আমি ভারতবর্ষের অর্ধশিক্ষিত/অশিক্ষিত মানুষের এক জন। যাদের প্রতি দিন নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। যাদের নিয়ে উন্নয়ন হয় কম, রাজনীতি হয় বেশি। আজ দেশের এই চূড়ান্ত সঙ্কটে, আমার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহবন্দি। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা একমাত্র ভগবানই জানেন। কয়েক মাসের রেশনের ব্যবস্থা হয়েছে। তার পর? বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হলে সাবান কিনতে পয়সা লাগে। মাস্ক কিনতে, কাঁচালঙ্কা, লবণ, শিশুর দুধ, পরিবারের অসুস্থ মানুষের ওষুধ কিনতে সেলেব্রেটিদের উপদেশ কিংবা রাজনীতিকদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নয়, টাকা লাগে। সেটা আসবে কোথা থেকে?
সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ করে লকডাউনকে মান্যতা দিয়ে সারা দিন টেলিভিশনের পর্দার দিকে গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে থাকি, আজ রাজ্যে কত লোক আক্রান্ত হলেন। কত জন সুস্থ হলেন। কত জনকে আমরা চিরতরে হারিয়ে ফেললাম।
সে সময় টিভিতে দেখানো হয়, সেলেব্রেটিদের কেউ রান্না করছেন। কেউ শরীরচর্চা করছেন। কেউ বা মা-বাবার বিয়ে দেওয়ার গল্প করছেন। কেউ বাসন মাজছেন। বিশ্বাস করুন, এই ছবিগুলো দেখার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমাদের নেই। আমরা জানি, তাঁরা বেশ আছেন। সারা বছর ধরে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন, যার অধিকাংশ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন। তাঁদের কাছে এই লকডাউনটা একটা অপ্রত্যাশিত ছুটির মতো। তাই তাঁদের অবসরকালীন জীবন যাপন, বিনোদন আমাদের কোনও ভাবেই উদ্দীপ্ত বা অনুপ্রাণিত করে না।
যদি পারেন, এই সুখী মানুষদের ছবি না দেখিয়ে, হাওড়া স্টেশনের কুলি, কলকাতা বা মফস্সলের রিকশাওয়ালা, বাজারের সব্জি-বিক্রেতাদের প্রতি দিন চোয়াল শক্ত করে জীবনের লড়াইয়ের ছবিগুলো একটু হলেও দেখান। যাঁদের দেখে আমরা প্রতিটি মুহূর্ত লড়াই করার সাহস এবং শক্তি সঞ্চয় করতে পারি।
কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
অপমান
কিছু দিন আগেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা বা তার আগের কিছু ঘটনায় রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসঙ্গীতকে কালিমালিপ্ত করা হয়েছিল। তবে এই ঘটনার বর্বরতা আঞ্চলিক স্তরেই সীমাবদ্ধ ছিল, পশ্চিমবঙ্গের গণ্ডি পেরোয়নি।
কিন্তু সাম্প্রতিক কালে, জাতীয় স্তরে প্রকাশ পাওয়া, বলিউড খ্যাত গায়কের একটি গানে, বাংলা লোকগীতিকে অতি নিম্নস্তরে নামানো হয়েছে। ‘লাল গেন্দাফুল’ নামক আইকনিক বাংলা লোকগীতির সঙ্গে কিছু অশ্লীল কথা ও যৌন সুড়সুড়ি দিয়ে উপস্থাপনা করা হল। পরে এই গানের লেখককে কিছু পয়সা বলিউড-গায়ক দিয়েছেন, কিন্তু তাতে গানকে অপমান করার কাজটা সঙ্গত হয়ে যায় না।
রবীন্দ্রনাথের গান যেমন আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, তেমনই এই পরিপূর্ণ লোকগীতি কোনও অংশে কম নয়। এই ন্যক্কারজনক মিউজ়িক ভিডিয়োটিও (বিকৃত রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতোই) চুটিয়ে উপভোগ করছে বাঙালি তরুণ প্রজন্মের এক বৃহৎ অংশ। আশা রাখব, করোনার প্রকোপ কমে গেলে বাংলার পুরো শিল্পীমহল এই ঘটনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।
অনিকেত কর্মকার
কলকাতা-১৫০
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
দেশ জুড়ে ২১ দিন লকডাউনের ক্ষতি পোষাতে কেন্দ্রীয় সরকার ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এতে উপকৃত হবেন চাষি, উজ্জ্বল যোজনার গ্রাহক, বিপিএল রেশন কার্ড হোল্ডার, আধার কার্ড হোল্ডার, বেসরকারি সংস্থার কর্মী। কিন্তু আমার মতো লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা সরকার ভাবলেন না কেন? যাঁদের মাসিক আয় দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা? দোকানের ঝাঁপ খুললে আয়, নইলে উপোস। টানা ২১ দিন দোকান বন্ধ থাকার ফলে এই শ্রেণির মানুষের সংসার চালানো দায়।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল
কোন্নগর, হুগলি
কয়েদির করোনা
জেলে ভিড় কমাতে বহু কয়েদির সাময়িক মুক্তির কথা বলা হচ্ছে। যে ভিড় থেকে বা যে ভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে, জেলের ভেতরে সেই সম্ভাবনার প্রসঙ্গ উঠছে কী করে? এই ভাইরাসের সংক্রমণে থাকা মানুষের সংস্পর্শে এলেই তো এই রোগ ছড়াবার সম্ভাবনা বেশি। সেই সম্ভাবনা কি জেলের ভিতরে অাছে? লকডাউনের আগের ১৫ দিনের মধ্যে যাদের জেল হয়েছে, তাদের থেকে সংক্রমণের একটা সম্ভাবনা থাকতে পারে। কিন্তু তাদের আইসোলেট করা অতি সহজ ব্যাপার নয় কি? এ পর্যন্ত তা কি করা হয়েছে?
নরেন্দ্রনাথ কুলে
কলকাতা-৩৪
একঘরে
করোনা-আতঙ্কে কিছু মানুষ অমানবিক হয়ে উঠছেন। কোনও মানুষকে ভাইরাস-আক্রান্ত সন্দেহে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে একঘরে করছেন। এমনকি যাঁরা তাঁদের প্রাণ বাঁচাবেন, তাঁদেরও একঘরে করছেন। এ রকম চলতে থাকলে, বাড়ির লোকেরা রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাবেন না, জানাজানির ভয়ে। তা হলে বাড়ির অন্যান্য সদস্যও আক্রান্ত হয়ে পড়বেন। ওই সদস্যরা নিজের প্রয়োজনে বাইরে গিয়ে নিজের অজান্তেই ভাইরাস ছড়িয়ে দেবেন। এটা কত বড় ক্ষতি একটু ভাবুন এবং নিজেদের বদলান। না হলে আপনারা নিজেরাও এই ভাইরাসের থেকে রক্ষা পাবেন না।
স্বপন কুমার হালদার
জগাছা, হাওড়া
দেবদূত
করোনা সংক্রান্ত নির্দেশিকা মানতে গিয়ে আমাদের মতো প্রবীণ নাগরিকদের সূর্যের মুখ দেখাও প্রায় বন্ধ। এমতাবস্থায় এক পারিবারিক বন্ধু মারফত হোয়াটসঅ্যাপে কিছু সহৃদয় ব্যক্তির সন্ধান পেলাম, যাঁরা এলাকা ভাগ করে, প্রবীণদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হোম ডেলিভারি করে আসছেন। ফোনে যোগাযোগ করার দু’দিনের মধ্যে এক জন এসে গোটা মাসের জিনিস পৌঁছে দিয়ে গেলেন। বাড়ির ভেতর এলেন না। বললেন, জিনিসগুলি মিলিয়ে, থলেটা ফেরত দিন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন, আপনারা সাবধানে থাকবেন।
শেখর মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-২
দৃষ্টিকোণ
বিবর্ণ মুখ, জামাকাপড় ময়লা। ক্যামেরায় রীতিমতো কসরত করে তোলা হয়েছে ছবিটা। হাতে একটা প্যাকেট। তাতে উঁকিঝুঁকি মারছে কিছু খাবার, একটা সাবান। পাশে দাঁড়িয়ে পোজ় দিচ্ছে সুসজ্জিত এক জন। মুহূর্তের মধ্যে পঞ্চাশটা লাভ রিয়্যাক্ট, শ’খানেক লাইক, কমেন্টের বন্যা। কর্তৃপক্ষ যখন সোশ্যাল ডিসট্যানসিং-এর ওপর জোর দিচ্ছেন, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এই ধরনের ছবি। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে আত্মপ্রচারের মস্ত প্রলোভন, আর পরিস্থিতির শিকার এক জন মানুষকে সমাজের কাছে ছোট করার প্রবৃত্তি (হয়তো অজান্তেই)।
সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বার্থে নিজেকে ঘরে বন্দি রেখে সরকারি তহবিলে অর্থসাহায্য করেও মানুষের উপকার করা যায়, সেটা বেশ কিছু মানুষ বুঝতে চান না, বা গণতান্ত্রিক দেশের বাসিন্দা হিসাবে সরকারের ওপর সেইটুকু ভরসাও তাঁদের নেই।
অর্কপ্রভ সরকার
বড়বহেড়া, হুগলি
রঙ্গে ভরা
কলকাতার কড়চা-য় ‘রঙ্গে ভরা’ (২৩-৩) শীর্ষক অংশে লেখা হয়েছে, ‘‘সেই কবে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা’।’’ উক্তিটি রঙ্গলাল নয়, কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের।
স্বপনকুমার মণ্ডল
পুরুলিয়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।