E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু:সংযম জরুরি

রিল-এর আপাতদৃষ্টিতে সাদামাটা, নির্ভেজাল বিষয়বস্তুগুলি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সেগুলো হয়তো কিছু মানুষের সামান্য অর্থ উপার্জনের একটি পথ কিংবা নিজেকে ক্ষণিকের জন্য সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলার এক নিরীহ প্রয়াস।

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:৪৫

মধুমিতা দত্তের ‘রিল-দুনিয়ার আঁধার সাম্রাজ্য’ (১১-৯) শীর্ষক প্রবন্ধটিতে মোবাইল আসক্তি ও তার পরিণামের দিকটি সুন্দর বিবৃত হয়েছে। ক্ষণিকের দৃশ্যসুখের বাসনায় সমাজের বিভিন্ন বয়সি, ভিন্ন রুচি ও মানসিকতার অসংখ্য মানুষ আজ রিল-এর মায়াজালে আবিষ্ট। মোবাইল ক্যামেরায় গৃহীত এবং পরবর্তী কালে সম্পাদিত ও সম্প্রচারিত রিল-ভিডিয়ো প্রস্তুতকারীদের পোশাকি নাম ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’। এ ক্ষেত্রে, কনটেন্ট অর্থাৎ বিষয়বস্তু যা-খুশি-তাই হতে পারে।

রিল-এর আপাতদৃষ্টিতে সাদামাটা, নির্ভেজাল বিষয়বস্তুগুলি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সেগুলো হয়তো কিছু মানুষের সামান্য অর্থ উপার্জনের একটি পথ কিংবা নিজেকে ক্ষণিকের জন্য সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলার এক নিরীহ প্রয়াস। বেশ কিছু শিক্ষণীয় বিষয়ও যে এখানে থাকে, তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু বহু রিল-ভিডিয়োয় হিংস্রতা, প্রশিক্ষণহীন হওয়া সত্ত্বেও বেপরোয়া কোনও কাজ করা, স্থানীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী বিষয়বস্তু নির্বাচন, যৌনতার মোড়কে তৈরি ঘটনার মতো বিষয়বস্তুও অবাধে প্রদর্শিত হয়। এগুলি নিয়ন্ত্রণ করা অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ, এ ধরনের রিল সকল শ্রেণির মানুষ, বিশেষত বয়ঃসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোর-কিশোরীদের মনে নিঃসন্দেহে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে।

যে-হেতু সমস্ত বয়সের মানুষই এই নতুন ‘ট্রেন্ড’-এ ক্রমশ আসক্ত হয়ে উঠেছে, তাই প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। তবে এটাও ঠিক যে, লাগামের রাশ শুধু নীতিনির্ধারক, প্রশাসন কিংবা সম্প্রচারক সংস্থার হাতেই থাকবে, এমনটাও নয়। চাইলে আমরা, সাধারণ মানুষরাও এই প্রবণতাকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তবে, তার জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা, সুচিন্তা, শুভবুদ্ধি এবং আত্মসংযম। আমরা প্রস্তুত তো?

অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

নিজের দায়িত্ব

মধুমিতা দত্তের প্রবন্ধটি সময়োপযোগী এবং প্রাসঙ্গিক। আমরা এখন এমন এক ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে সমাজমাধ্যমের সাহায্যে নিজেকে সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলাই জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে ‘কনটেন্ট কালচার’ আমাদের সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। কিশোর বা নাবালকরাও বাদ যাচ্ছে না এ সব চটুলতা থেকে। আমাদের মধ্যে কেউ দর্শক, কেউ সরব প্রশ্রয়দাতা, কেউ আবার নীরব উস্কানিদাতা। বহু কনটেন্টের ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে এক ভয়াবহ সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিপন্নতা, যা সমাজকে গভীর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যে কনটেন্ট ক্রিয়েটরের যত বেশি ভিউ, তিনি আজ তত বেশি গুরুত্বের দাবিদার। আজ যে সমস্ত রিল ভাইরাল হয়, তাতে গঠনমূলক বা নান্দনিক মূল্য কতটুকু থাকে?

তবে সব ক্রিয়েটরই এই তুচ্ছতার রাস্তায় হাঁটেন না। এঁদের মধ্যে কেউ শিক্ষামূলক, সৃষ্টিশীল, নান্দনিক বা সামাজিক ভাবে প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট তৈরি করেন। তাঁদের সংখ্যা কম হলেও, তাঁদের প্রভাব গভীর। তাই আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দায়িত্ব, আমরা কী দেখছি, কী শেয়ার করছি, কোন কনটেন্ট-এর ভিউ বাড়িয়ে উৎসাহ দিচ্ছি, সেই নিয়ে একটু ভাবনাচিন্তা করা। যাতে আগামী দিনে সমাজের এই অসুখের উপসর্গগুলো আটকানো যায়।

প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত, ব্যান্ডেল, হুগলি

গোপনীয়তা কই

মধুমিতা দত্তের প্রবন্ধ নিয়ে কিছু কথা। উনি লিখেছেন, “আর এক গোত্রে যাঁরা পড়েন, তাঁরা রীতিমতো ‘সাহসী’ এবং মরিয়া। তাতে গ্রাম, শহর, শিক্ষা, অশিক্ষার ভেদ নেই।... কাউকে দেখা যাচ্ছে রাতপোশাকে। শুধু লজ্জাবস্ত্রেই ক্যামেরায় আসছেন। উদাহরণ অগণন।” তবে কি ধরে নেওয়া হবে যে, অভিধান থেকে ‘প্রাইভেসি’ বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কথাটি উঠে গেল? মোবাইল, বিশেষত স্মার্টফোন আসার পর থেকে অনেকেই জনপরিসরে শালীনতার ধার ধারেন না। ফোনের ও-পারের ব্যক্তির সঙ্গে ঝগড়া, গালমন্দ সবই নির্দ্বিধায় করে যান। তবে কি আমাদের সমাজ বদলাচ্ছে? আধুনিকতা আর ব্যক্তিস্বাধীনতার মুখোশ পরে সমাজ কি তবে আক্ষরিক অর্থে বে-আব্রু হয়ে যাচ্ছে? প্রবন্ধকার লিখেছেন, “রিল-সংস্কৃতির নামে ‘অপরিস্রুত’ কনটেন্ট দুনিয়া জুড়ে ছড়াতেই থাকবে। এই সুনামিতে কোথাও একটা ছাঁকনির বা জোর ঝাঁকুনির প্রয়োজন। প্রশাসন, আইনবিভাগ এবং সমাজ— সকলেরই জেগে ওঠার সময় এসেছে।” তাঁর এই সাবধানবাণীতে আজ কোনও কাজ হবে কি?

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭

অসুন্দর

জহর সরকারের ‘লন্ডন নাহয় না-ই হল’ (১২-৯) লেখাটি যথাযথ। কলকাতা মহানগরীর আজকের এক নিখুঁত চালচিত্র তুলে ধরেছেন তিনি। শহরের অধিকাংশ ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছে, পথচারীর হাঁটার কোনও জায়গা নেই। মাথার উপরে ঝোলে খেলনা থেকে পোশাক— নানা দ্রব্য। সেগুলোর গা বাঁচিয়ে, চলাই দায়। প্লাস্টিকে মোড়া ওই স্টলগুলো যেমন বিপজ্জনক, তেমনই কুশ্রী। আগুন লাগলে সব ছাই হওয়ার আশঙ্কা দমকল আসার আগেই। তেমন কয়েকটি ঘটনাও ঘটে গিয়েছে ইতিমধ্যে।

আর, রাস্তার এ দিকে-সে দিকে নানা খানাখন্দ, না দেখলে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে হয়। তা ছাড়া গোটা শহর হোর্ডিংয়ে ছয়লাপ। বস্তিগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। প্লাস্টিক ও ছেঁড়া কাপড়চোপড়ের স্তূপ পড়ে থাকে চতুর্দিকে। সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। বাইরে নীল-সাদা রঙের চাকচিক্য থাকলেও, ভিতরে অব্যবস্থার চূড়ান্ত, ব্যস্ত সময়ে বহু ক্ষণ অপেক্ষা নিয়মিত ঘটনা। মানছি এই শহরের জনসংখ্যা বিপুল, সমস্যাও অনেক। কলকাতা লন্ডন হয়নি, হবেও না। কিন্তু সে সব সত্ত্বেও এ শহরটাকে কিছুটা সুন্দর করা যেত না কি? এতটা হতশ্রী চেহারা হয়ে গেল কেন? দেশের অন্য বড় শহরগুলো তো এতটা অসুন্দর হয়ে যায়নি।

অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪

শোচনীয় হাল

গত ১৩ অক্টোবর পরিবার ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে দিঘা ভ্রমণ সেরে সংরক্ষিত আসনের টিকিটে ট্রেনে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনের দেরিতে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হল। কোনও দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়া এই স্বল্পদূরত্বের ট্রেনও যে এমন অস্বাভাবিক বিলম্বে চলতে পারে, তা আমরা আগে কখনও দেখিনি। দিঘা থেকে হাওড়া তিন ঘণ্টা কুড়ি মিনিটের পথ। এ দিকে ট্রেন ছেড়েছে পাঁচ ঘণ্টার বেশি বিলম্বে। আর হাওড়ায় পৌঁছেছে নির্ধারিত সময়ের ছ’ঘণ্টা কুড়ি মিনিট বিলম্বে। ট্রেনের হকার ও কতিপয় সহযাত্রীর কথায় জানতে পারলাম, দিঘা চলাচলকারী ট্রেনের এই অস্বাভাবিক বিলম্ব এখন একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার নাকি এমনটা হচ্ছেই। এই বিলম্বিত ট্রেন পরিষেবায় রেলের শুধু আর্থিক ক্ষতিই যে হচ্ছে তা নয়, তার ‘ইমেজ’ও কি অক্ষত থাকছে? অমৃতকালের ভারতে নিত্যনতুন দ্রুতগতির ট্রেন চালু হচ্ছে। তার পাশে রেল-পরিষেবার এই শোচনীয় হাল কি মানানসই?

পদ্মাবতী বসু, কলকাতা-৩৪

ফুটপাতে বালি

রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে ভবানী সিনেমার উল্টো দিকের ফুটপাতটি দিয়ে আগে হাঁটাচলা করা যেত। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে সেখানে বালি ও স্টোন চিপস ডাঁই করে রাখা। কারণ পাশেই চলছে নির্মাণকাজ। কী করে নির্মাণকর্তারা জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য গড়া ফুটপাতের উপর বালি ও স্টোন চিপস ফেলে রাখতে পারে?

সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৩২

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

reel video Social Media Trend

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy