাম্প্রতিক ভোটযুদ্ধের ময়দানে প্রশান্ত কিশোরের ‘জন সুরাজ পার্টি’-র বার্তার আভাস দিয়েছেন। রাজনীতিতে শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত মানুষদের যুক্ত করার যে প্রচেষ্টা প্রশান্ত কিশোর করেছেন, তা যদি বর্তমান রাজনীতিবিদরা উপলব্ধি করতে পারতেন, তা হলে তাঁদের দেশের মানুষের মধ্যে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি, জাতিবিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার দরকার হত না। সমস্যা হল, রাজনীতিবিদরা সাধারণত চিরকালই ক্ষমতা আঁকড়ে চরম ভোগবাদী হয়ে থাকতে ভালবাসেন। ভোটে জিতে জনগণের সুখ-দুঃখের কথা না ভেবে তাঁরা এমন সব কাজকর্ম করে বসেন যে, এর ফলে এক সময় তাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের মনে বিরূপ ভাবনার সৃষ্টি হয়। ভোটের আগে নানা প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেওয়া আর ভোট মিটলেই সব কিছু হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার চিরাচরিত রাজনৈতিক ঐতিহ্যে সাধারণ মানুষও এখন ক্লান্ত। প্রবন্ধকার সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যে, গত প্রায় দেড় দশকে এ রাজ্যের রাজনীতি প্রভাবিত দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষাব্যবস্থার কারণে হাজার হাজার শিক্ষিত যুবক-যুবতীর স্বপ্নের সলিলসমাধি ঘটেছে। সেই তুলনায় বিহারের ছেলেমেয়েরা কষ্টেসৃষ্টে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেদের প্রস্তুত করে সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলিতে সফল হয়ে আইএএস, আইপিএস হচ্ছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, আমাদের রাজ্যের নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার পাট শিকেয় তুলে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ছত্রছায়ায় নিজেদের সমর্পণ করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। সে ক্ষেত্রে এই রাজ্যে শিক্ষিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি হবে কোথা থেকে?
প্রশান্ত কিশোর এত দিন পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে ভোটকুশলী হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছেন। প্রশ্ন হল, এখন দেশহিতৈষী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ভোটের ময়দানে নামলেও, তিনি কি পারবেন স্বল্পসংখ্যক শিক্ষিত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিহারের মতো রাজ্যের অপরাধ-প্রবণ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে লড়াই করতে? কথাটা উঠছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের পরিণতির কারণে। ‘আম আদমি পার্টি’ যে উদ্দেশ্য নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছিল, সেই স্বপ্ন কি পূরণ হয়েছে? উল্টে কেজরীওয়ালকেই হাজতবাস করতে হয়েছে নিজের ও দলের নেতাদের কীর্তিকলাপের কারণে। তাই কেউ সততার ঢক্কানিনাদ করলে সিঁদুরে মেঘ দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি আমরা।
সুব্রত সেন গুপ্ত, কলকাতা-১০৪
স্পষ্ট ছবি
প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘শূন্য থেকেই শুরু’ (২০-১১) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি তথা এনডিএ কংগ্রেসকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করেই ক্ষমতায় আসে। অথচ মনমোহন সিংহের সরকার (২০০৪-২০১৪) এক দশকে বহু প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের মানুষের উপকার করেছিল। একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা, তথ্যের অধিকার-সহ বিবিধ জনমুখী কর্মসূচির সূত্রপাত তাঁর আমলেই। তা সত্ত্বেও স্বাধীনতার পরে জাতীয় কংগ্রেস ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে কম আসনে (৪৪টি) জয়লাভ করেছিল। অন্য দিকে, নরেন্দ্র মোদী এগারো বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও, দেশের মানুষের অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন হয়নি। বরং বেড়েছে বেকারত্ব। কিন্তু বিহার নির্বাচনের পরে কেন্দ্রীয় শাসক দল নতুন করে অক্সিজেন লাভ করল।
এ দিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে অনেক ভাল কাজ হওয়া সত্ত্বেও, বহু অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি-সহ অপকর্মের কারণে তৃণমূল সরকার বেকায়দায়। কিন্তু মূল চক্রীরা ধরা পড়েনি। আসলে এ রাজ্যে বিজেপি তৃণমূল যতই সংঘাত থাকুক না কেন, দিল্লি ও নাগপুরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে আসল ছবি পরিষ্কার হবে আগামী বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে।
বাবলু নন্দী, কলকাতা-৭৯
বাস চাই
বুড়ুলবাসীদের কলকাতায় যেতে বজবজ স্টেশন পৌঁছতে অটোভাড়া লাগে ১০০ টাকা। সরাসরি বাস চাই।
প্রদীপ মিত্র, বুড়ুল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)