E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: পরিবেশের বন্ধু নয়

ব্যাটারিতে থাকা ভারী ধাতু মাটিতে মিশলে তা ভূগর্ভস্থ জল এবং মাটিকে বিষাক্ত করে তুলবে। বর্তমানে বিশ্বে মাত্র ৫ শতাংশের কম লিথিয়াম ব্যাটারি সঠিক ভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয়। বাকি আবর্জনার স্তূপে জমে নতুন এক পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে।

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:৪৪

রাস্তায় সবুজ নম্বর প্লেটের ব্যাটারি চালিত গাড়ি দেখলেই মনে হয়, পরিবেশ দূষণকারী কালো ধোঁয়া থেকে কিছুটা রেহাই মিলল। কিন্তু এর অন্য দিকটা কি আমরা এক বারও ভেবে দেখেছি? আসলে পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক গাড়িও (ইভি) জন্মলগ্ন থেকেই পরিবেশকে প্রভাবিত করে। এর মূলে রয়েছে গাড়ির হৃৎপিণ্ড— ‘লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি’। প্রসঙ্গত, মাত্র ১ টন লিথিয়াম আহরণ করতে মাটির নীচ থেকে প্রায় ২০ লক্ষ লিটার জল খরচ করতে হয়। চিলি বা আর্জেন্টিনার মতো দেশে এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে এবং স্থানীয় জল বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, একটি সাধারণ পেট্রল গাড়ি তৈরি করতে যে পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাসে মেশে, একটি ইভি তৈরির সময় তার চেয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি কার্বন নির্গত হয়। দ্বিতীয়ত, গাড়িটি চলার সময় ধোঁয়া বার করছে না ঠিকই, কিন্তু এর জ্বালানি অর্থাৎ বিদ্যুৎ আসছে কোথা থেকে? ভারতে আজও উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ আসে কয়লা পোড়ানো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। অর্থাৎ, যখন গাড়িটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে, তখন গাড়ির পাইপের বদলে দূষিত ধোঁয়া বেরোচ্ছে কোনও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনি থেকে, যাকে বলে ‘পরোক্ষ দূষণ’।

সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হল, ব্যাটারির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ১০-১৫ বছর পর যখন এই লক্ষ লক্ষ গাড়ির ব্যাটারি বাতিল হবে, তখন তা কোথায় যাবে? এই ব্যাটারিতে থাকা ভারী ধাতু মাটিতে মিশলে তা ভূগর্ভস্থ জল এবং মাটিকে বিষাক্ত করে তুলবে। বর্তমানে বিশ্বে মাত্র ৫ শতাংশের কম লিথিয়াম ব্যাটারি সঠিক ভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয়। বাকি আবর্জনার স্তূপে জমে নতুন এক পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে।

নিঃসন্দেহে ইভি পেট্রল-ডিজ়েল গাড়ির চেয়ে কম দূষণ করে, কিন্তু উৎপাদন থেকে বাতিল হওয়া পর্যন্ত পুরো জীবনচক্র বিচার করলে দেখা যাবে, এটি মোটেও দূষণহীন গাড়ি নয়। ফলে প্রশ্ন তোলা উচিত, ইভি-ই কি শেষ কথা, না কি এটি একটি সাময়িক সমাধান মাত্র?

সৌম্যজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, বাদকুল্লা, নদিয়া

প্রলোভনে পা

যে দিন ভারতীয় মেয়েরা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করে খবরের শিরোনামে আসেন, সে দিন থেকেই কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল এ রকম সংবাদই পরিবেশন করে আসছে যে, শুধু বিরাট অঙ্কের আর্থিক পুরস্কারই নয়, ওঁদের জন্য অপেক্ষা করছে বিজ্ঞাপন জগতের হাতছানিও। ইতিমধ্যেই কয়েক জন ওঁদের সঙ্গে নাকি যোগাযোগও করেছেন।

অভিজ্ঞতায় জানি, বিজ্ঞাপন জগতের লোকেরা সব সময় নতুন বিষয় খোঁজেন, নতুন মুখ সন্ধান করেন। আর ক্রিকেটের সঙ্গে এই জগতের সম্পর্কটি ঘনিষ্ঠ। তিরাশিতে বিশ্বকাপ জয়ের পর অধিনায়ক কপিল দেবের হাসিভরা মুখ এখনও চোখে ভাসে। একটি সহজে ইংরেজি শেখার বইয়ের বিজ্ঞাপন। সুনীল গাওস্কর মুখ দেখালেন স্যুটের বিজ্ঞাপনে। কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তকেও দেখা গেল কয়েকটিতে। আর রবি শাস্ত্রী তো এখনও একটি বিস্কুট সংস্থার বিজ্ঞাপনে বিরাজমান।

এর পর এল সচিন, সৌরভ, দ্রাবিড়দের জমানা। এঁরা সকলেই চুটিয়ে ব্যাট করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ও তৃতীয় জনকে এখনও দেখা যায় পুরনো গাড়ি বা পেট্রল কোম্পানির বিজ্ঞাপনে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখনও যেমন চ্যানেলে শো করেন তেমনই আবার বিজ্ঞাপনও করেন। পরবর্তী কালের ক্রিকেটারদের মধ্যে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের মাঝে-মাঝেই টায়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো বিজ্ঞাপনে দেখতে পাওয়া যায়। তবে বছরভর ক্রিকেট খেলার চাপে সেই সংখ্যা খুব বেশি নয়। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সফল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অবশ্যই এক উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম। ক্যাচ ধরেছেন, ফিনিশার হিসেবে ব্যাট করে ভারতের জন্য বিশ্বকাপও ছিনিয়ে নিয়ে এসেছেন। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও তিনি যথেষ্ট সাবলীল।

