Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

নববর্ষের আনন্দ ফিকে হয়ে গিয়েছে স্কটল্যান্ডেও

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

জনশূন্য রাস্তাঘাট।

জনশূন্য রাস্তাঘাট।

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ১৬:২৭
Share: Save:

চৈত্রের শেষবেলায় বিদায় বসন্ত (১৪২৬), রাত পোহালেই যে পয়লা বৈশাখ ১৪২৭, তাই পুরানোকে দূরে সরিয়ে নতুনের রঙে রাঙা হবে পৃথিবী আর সেখানেই তো নবীনতার সার্থকতা। নিয়মমতো প্রকৃতিও তার কথা রেখেছিল, ফুলের পসরা সাজিয়েছিল গাছে গাছে। ঘুঘুর প্রেমের গুনগুন শোনা গিয়েছে দেওয়ালের আনাচে কানাচে। প্রতিটা ভোর শুরুও হয়েছে কোকিলের কুহু রবে। পূর্ণিমার চাঁদ নিজেকে সাজিয়েও নিয়েছিল গোলাপি রঙের বসনে।

তবুও পূর্ণতা পেল কোথায়? এ বার নববর্ষে শুধু আর্তনাদেরই হাহাকার বিশ্ব জুড়ে। আর পাঁচটটা দেশের মতো মারণ কারোনাভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পাইনি গ্রেট ব্রিটেনও। যেন এক মরণযজ্ঞ চলেছে এখানে। আজ যে আছে,কাল সে হারিয়ে যাচ্ছে। এ কোন অভিশাপ নেমে এল পৃথিবীর বুকে?প্রকৃতির চোখের জলে মুছে গেল নববর্ষের রঙিন সাজ। যেন আজ এক ধূসর মৃত্যুপুরী গোটা ব্রিটেনের আনাচে কানাচে। গত কয়েকদিন ধরেই সমস্ত সংবাদপত্রের শিরোনামে শুধু মৃত্যুর হাহাকার। স্কটল্যান্ড, নর্দ্যান আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, ইংল্যান্ড সর্বত্রই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুসংখ্যা।

এই তো গত বছরেও স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গের প্রবাসী বাঙালিরা বৈশাখের প্রথম দিনটিতে কেমন সুন্দর ভাবে একসঙ্গে নববর্ষ পালন করেছিল। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা সারাদিনটিতে সবাই ছিল হাসি-মজায় মত্ত। ক্র্যামোন্ড ক্রিকের হলে সে দিনের সেই আটপৌরে জমাটি আড্ডাটা ছিল যাকে বলে একবারে খাঁটি বাঙালির রসালো গল্পের আসর। ছেলেদের পরনে ধুতি পাঞ্জাবি, আর মেয়েরা আটপৌরে শাড়ি পড়ে হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গতনয়া।

বড়দের পাশাপাশি খুদেরাও সেজেছিল বাঙালি সাজে। শুধু পোশাকেই নয় সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও ছিল আড্ডার বিশেষ অঙ্গ। সেটা আবার অনেকটা সাবেকি ধরনের, রবিঠাকুররের গানে, গল্পে, আবৃতি, নাটকে ওইদিন নববর্ষের সন্ধ্যেটা ছিল বেশ মনোময়। সাথে বেশ আকর্ষণীয় ছিল খাওয়া দাওয়ার পর্বটাও। ভাত, ডাল, বেগুনি, শুক্ত, আলু পোস্ত, থেকে শেষ পাতে দই, রসগোল্লা, সবেতেই ছিল বাঙালিয়ানার ছাপ। একসাথে খাওয়া দাওয়া ও পরিবেশনেও ছিল আন্তরিকতা যা এখানকার প্রবাসীদের নববর্ষ মিলন প্রাঙ্গনের একটা বিশেষত্ব। সবার আশা ছিল প্রত্যেকবারের মতো হয়ত এবছরও নববর্ষের আনন্দটা হবে আর একটু অন্যরকম।

থমথমে চারিদিক।

আরও পড়ুন: বয়ে যাচ্ছে নায়াগ্রার জল, নেই পর্যটকদের ভিড়

বছরের প্রথম দিন বলে কথা শুরুটা যেন ভাল হয়, কিন্তু ভাগ্যবিধাতা হয়ত এই বছরের হিসাবটা একটু অন্য রকমই কষেছিলেন। লকডাউনের ফলে এখন ব্রিটেন তথা স্কটল্যান্ডের ব্যস্ততাময় জনজীবন একেবারেই স্তব্ধ, থমথমে। ভাবতে অবাক লাগে এই কয়েকদিন আগেও এখানকার প্রতিটা শহর ছিল প্রাণবন্ত, চঞ্চল। ছিল দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম। কিন্তু আজ কেমন যেন তা এলোমেলো, ছন্নছাড়া। নতুন বছরের রোদ ঝলমল দিনেও কেমন এক বিষাদময়ী কালো মেঘের ছায়া দেশব্যাপী সর্বত্র ছড়িয়ে। রাতের ছবিটা আরও ভয়ঙ্কর। কোথাও কারও সাড়া নেই, শব্দ নেই। চারিদিকে রাতের অন্ধকারের মধ্যে শুধু রাস্তার ল্যাম্পপোস্টগুলো আলো জেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখানকার ছবিটাও যেন সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা ইতালির রাতের সেই হাড় হিম করা ছবিটার কথা মনে করিয়ে দেয়।

সত্যিই কি ভয়ানক এক পরিস্থিতি দেশজুড়ে। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার অনেকদিন আগেই জরুরি অবস্থার কথা ঘোষণা করেছেন। খাবার আর ওষুধের দোকান ছাড়া সবই বন্ধ এখানে। সকলেই এখন গৃহবন্দি। রাস্তায় বেরোলে লোকজনের দেখা নেই বললেই চলে। হাতেগোনা কয়েকটা ট্যাক্সি মাত্র। স্কুল-কলেজ অফিস সবই বন্ধ। কবে জনজীবন স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না।

আরও পড়ুন: বাইরে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে গিয়ে আরও বিপদ ডেকে আনব না তো?

একসময়ের জাঁকজমকপূর্ণ পাব-রোস্তরাঁগুলো আজ বন্ধ। সায়েন্সবেরি, এসডা, টেস্কো নামের শপিং মলগুলো খোলা আছে শুধুমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য। স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টুয়ার্ট শোন ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আপৎকালীন পরিস্থিতি ছাড়া সকলকেই ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এহেন পরিস্থিতিতে নববর্ষ উদ্‌যাপন সত্যিই ফিকে পড়ে যায়। হাজার নিরানন্দের মাঝে এ বছর পয়লা বৈশাখের দিনটিকে কেমন যেন ম্লান লাগল। এখানকার প্রত্যেকটি বাঙালিই চায় তাদের নববর্ষ উৎসব পালন না করে উৎসবের সেই আশার দীপশিখাটি নিবেদন করেততে কোভিড-১৯ এর শিকার হওয়া সেই প্রাণগুলোকে, যারা মৃত্যুর সাথে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সবার শুধু একটাই প্রার্থনা, নতুন বছরের পবিত্রতায় শেষ হোক এই মরণব্যাধি। শুরু হোক নতুন জীবন। উৎসবের আনন্দ নাই থাক নববর্ষের আবেগটা মনের মধ্যে থাকলেই হল।

সুমনা আদক

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE