Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Bengali laborers

টাকা নেই, লজ তাড়াবে বলছে, চেন্নাইতে আটকে আছি কয়েকশো জন, কিছু করুন

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। ছবি: মজিদ।

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। ছবি: মজিদ।

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ১৮:০৯
Share: Save:

২২ মার্চ থেকে চেন্নাইয়ে আটকে আছি আমরা। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কোনও মতে এক একটা দিন কাটাচ্ছি। কী ভাবে বাড়ি ফিরব জানি না। কালকের দিনটাও বা কী করে কাটবে তাও অনেকটাই অনিশ্চিত।
সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশো জন আমরা। তার মধ্যে বাংলারই বেশি, ৩০৭ জন। বাকিরা বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরা-সহ বিভিন্ন রাজ্যের। আমরা এখানে কাজ করতাম। আমরা সবাই শ্রমজীবী। কেউ রঙের কারখানায় কাজ করি, কেউ বা রেডিমেড জামাকাপড়ের কারখানায়, আবার কেউ নির্মাণ শিল্পে। হঠাৎ করেই লকডাউন হল। কোনও মতে আমরা অনেকে ২২ মার্চ জনতা কার্ফুর পরের দিনই জমা হই চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে। কয়েক হাজার মানুষ। সবাই চাইছি বাড়ি যেতে। আমাদের অনেকের কাছে টিকিটও ছিল। কিন্তু যেতে পারলাম না।
এর পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আমাদের দুঃস্বপ্নের দিন। ট্রেন নেই। কোথায় যাব জানি না। কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে বসে আছি স্টেশনে। তখনই শুরু হল পুলিশের তাড়া। স্টেশন চত্বর থেকে তাড়িয়ে দিল পুলিশ। কোনও মতে আশে পাশের গলিতে লুকিয়ে রইলাম। কিন্তু থাকব কোথায়? শেষ পর্যন্ত অনেকে চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনের পাশে কুলন্দাই স্ট্রিট, ওয়াল ট্যাক্স রোড ও অন্যান্য কয়েকটি রাস্তায় ৩৪টি লজে আশ্রয় নেন। আমরা চলে আসি এগমোর স্টেশনের কাছে। সেখানে লজে মাথাপিছু ঘর ভাড়া ১৫০ টাকা।

আরও পড়ুন: হোটেলভাড়া দিতে পারছি না, ফেরান, না হলে খাব কী?

আরও পড়ুন: সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে রাখতে নিজেদের অপ্রকৃতস্থ মনে হচ্ছে​

উপায় নেই। সেখানেই মাথা গুঁজলাম। শুধু নিরামিষ ডাল ভাতের খরচই একেক বেলা ৭০-৮০ টাকা। এ ভাবেই কয়েক দিন চলল। এ দিকে হাতের টাকা ফুরিয়ে আসছে। শুনলাম কেন্দ্রীয় সরকার এবং তামিলনাড়ু সরকার নির্দেশ দিয়েছে, আমাদের মতো আটকে পড়াদের কাছ থেকে লজ টাকা নিতে পারবে না। আমরা সেটাই বললাম লজ মালিককে। কিন্তু উল্টো ফল। পুলিশ দিয়ে আমাদের হুমকি দেওয়া শুরু হল।

এ দিকে অনেকেরই তত দিনে ঘরভাড়া দেওয়ার পয়সা প্রায় শেষ। লজ মালিক গাদাগাদি করে তাদের ঢুকিয়ে দিচ্ছে একটা ঘরে। আলো নেই, বাতাস নেই ঘরে। এ দিকে চেন্নাইতে গরম বাড়ছে। আর পাল্লা দিয়ে জলের অভাব বাথরুমে। ভাত-ডালের সঙ্গে কিনতে হচ্ছে খাওয়ার জলও।
কয়েকটা লজে তো শুনলাম ম্যানেজার পুলিশ ডেকে এনে রীতিমতো মারধর করেছে যাঁরা ভাড়া দিতে পারছেন না তাঁদের। আমাদের মতো শ্রমজীবী মানুষদের সঙ্গে রয়েছেন কয়েকজন যাঁরা চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে মহিলা এবং শিশুও রয়েছেন। সরকারি কোনও আশ্রয়ে আমাদের কোনও জায়গা হয়নি। এখানকার কয়েকজন সমাজকর্মীকে আমরা ভিডিয়ো করে আমাদের কথা জানিয়েছিলাম। তাঁদের উদ্যোগে খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে আমাদের। তবে তাও পর্যাপ্ত নয়। তাঁরা চেন্নাই পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শুনেছি সরকারি আশ্রয় শিবির সমস্ত কানায় কানায় ভরা । কোনও জায়গা নেই। লজ মালিকরা বলছেন আমরা ভাড়া না দিলে তাঁদের চলবে কী করে? সরকার লজ মালিকদের আমাদের টাকা দেবে কি না তা স্পষ্ট নয়। তাই লজ মালিকরা ভরসা পাচ্ছেন না। আমাদের উপর জুলুম করেই টাকা আদায় করছেন।
এ ভাবেই একেকটা দিন কাটছে। দিন গুনছি কবে লকডাউন উঠবে। কিন্তু তত দিন কী ভাবে বাঁচব তা জানিনা। সকলেরই রসদ ফুরিয়েছে। স্থানীয় সমাজকর্মীরা আশার আলো দেখিয়েছেন, এই লজগুলোতেই বিনা পয়সায় থাকার ব্যবস্থা করা হবে। কবে হবে জানি না? অন্য রাজ্যের লোকজনজের শুনছি সে রাজ্যের সরকার টাকা পাঠাচ্ছে। আমাদের দিদিও শুনলাম টাকা পাঠাবেন। কিন্তু কী ভাবে পাঠাবেন তা জানি না। আমরা পুরো অন্ধকারে। তাই আপনাদের সাহায্য চাইছি। সরকারের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। তা না হলে লকডাউন শেষ হওয়া পর্যন্ত বাঁচব কি না জানি না।
 

রবিউল (জিওলগরিয়া, পূর্ব বর্ধমান), মজিদ (গুরগুরিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা)

অনুলিখন: মধুশ্রী বসু (চেন্নাই)

(সরকারি, বেসরকারি যে কোনও স্তর থেকে সাহায্য করতে চাইলে যোগাযোগ: টি ভেঙ্কট ৭৩৫৮৭০০৬৫৫)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali laborers Coronavirus Lockdown Chennai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE