E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ভোলা যাবে না

আশি এবং নব্বইয়ের দশকে দূরদর্শনে সম্প্রচারিত টিভি অনুষ্ঠানগুলিতে আসরানী এক জন পরিচিত মুখ ছিলেন। তিনি আশির দশকের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান নটখট নারদ-এ নারদ মুনির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৪৪

চিরশ্রী মজুমদারের “‘মজার ফাঁদ’ কেটে বেরিয়ে” (১-১১) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। মেহমুদ-উত্তর হিন্দি ছবির পরিসরে আসরানীর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর মুখে শোলের ‘হম অংরেজোকে জ়মানেকে জেলর হ্যায়’ সংলাপকে আজও ভুলতে পারেন না চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বুঁদ থেকেছে তাঁর কমিক টাইমিং-এ। পাঁচ দশকের উপর চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। সত্তর দশক হয়তো তাঁর কেরিয়ারের সোনার সময় ছিল। তাঁর অনেক সফল চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে মেরে অপনে, কোশিশ, বাওয়র্চি, পরিচয়, অভিমান, চুপকে চুপকে, ছোটি সি বাত, রফু চক্কর এবং অবশ্যই শোলে। তা ছাড়া নমক হারাম, চোর মচায়ে শোর, গুড্ডি, বালিকা বধূ, এক দুজে কে লিয়ে, ঘর পরিবার, অনুরোধ, হীরালাল পান্নালাল, বাগবান, চুপ চুপ কে, গরম মসালা উল্লেখযোগ্য। তাঁর সংলাপ বলার ধরন এত সুন্দর ছিল যে শুধু দশকের পর দশক দর্শকই নয়, সমালোচকরাও তাঁর ঢালাও প্রশংসা করতেন। আসরানী চলা মুরারী হিরো বননের মতো কিছু ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন, পরিচালনাও করেছেন। এই তালিকায় সালাম মেমসাব ছবিটিও উল্লেখযোগ্য। গুজরাতি সিনেমাতেও তিনি তাঁর বিস্ময়কর প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। মূলত পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেও সব চরিত্রকেই নতুন নতুন রূপ দিতেন। কৌতুকাভিনেতা হিসাবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

গোবর্ধন আসরানী শুধুমাত্র তাঁর দীর্ঘ এক চলচ্চিত্র তালিকাই রেখে গেলেন না, বরং নির্মল হাসি এবং কালজয়ী সংলাপে ভরা এক উত্তরাধিকারও রেখে গেছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রে লক্ষ লক্ষ মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা চরিত্রগুলি তাঁর কারণেই বেঁচে থাকবে, মনে রয়ে যাবেন শিল্পী। আশি এবং নব্বইয়ের দশকে দূরদর্শনে সম্প্রচারিত টিভি অনুষ্ঠানগুলিতে আসরানী এক জন পরিচিত মুখ ছিলেন। তিনি আশির দশকের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান নটখট নারদ-এ নারদ মুনির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। অভিনেতা মূলধারার চলচ্চিত্রগুলিতে কমিক চরিত্রের কারণে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন, সূক্ষ্ম পরিস্থিতিগত হাস্যরস থেকে শুরু করে অতিরঞ্জিত অভিনয় পর্যন্ত তাঁর অনায়াস যাতায়াত ছিল। তবে তিনি কেবলমাত্র এক জন কৌতুকাভিনেতা নন, এক সফল ও সম্পূর্ণ অভিনেতা, নানা রঙের চরিত্রেই তিনি কিন্তু স্বকীয়তা সৃষ্টি করতে পেরেছেন।