এ দিকে, এই প্রজন্মের নতুন অধিনায়ক শুভমন গিল কিন্তু ইতিমধ্যেই নামকরা পোশাকের বিজ্ঞাপনে আত্মপ্রকাশ করে ফেলেছেন। এখনই এই হাতছানিতে সাড়া দিয়ে তিনি ঠিক করলেন কি না জানা নেই। কেননা কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছতে হলে, তাঁকে অনেকটা পথ পেরোতে হবে।

ভয়টা সেখানেই। এখনই এঁদের বিজ্ঞাপনের মুখ করে তোলার প্রয়োজন কী? শুধু একটা বিশ্বকাপ জিতলেই হবে না। ওঁদের সামনে এখনও বিশাল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে, অনেক লড়াই বাকি আছে। এই অবস্থায় প্রলোভন ওঁদের পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করতে পারে। বরং, আগামী মাসেই ডব্লিউপিএল। দেখা যাক, আমাদের মেয়েরা সেখানে নতুন কী কীর্তি স্থাপন করতে পারেন।

প্রশান্ত কুমার বসু, কলকাতা-৩

ঝিল দূষণ

‘অযত্নের সাঁতরাগাছি ঝিল থেকে মুখ ফিরিয়েছে শীতের অতিথিরা’ (১-১২) শীর্ষক খবরটি দুঃখজনক। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি রেলস্টেশনের পাশে এই বিশাল ঝিলটিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারি নাগাদ প্রতি বছর পিনটেল, গ্যাডওয়াল, ইন্ডিয়ান মুরহেন, পন্ড হেরন, করমোরেন্ট, লেসার হুইসলিং ডাক, কটন পিগমি গুজ় প্রভৃতি পাখি দেখা যেত। অথচ, এ বছর এখনও কোনও পাখির দেখা মেলেনি। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ঝিলটির চার দিকে বড় বড় বহুতল আবাস তৈরি হচ্ছে, সে সবের বর্জ্য এসে মিশছে ঝিলটিতে। এর ফলে দুর্গন্ধে ভরে গিয়েছে চার পাশ। তা ছাড়া, ঝিলে শেওলা, কচুরিপানা, জলীয় ঘাস ক্রমাগত বাড়ার ফলে পুকুরটিকে আর ঠিকমতো দেখাই যায় না। ঝিলটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থেকে অনেক আগেই সরে গিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। এখন এর নিয়মিত পরিষ্কার করার দায়িত্ব হাওড়া পুরসভার থাকলেও তারা কাজের বরাত দেয় কেএমডিএ নির্বাচিত সংস্থাকে, তেমনটি খবরে প্রকাশ। সবই হয়তো খাতায় কলমে রয়েছে, তবে কাজের যোগসূত্র রচনা করে কাজটি সময়মতো করাবে কে? সব জায়গায় প্রশাসনিক উদাসীনতা কাজ করলে জনস্বার্থ-সহ পরিবেশ রক্ষা হবে কী করে? কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে ঝিলটি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হয় এবং পরিযায়ী পাখি এখানে ফিরে আসতে পারে।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

হলুদ কই

শহরের বহু রাস্তাতেই ট্র্যাফিক সিগন্যাল সবুজ থেকে সরাসরি লাল হয়ে যায়। মাঝের হলুদ আলো-র দেখাই মেলে না। ফলে বহু গাড়ি অজানতেই ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন করে ফেলে। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না কি সিগন্যাল প্রক্রিয়াতেই পরিবর্তন এসেছে?

কেদারনাথ দাস, কলকাতা-৩৫

কমছে খেজুর

দীপক দাসের ‘শীতের শিউলিরা’ (রবিবাসরীয়, ৩০-১১) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। এক সময় গ্রামবাংলার অতি পরিচিত গাছ ছিল খেজুর গাছ। কিন্তু আজকাল তার দেখা পাওয়াই দায়। এই গাছ হারিয়ে যাওয়ার আরও একটি কারণ শিউলিদের সংখ্যা হ্রাস। খেজুর গাছের পরিচর্যা এবং তার থেকে রস সংগ্রহ করার মূল কারিগর শিউলিরা। এখনও গ্রামবাংলায় যে দু’-চার জন শিউলির দেখা মেলে তাঁদের পরিবারের কেউ আর এই পেশায় আসতে চান না অর্থ সংস্থানের কারণে। এ ছাড়াও গ্রামবাংলায় খেজুর গাছ কেটে, তা ইটভাটাগুলিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে, বাঙালি ভুলতে বসেছে খেজুর গুড়ের তৈরি পাটালি, পিঠেপুলির মিষ্টি স্বাদ।

বাঙালির সাধের খেজুর গুড় বাঁচাতে সরকারের উচিত যথাযথ উদ্যোগ করা।

রতন চক্রবর্তী, উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Electric vehicles Electric Car Nature Environment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy