Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: প্রেমেন্দ্র ও শিবরাম

বন্ধু হয়, সেই ছোটবেলায় স্কুল কলেজে পড়বার সময়। তার পর হয় এনিমি বা নন-এনিমি। এই নন-এনিমি দেরই আমরা বন্ধু বলে ধরি।” তবে, প্রেমেন্দ্রের ব্যাপার আলাদা।

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০০:৩১
Share: Save:

শিশির রায়ের ‘বাংলা সাহিত্য আশ্রয় পেয়েছে তাঁর কাছে’ (পত্রিকা, ১২-৫) পড়ে সমৃদ্ধ হলাম। প্রেমেন্দ্র মিত্র আর শিবরাম চক্রবর্তীর বন্ধুত্ব নিয়েই আরও কিছু বলি। শিবরাম তাঁর আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’তে লিখেছেন, “পৃথিবীতে বড় বয়সের বন্ধু বলে কিছু হয় না। বন্ধু হয়, সেই ছোটবেলায় স্কুল কলেজে পড়বার সময়। তার পর হয় এনিমি বা নন-এনিমি। এই নন-এনিমি দেরই আমরা বন্ধু বলে ধরি।” তবে, প্রেমেন্দ্রের ব্যাপার আলাদা। শিবরাম প্রায়ই বলতেন, “প্রেমেনের মতো মিত্র হয় না।”

এক বার, এক রেস্তরাঁয় বসে খাওয়াদাওয়া করছেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, হেমেন্দ্রকুমার রায়, কাজী নজরুল এবং শিবরাম। স্নেহের আবেগে জাপ্টে ধরে হঠাৎ হেমেন্দ্রকুমার প্রেমেনের গালে একটা চুমু খেয়ে বসলেন। শিবরাম লিখলেন, “গল্প না বৎস, না কল্পনা চিত্র / হেমেন্দ্র চুম্বিত প্রেমেন্দ্র মিত্র।”

প্রেমেন্দ্র তাঁর প্রথম প্রকাশিত ছোটগল্পের বই ‘পুতুল ও প্রতিমা’ উৎসর্গ করেন শিবরামকে। সেই প্রসঙ্গে শিবরাম লিখছেন, “অনেকদিন পরে ‘পুতুল ও প্রতিমা’র দ্বিতীয় সংস্করণ বেরুল সিগনেট থেকে। তার একখানা কপি হাতে পেতে পাতা উল্টে দেখি, বইটা আমার নামেই উৎসর্গ করা। এ কী! আমি অবাক হয়ে গেলাম দেখে। ‘তোমার প্রথম বইটা আমাকেই দিয়েছ দেখছি’, গদগদ কণ্ঠে তাকে বললাম। ‘সে কি! তুমি জানতে না?’ সে শুধালো। ‘না, এই দ্বিতীয় সংস্করণ বের হবার পর টের পেলাম’, আমি বলি— ‘দ্বিতীয় সংস্করণটাই দিয়েছ বুঝি আমায়? প্রথম সংস্করণটা কাকে দিয়েছিলে?’ ‘কেন? তোমাকেই তো! তুমি জানতে না?’ সে হতবাক। ‘বইয়ের প্রথম সংস্করণ একজনকে, দ্বিতীয় সংস্করণ আরেকজনকে— এরকম দেওয়া যায় নাকি! ...আশ্চর্য! বইটা বেরুবার দিনই তো দিয়েছিলাম তোমায়, তোমার বাসায় গিয়ে, মনে নেই? বইয়ের মলাটও উলটে দেখনি নাকি!’ ‘উলটে দেখার কী ছিল? তোমার সব লেখাই তো মাসিকে বেরুনোর সঙ্গে সঙ্গেই পড়া। একবার নয়, বারবার। সেই সব জানা গল্প আবার নতুন করে জানতে যাবার কী আছে— তাই কোন কৌতূহল হয়নি আমার।’ ...মনে পড়ল তখন। হাতে পেয়ে বইটার মলাট দেখেই খুশি হয়েছিলাম। মলাটের পাতা উলটে আরও বেশি খুশি হবার সৌভাগ্য আমার ঘটেনি যে, সেটা আমার ললাট। প্রেমেনের বই তখন লোকের হাতে হাতে চলত, তাই মনে হয়েছিল এই দুর্যোগের দিনে এটাকেও হাতে হাতে চালিয়ে দিই এই সুযোগে। সঙ্গে সঙ্গে এম সি সরকারে গিয়ে বেচে দিয়ে এসেছিলাম বইটা।”

প্রেমেন্দ্রের ‘পাতালে পাঁচ বছর’ বইটি প্রকাশিত হওয়ার কিছু পরেই শিবরাম লিখলেন, পাতালে বছর পাঁচেক’ গল্পটি। এতে লিখছেন— “...তখনই বারণ করেছিলাম গোরাকে সঙ্গে নিতে। ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কোনো বড় কাজে যাওয়া আমি পছন্দ করিনে। আর ঐ অপয়া বইখানা। প্রেমেন মিত্তিরের ‘পাতালে পাঁচ বছর’! যখনই ওটা ওর বগলে দেখেছি, তখনই জানি যে, বেশ গোলে পড়তে হবে...” নিবিড় অন্তরঙ্গতা থাকলে, তবেই না প্রেমেন মিত্তিরের মতো সাহিত্যিকের সাহিত্য নিয়ে এমন মশকরা করা যায়!

গৌরব বিশ্বাস কলকাতা-৫১

প্রেমেন্দ্রের গান

প্রেমেন্দ্র মিত্রের জীবন সম্পর্কিত প্রতিবেদনে, প্রেমেন্দ্রের গান-লেখা নিয়ে সামান্য দু’একটা কথা আছে। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণকারী প্রেমেন্দ্রের এই অজানা দিকটি নিয়ে কিছু সংযোজন অপ্রাসঙ্গিক হবে না। প্রায় শ’খানেক গান লিখেছিলেন প্রেমেন্দ্র, সবই চলচ্চিত্রে। গত শতকের তিনের দশকে এক ঔষধ প্রস্তুতকারক সংস্থায় বিজ্ঞাপন লেখার কাজ করার সময় তাঁর পরিচয় হয় চিত্রকর ও চিত্র-পরিচালক চারু রায়ের সঙ্গে যিনি বিজ্ঞাপনের ছবি আঁকতেন।

চারু রায়ের অনুরোধে তিনি প্রথম চিত্রনাট্য লিখলেন ‘গ্রহের ফের’ (১৯৩৭) ছবিতে। অতঃপর ফিল্ম কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার ‘রিক্তা’ (১৯৩৯) ছবিতে পেলেন চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনার কাজ। এ ছবির সঙ্গীত পরিচালক ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের সনির্বন্ধ অনুরোধে গান লেখেন প্রেমেন্দ্র। এ ছবিতে তাঁর লেখা বিভিন্ন গান ভীষ্মদেবের চমকপ্রদ সুরে এবং অভিনেত্রী-গায়িকা রমলা দেবীর কণ্ঠে বিশেষ ভাবে সমাদৃত হয়। গানগুলি হল: ‘‘চাঁদ যদি নাহি উঠে’’, ‘‘আরও একটু সরে বসতে পার’’।

এর পর ১৯৬০ পর্যন্ত সমসীমায় নানা ছবিতে গান লিখেছেন প্রেমেন্দ্র। তাঁর লেখা কয়েকটি অসামান্য গান: ‘প্রতিশোধ’ (১৯৪১) ছবিতে শচীন দেববর্মনের সুরে ‘‘জানি না কোথায় আছি— রাশিয়া কিংবা রাঁচী’’ (শিল্পী: রমলা দেবী, ‘যোগাযোগ’-এ (১৯৪৩) কমল দাশগুপ্তের সুরে ‘‘যদি ভাল না লাগে’’, ‘‘হারা মরু নদী’’ (শিল্পী: কানন দেবী), ‘‘এই জীবনের যত মধুর ভুলগুলি’’ (শিল্পী: রবীন মজুমদার), ‘সাধারণ মেয়ে’ (১৯৪৮) ছবিতে রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘‘দাঁড়াও না দোস্ত’’ (শিল্পী: ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য), ‘হানাবাড়ি’ (১৯৫২) ছবিতে পবিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘‘হাওয়া নয় ও তো হাওয়া নয়’’, ‘হাত বাড়ালেই বন্ধু’ (১৯৬০) ছবিতে নচিকেতা ঘোষের সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘‘এ শহরে সবই বিকায়’’ ও ‘‘শরীরখানা গড়ো’’ ইত্যাদি।

তাঁর মাত্র তিনটি বেসিক গানের সন্ধান মেলে। জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর ১৯৬৪-তে লিখেছিলেন— ‘‘নেহরু অমর’’ ও ‘‘সেই দিশারী’’— সুরকার-শিল্পী শ্যামল মিত্র। শ্যামল মিত্রই তাঁর লেখা একটা গান রেডিয়োর রম্যগীতিতে গেয়েছিলেন ‘‘চেয়েই বারেক দ্যাখো না’’।

প্রেমেন্দ্রের কিছু কবিতা সুর পেয়ে গানে পরিণত হয়েছে। যেমন ‘‘সাগর থেকে ফেরা’’ (শিল্পী: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুর: সুধীন দাশগুপ্ত), ‘‘আমি কবি যত কামারের’’ ও ‘‘অগ্নি-আখরে আকাশে যাহারা’’ (শিল্পী: সবিতাব্রত দত্ত, সুর: পবিত্র চট্টোপাধ্যায়), ‘‘আমায় যদি হঠাৎ কোনও ছলে’’ (শিল্পী: তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুর: অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়)।

স্বপন সোম কলকাতা-৩৭

আকাশ আড়াল

এক সাত বছরের কন্যা তার ঠাকুরদার বুকের পাঁজর। বাড়িতে সারা ক্ষণ দু’জনের হুড়োকুস্তি চলে। ক’দিন আগে তার ঠাকুরদা আদর করতে গেলে সে বিজ্ঞ গলায় জানিয়েছে, মা বলেছে, সে এখন বড় হচ্ছে। তাকে যেন গায়ে হাত দিয়ে আদর করা না-হয়। মৌ ঘোষের প্রতিবেদন ‘যদি একা পেয়ে...’ (১৯-৫) পড়তে পড়তে মনে পড়ল ঘটনাটা। গত কয়েক বছর হল শিশুদের উপর পাশবিক আচরণের বৃত্তান্ত ঘন ঘন উঠে আসছে মিডিয়ায়। কন্যাশিশুদের উপর বয়স্ক বা নিকটাত্মীয়দের যৌন অত্যাচার পরিবার ও সমাজের এক পুরনো পাপ। আগেও ঘটত এমন ঘটনা, তখন লোকলজ্জার ভয়ে ঘটনাগুলি পাঁচ-কান না করে ভিতরে ভিতরে সমাধান খোঁজার চেষ্টা হত। এখন দিনকাল বদলেছে। মিডিয়ার আওতা বাড়ছে। চাহিদার জোগান দিয়ে লাভের কড়ি ঘরে তোলার কাজে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে সংবাদমাধ্যমগুলি। তাতে কিন্তু এই সব ঘৃণ্য অপরাধ কমার বদলে বেড়েই চলেছে। সুস্থ-সহজ সম্পর্কগুলির উপর এই রকম ঘটনার কালো ছায়া পড়লে পরিবার ও সমাজের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। আমরা দ্বীপবাসী হয়েছি অনেক আগেই, উত্তরপ্রজন্ম ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠবাসী হয়ে পড়বে এই বিভাজনে। শিশুরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘গুড টাচ’ ‘ব্যাড টাচ’-এর তফাত বোঝে না। কিলিয়ে কাঁঠাল পাকাতে গেলে ফল ভুগতে হবে। মেয়েদের যদি শিশুকাল থেকে ভিতর-বাইরের যে কোনও পুরুষকে যৌন নির্যাতনকারী ভাবতে শেখানো হয়, তাদের মানুষী বিকাশের পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে। সবচাইতে বড়, কোনও ছেলেকে সে কোনও দিনই বন্ধু ভাবতে পারবে না। অসুস্থতা অসুস্থতাই। যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন তার। কিন্তু কী ছেলে কী মেয়ে, কারও কাছেই অর্ধেক আকাশে আবডাল দিয়ে রাখা যুক্তিযুক্ত নয়।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি শ্রীরামপুর-৩, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Premendra Mitra Shibram Chakraborty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE