E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ভোটবাক্সে মন-রসায়ন

প্রথম ঘটনাটি উপনির্বাচনের ফলে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে এটা ধরে নেওয়া ভুল যে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে না।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৫ ০৬:০৭
Share
Save

শুভময় মৈত্রের ‘তৃণমূলের ধর্ম ও সংস্কৃতি’ (১৬-৫) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে একটি বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। প্রবন্ধকার বলেছেন, দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তায়নের বিষয়গুলি নির্বাচনে মতদাতাদের মন থেকে দূরে সরিয়ে রাখলে আগামী ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল। প্রবন্ধকারের মন্তব্যকে নির্ভুল বলা যেত। কিন্তু বাস্তব হল— মানুষের ভোট দানের প্রক্রিয়াতে অঙ্কের হিসাবের থেকে হামেশাই মানবমনের রসায়নের সম্পর্ক বেশি থাকে। ২০১১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রবন্ধকারের ভাষায় দুর্নীতি অন্তর্যামী থেকে গিয়েছে। ভোটের ফলে কোনও প্রভাব পড়েনি। ২০১৯ সালে একটু ছন্দপতন হয়েছিল বটে, তবে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মনে রাখা প্রয়োজন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে দু’টি ঘটনা ঘটে গেছে, যা রাজ্য-রাজনীতির অভিমুখটাই বদলে দিয়েছে। প্রথমত, আর জি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত পড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন। দ্বিতীয়ত, নিয়োগ দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে প্রায় ছাব্বিশ হাজার মানুষের চাকরি চলে যাওয়া।

প্রথম ঘটনাটি উপনির্বাচনের ফলে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে এটা ধরে নেওয়া ভুল যে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে না। আর দ্বিতীয় ঘটনাটি, নিঃসন্দেহে নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং গরিব মানুষের মনে আঁচড় দিয়ে গিয়েছে। ঝড় যে শুধুই চাকরিহারা শিক্ষক এবং তাঁদের পরিবারের উপর দিয়েই বয়ে গিয়েছে, তা নয়। অগণিত অভিভাবকের মনেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাঁদের সন্তানের শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে। তাই এই দু’টি ঘটনা আগামী ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের ফলে একেবারেই কোনও প্রভাব ফেলবে না— এটা হলফ করে বলা যায় না। ভোটদানের প্রক্রিয়াতে মানুষের মনের রসায়ন বোঝা মুশকিল। তাই অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল— এ কথা এখনই বলা যায় কি না, সেটা ভাবা দরকার।

কমল চৌধুরী, কলকাতা-১৪০

কৌশলী চাল

শুভময় মৈত্র তাঁর ‘তৃণমূলের ধর্ম ও সংস্কৃতি’ প্রবন্ধে রাজনীতির বৃত্তে ধর্মকে টেনে এনে এই রাজ্যের যুযুধান দু’টি দলের মধ্যে যে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির খেলা চলছে, তার একটি সুন্দর কোলাজ তুলে ধরেছেন। নির্বাচন যখন আমাদের দরজায় কড়া নাড়ে, তখনই দেখা যায় ধর্মীয় কার্ড খেলার রাজনীতিতে দুটো দলই মাঠে নেমে পড়ে। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণ ও এই অক্ষয় তৃতীয়ায় তার শুভ উদ্বোধন ভক্তপ্রাণ হিন্দু বাঙালির হৃদয় যে একটু ছুঁয়ে যাবে, এ বিষয়ে তো কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। তবে কেউ যদি ভেবে থাকেন যে, ভক্তিরসে অবগাহন করে এই মন্দিরের উদ্বোধন, তবে বোধ হয় ভুল হবে। সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি যখন তৃণমূলের গায়ে সেঁটে গিয়েছে এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের কাছে এ-যাবৎ এই বিষয়টি একটি নিশ্চিত ভরসাস্থল, তখন হিন্দু ভোটের পাল্লা একটু ভারী করতেই কি এই প্রয়াস? অন্য বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও নিয়োগ-দুর্নীতিতে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোণঠাসা, তখন মন্দিরের উদ্বোধন মানুষের চিন্তাকে একটু অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা নয় তো? পর্যটনকে সমৃদ্ধ করা, না দলীয় রাজনীতির অঙ্গনকে আরও একটু মজবুত করা— মন্দির প্রতিষ্ঠার পিছনে কোনটা যে আসল উদ্দেশ্য, তা ভবিষ্যৎ বলবে।

এক দিকে ইমাম ভাতা, পুরোহিত ভাতা, এবং দুর্গাপুজোর জন্য প্রচুর অনুদান, যা প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে। অথচ, এত দিন রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ দেওয়ার ব্যাপারে শোনা গিয়েছে টাকা নেই, অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতেও অর্থ বরাদ্দ কম হয়েছে। রাজ্যের পরিকাঠামোগত উন্নতি সরিয়ে রেখে খেলা, মেলা, উৎসবে দেদার খরচ করে ভোটের ময়দানে বাজিমাত করলেও, রাজ্যর প্রকৃত উন্নয়ন তাতে একটুও এগোয় না, বরং পিছিয়ে যায়। মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত সত্যিই তৃণমূলের এক কৌশলী চাল। এক দিকে জোটবদ্ধ সংখ্যালঘু ভোট, অন্য দিকে বিজেপির হিন্দু ভোটে পরিমাণমতো ভাগ বসাতে পারলে তৃণমূলের রমরমা ঠেকানো ২০২৬-এর নির্বাচনেও কঠিন হবে। তবে তার জন্য এই দলের শাসনকালে দুর্নীতির যে জোয়ার এসেছিল, তাকে জনগণের মন থেকে মুছে যেতে হবে। সেই বিস্মৃতি অস্বাভাবিক নয়। কে না জানে, ভুলে যাওয়া মানুষের একটি বিশেষ অসুখ।

দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর চব্বিশ পরগনা

সমদর্শী?

সম্পাদকীয় ‘নির্বোধ আস্ফালন’ (১৫-৫) প্রণিধানযোগ্য। সে দিনের ঘটনার এক জন প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী হিসাবে দু’-চার কথা বলতে চাই। আমি ও আমার স্ত্রী সে দিনের নাগরিক মিছিলে যোগ দেওয়ার তাগিদে উপস্থিত ছিলাম। এর আগে অনেক মিছিলেই আমরা এক সঙ্গে হেঁটেছি। কিন্তু এই রকম জঘন্য অভিজ্ঞতা কোনও দিন হয়নি। সম্পাদকীয়তে সে দিনের ঘটনার বর্ণনা যথাযথ ভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে। বিজেপি নামক দলটির প্রকৃত রাজনৈতিক চরিত্রও এই লেখায় খানিক উন্মোচিত। বিজেপির এক নেতা তাঁর কিছু লুম্পেন সহযোগীকে নিয়ে সে দিনের মিছিলে যে ভাবে হামলা চালিয়েছেন, তা শুধু ধিক্কারযোগ্য নয়, ঘৃণা উদ্রেককর। তাঁদের এই কর্মসূচি ছিল পূর্বঘোষিত। প্রচুর সংখ্যক পুলিশও সে দিন উপস্থিত ছিল ঘটনাস্থলে। তা সত্ত্বেও পুলিশের চোখের সামনেই তাঁরা মিছিলে যোগ দেওয়া তরুণ-তরুণী থেকে সত্তরোর্ধ্ব শান্তিকামী নাগরিকদের যথেচ্ছ ভাবে হেনস্থা করেছেন। পুলিশ তাঁদের বিক্ষোভকে ঢাল করে মিছিলে যোগ দেওয়া ৬২ জন নিরপরাধ নাগরিককে গ্রেফতার করে। মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে বেশ বলপ্রয়োগও করে। আমি ও আমার স্ত্রীও ছিলাম এই আটক হওয়ার দলে। নাগরিক সমাজের অনেক পরিচিত প্রতিবাদী মানুষও ছিলেন এই দলে। প্রায় ঘণ্টাছয়েক আমাদের লালবাজারের সেন্ট্রাল লকআপে আটকে রাখা হয়। কেন যে আমাদের গ্রেফতার করা হল, তার যথাযথ জবাবও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। বীভৎস গরমে অনেকেই সে দিন বেশ কাহিল হয়ে পড়েন। ব্যক্তিগত জামিনের কাগজে সইসাবুদ করানোর পরেও দীর্ঘ সময় আমাদের আটক থাকতে হয়। লালবাজারে থাকাকালীন শুনতে পাই, নিগ্রহকারীদের পান্ডা ও তাঁর শাগরেদদেরও নাকি পুলিশ আটক করেছে এবং তাঁদেরও সেখানেই রাখা হয়েছে। হামলাকারী ও আক্রান্তদের প্রতি পুলিশের এই সমদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিই অভূতপূর্ব। কখন আমরা মুক্তি পাব— এই প্রশ্নে পুলিশকর্মীরা দীর্ঘ সময় নিরুত্তর ছিলেন। পরে জানা যায়, দুই ‘গোষ্ঠী’-কে একযোগে ছাড়া যাবে না। তাতে নাকি আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে! আগে হামলাবাজদের ছাড়া হবে, পরে আমাদের। শান্তিকামী জনগণ ও দুষ্কৃতীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে এ রাজ্যের পুলিশের এই অসাধারণ সংবেদনশীলতা ন্যায়ের ইতিহাসে এক অনন্য নজির হয়ে রইল।

দেবকুমার হালদার, কলকাতা-৩৬

পোস্তর ছ্যাঁকা

বাঙালি বাড়িতে নিরামিষ পাত পোস্ত ছাড়া অপূর্ণ। কিন্তু এমন সুভোগ্য জিনিসের আকাশছোঁয়া দামে হাত পুড়ছে মধ্যবিত্তের। এক মাস আগে ভাল মানের পোস্তর দাম ছিল কেজিতে আঠারশো টাকা। এখন কেজি প্রতি বাইশশো টাকা। সম্প্রতি রাজ্য সরকার আফিমের কারবার রুখতে একাধিক এলাকায় পোস্ত চাষ বন্ধ করে দিয়েছে। আগে সরকারের অনুমতি নিয়ে চাষ করা যেত। এখন সেই অনুমতি মেলার ক্ষেত্রেও জারি হয়েছে কড়া নিয়ম। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানের মতো গুটিকয়েক রাজ্যে কেন্দ্র পোস্ত চাষের অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু সেখানেও কমানো হয়েছে চাষের জমি। মুখরোচক পোস্ত থেকে মুখ ফেরানো ছাড়া উপায় নেই বাঙালির।

উৎপল মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC By-Election

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।