‘তাণ্ডবের নীল নকশা’ (২৪-৯) শীর্ষক প্রবন্ধে বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় শেষে যে আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন, তাতে সত্যিই নিশ্চিন্তে থাকার উপায় নেই কারও। প্রশাসনের দুর্নীতির মাত্রাছাড়া রূপ তখনই দেখা যায়, যখন রাজনীতি পেশায় পরিণত হয়। নেপাল, বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলঙ্কাকে দেখে ভারত ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। সারা দেশে সেই অর্থে সম্মানজনক কাজ নেই বললেই চলে। যেটুকু আছে সেটাও অসংগঠিত ক্ষেত্রের যৎসামান্য অর্থের কাজ। অন্য দিকে আবার চাকরি থাকলেও সেটা নানা অসৎ উপায়ে অর্জিত হচ্ছে; অর্থের বিনিময়ে বা স্বজনপোষণের দ্বারা শিক্ষিত যুবসমাজকে বঞ্চিত করে পাওয়া চাকরি। সংবাদপত্র খুললেই কাজ হারানোর খবর নিয়মিত চোখে পড়ছে। নতুন কর্মসংস্থানের জায়গা তৈরি হচ্ছে না।
প্রশাসক কি আদৌ সেই পাকচক্র থেকে উঠে আসার কোনও প্রচেষ্টা করছে? কিন্তু আমাদের কতটুকুই বা করার আছে! জনপ্রিয় বলিউড চলচ্চিত্র জওয়ান-এ শাহরুখ খান অভিনীত চরিত্রটি আমাদের দিকে ইঙ্গিত করে কী করা উচিত তা বলেছেন। আমরা হয়তো অনেক কিছুই করতে পারি, তবে সেটা গণতান্ত্রিক উপায়ে। পাঁচ বছর ছাড়া ভোট হলেও প্রতিনিধিকে নির্বাচন করতে আমরা হয়তো অধিকারের ঠিক প্রয়োগ করি না। ভোট চাইতে আসা প্রতিনিধিকে এক বারও নিজে থেকে জিজ্ঞাসা করি না যে, তিনি বিজয়ী হয়ে এসে ঠিক কী করবেন আগামী পাঁচ বছর। ভুলটা ঠিক সেখানেই। পরে নানা দুর্নীতি দেখে নিজেদেরই অপরাধী মনে করি তখন। হয়তো কখনও নিজেদের সান্ত্বনা দিই, এটা ‘সিস্টেমের দোষ’ বলে। কিন্তু ‘সিস্টেম’ বদল না হলে যদি ধ্বংসাত্মক আন্দোলনকেই একমাত্র পথ বলে মনে করে যুবসমাজ? শান্তিপ্রিয় বাঙালি গত দেড় দশকে একাধিক আন্দোলন দেখেছে। সাক্ষী থেকেছে এই রাজপথ। সবারই সহ্যের সীমা রয়েছে। অনেক নিরস্ত্র আন্দোলনকারীকে লাঠিপেটা করে বা পদাঘাতে প্রতিহত করেছে পুলিশ। কিন্তু সত্যিই কি প্রশাসন তার ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করেছে? একেবারেই না। চাকরি-দুর্নীতি, মিড-ডে মিলের দুর্নীতি, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দুর্নীতি কিংবা সরকারি নানা ক্ষেত্রে নিম্নমানের সামগ্রী জোগান দেওয়ার যে কাজ চলছে, তা অত্যন্ত লজ্জার ও কষ্টের। এক জন সাধারণ নাগরিক হিসাবে এই সনির্বন্ধ অনুরোধ, প্রশাসন আত্ম-সমালোচনা করুক। প্রশাসনের প্রতি সেই বিশ্বাস ও ভরসার জায়গাটি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন সাধারণ মানুষের কথা মন দিয়ে শোনা। মানবকল্যাণের লক্ষ্যে যা যা প্রয়োজন, সেগুলিই এ বার অন্তত করার সময় এসেছে।
স্নেহাশিস সামন্ত, দাশনগর, হাওড়া
বারুদের অপেক্ষা
বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ‘তাণ্ডবের নীল নকশা’ এক কথায় অসাধারণ। ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে মানুষ সহজেই অনেক সমস্যার সমাধান নিমেষেই করতে পারে, রুজিরও ব্যবস্থা হয়, পাশাপাশি কোনও বৈপ্লবিক বার্তাও বহু মানুষকে সহজেই একত্রিত করতে পারে।
তবে, ভারতের মতো বৃহৎ ও শক্তিশালী দেশে এই কায়দায় গণআন্দোলন সংগঠিত করা বেশ দুঃসাধ্য। তা ছাড়া প্রতিবেশী তিন দেশের পালাবদলকে একই গোত্রে ফেলা ঠিক হবে না। নেপাল ও শ্রীলঙ্কার গণবিদ্বেষের কারণ মোটামুটি এক গোত্রের: দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বেকারত্ব ইত্যাদি, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সে কথা পুরোপুরি খাটে না। ভাবতে অবাক লাগে, সামান্য চাকরিক্ষেত্রে সংরক্ষণকে কেন্দ্র করে সরকারের পতন হয়ে গেল। আসলে সাধারণ মানুষ যখন শাসকের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে, তখন একটু বারুদ, শুধু একটু আগুন দরকার। তা ইন্টারনেট বন্ধ বা নিয়োগ দুর্নীতি, যে কোনও কিছুই হতে পারে।
স্বপন চক্রবর্তী, জগৎবল্লভপুর, হাওড়া
সুবিধাবাদী বলেই
‘অকালমৃত্যু’ (১১-৯) শিরোনামের সম্পাদকীয় প্রবন্ধে মৃত্যুর কারণ হিসাবে যে বিষয়গুলি উল্লেখ করা হয়েছে তা ছাড়াও কিছু বিষয় আছে যার পরিবর্তন না হলে অকালমৃত্যুর হার কমানো কতটুকু সম্ভবপর হবে সে বিষয়ে সংশয় থেকেই যায়।
প্রসূতি-মৃত্যুহার যথাযথ না কমায় আফ্রিকা ও অন্য নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলির সঙ্গে আমাদের দেশ নিয়েও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বেগ স্বাভাবিক। প্রসূতি-মৃত্যুর কিছু কারণ হল প্রসবকালীন সময়ে মারাত্মক রক্তক্ষরণ, সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ, প্রসবের জটিলতা, অস্বাস্থ্যকর ভাবে বা অপ্রশিক্ষিত চিকিৎসকের হাতে গর্ভপাত হওয়া; পরোক্ষ কারণ অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ, অপুষ্টি।
এমন সব জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ-এর সুপারিশে ও সহায়তায় চলা বিভিন্ন প্রকল্প যেমন, সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযান, জননী সুরক্ষা ইত্যাদি রয়েছে। তাতে কিছু উপকার হচ্ছে। কিন্তু তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রবল অভিযোগ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিরোনামে বিবিধ সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত। ফলে মৃত্যুর হার কমাতে হলে এই সমস্যাগুলির সমাধান জরুরি।
স্বাভাবিক প্রসবে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ ব্যতিক্রমী। হাসপাতালে উপযুক্ত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তা বন্ধের ব্যবস্থা সম্ভব। অন্য দিকে, জন্মদানে ‘সিজ়ারিয়ান সেকশন’ বা অস্ত্রোপচারে তা প্রবল। আমাদের দেশে সি-সেকশনের মাধ্যমে জন্মদানের হার সাংঘাতিক বেশি। যদিও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট পরিসংখ্যান নেই, তবে বেসরকারি বা সরকারি হাসপাতালে কান পাতলেই এই সত্য স্পষ্ট হয়ে যায়। স্বাভাবিক জন্মদানের বিষয়কে এখন অস্বাভাবিক এক বিষয় বলে বিবেচনা করতে শেখানো হয়েছে। ফলে বিশেষ বিশেষ দিনে সন্তান-জন্মদানে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হয়। সরকারি হাসপাতালেও একই চিত্র। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য পর্যবেক্ষণের সময়, কর্মী-নার্স সংখ্যার অপ্রতুলতা ও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে সহজ পদ্ধতি হল অস্ত্রোপচার করে জন্মদান। আর তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যার জন্য প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত ওষুধপত্র ও স্যালাইন। এই সুযোগে হাসপাতালে বাড়ে অনিয়ম, দুর্নীতি।
সরকারি হাসপাতাল দেশের গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ভরসা। প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্স এবং সেবাপরায়ণ মনোভাবাপন্ন চিকিৎসক দল, যাঁরা প্রয়োজন ভিন্ন অপারেশন করে জন্মদান করাবেন না। করালে তার জন্য উপযুক্ত কৈফিয়ত দিতে হবে, অন্যথায় শাস্তি পেতে হবে, এমন আইনি ব্যবস্থা। এমন সব ক’টি বিষয়ে কঠোর হলে এই অকালমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে।
শ্যামল ঘোষ, নব বারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
শৈথিল্যের কারণ
‘হৃদয়ের ভাষা’ (২০-৯) সম্পাদকীয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন আইন-কানুন, এবং রাজ্য চালনা করার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন লিখিত ও অলিখিত নির্দেশ আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, রাজনৈতিক ক্ষমতা ও ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখার তাগিদে, এগুলোর অনেক কিছুই মানা হয় না বা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে এক প্রকার নিশ্চুপই থাকা হয়। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলক বাংলা ভাষায় বাধ্যতামূলক ভাবে লেখার জন্য নির্দেশও যে কিছু দিনেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে, সেই অভিজ্ঞতা মানুষের কাছে নতুন নয়।
প্রধান বিরোধী দল জানে, রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের ভোট প্রাপ্তির চরমসীমায় পৌঁছে গিয়েছে, এর পর তা বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুব একটা নেই। তাই বাঙালি আবেগের যে কোনও বিষয়েই তাদের যোগদান অনেকটা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো। শাসক দলও অ-বাংলাভাষীদের ভোট হারানোর ভয়ে তাঁদের কাছে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে, তাই নামফলকে কর্নাটক ও মহারাষ্ট্রের মতো কঠোর আইন প্রয়োগ এই রাজ্যে সম্ভব নয় বললেই চলে।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)