অভিজিৎ রায়, জামশেদপুর

বিপদের ডাক

দক্ষিণবঙ্গের মূলত গ্ৰামীণ এলাকার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদনদী, যেমন দামোদর, রূপনারায়ণ, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, কংসাবতী প্রভৃতি থেকে অবৈধ ভাবে বালি চুরির প্রবণতা দীর্ঘ দিনের। অতীতে নৌকায় চড়ে সাবেক পদ্ধতিতে বালতি দিয়ে এবং বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির নানাবিধ যন্ত্রের সাহায্যে এ-হেন বেআইনি কাজ চলছে পুরোদমে। চোরাগোপ্তা এই কারবারের আওতায় রয়েছে চরের উর্বর মাটি, সাদা বালি ইত্যাদিও। যা রাতের অন্ধকারে ইতিউতি স্তূপাকারে মজুত করার পর ট্রাক, পিক‌-আপ ভ্যানে চোরাচালানের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এর ফলে, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গতিপথ পরিবর্তনের সম্ভাবনা তো থাকেই, এক‌ই সঙ্গে, যে অংশে বালি উত্তোলন করা হল দিনের পর দিন, সেই অংশ-সংলগ্ন পাড় দুর্বল ও বিপজ্জনক হয়ে ভাঙন বৃদ্ধির আশঙ্কাকেও উড়িয়ে দেওয়া চলে না। এখন প্রশ্ন হল, যে সরকারি বিভাগসমূহ এ ধরনের আইনবিরুদ্ধ কার্যকলাপ প্রতিরোধে দায়বদ্ধ, তাদের ভূমিকা কী?

যদিও, বিধিবহির্ভূত উপায়ে নদী থেকে যথেচ্ছ বালি উত্তোলনের প্রসঙ্গ যত বার‌ই এসেছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনিক মহল অথবা পুলিশ কর্তৃপক্ষের একাংশের সঙ্গে বালি-মাফিয়াদের নিবিড় যোগসাজশের অভিযোগ। আর, ভূমি এবং সেচ দফতরের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিচু তলার কর্মচারী— বরাবরের মতো তাঁরা বিষয়টিকে রেখেছেন অভিযোগের ভিত্তিতে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্ৰহণের আশ্বাসের পর্যায়েই। সমস্যার প্রতিবিধানে পদক্ষেপ বলতে এটুকুই কি যথেষ্ট? এ দিকে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শিবির ও প্রশাসনের সমঝোতার মাঝে আমজনতা নীরব দর্শক ছাড়া কিছু নয়। পরিবেশকর্মীদের আন্দোলন‌, কর্মসূচিও নিষ্ফলা, অসার! স্রেফ সঙ্কীর্ণ স্বার্থরক্ষায় প্রকৃতির উপর মানবসমাজের নির্মম নিপীড়ন যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে রূপান্তরিত হয়ে প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে জীবকুলের দিকে, ইঙ্গিত দিচ্ছে আর‌ও বড় আকারের ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের, তার পরেও কি কোন‌ও শিক্ষা নেব না আমরা?

তন্ময় মান্না, উলুবেড়িয়া, হাওড়া

বিদায়বেলার যত্ন

সোমা মুখোপাধ্যায়ের ‘উপশম চিকিৎসা কোথায়’ (৭-১১) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। বিগত কয়েক দশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অসামান্য উন্নতি হয়েছে নিঃসন্দেহে, প্রান্তিক অঞ্চলে নিম্ন বা মধ্যম আয়ের মানুষও আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে আমাদের দেশে মানুষ সরকারি চিকিৎসা পরিষেবাই বেশি গ্রহণ করে থাকেন। এর প্রধান কারণ অর্থনৈতিক ভাবে এখনও অধিকাংশ মানুষই পিছিয়ে আছেন। সাধারণ মানুষ অসুখবিসুখে পড়লে প্রয়োজনে ঘটি-বাটি বেচে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হন।

বেশ কিছু দিন আগে কাছের মানুষের মৃত্যু দেখেছি ক্যানসারে, মাত্র সত্তর দিনের মধ্যে। প্রথমে কোমরে ব্যথা দিয়ে শুরু। রিপোর্ট হাতে আসার পর ক্যানসারের লক্ষণ দেখা গেল। খুব তাড়াতাড়ি ক্যানসার বিশেষজ্ঞকে দেখানোর পরামর্শ এল। সেখানে বেশ কিছু পরীক্ষা, বায়প্সি রিপোর্ট, ক্যানসারের উৎস খোঁজার জন্য আবার বেশ কিছু পরীক্ষা। মাঝখানে এক সপ্তাহের জন্য সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হল। এ দিকে রোগীর শরীর জুড়ে অস্বস্তি, কোমরের ব্যথা দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। শরীরের ওজন কমছে, খেতে পারছেন না। প্রথম দিকে শরীর একটু নাড়াচাড়া করতে পারলেও শেষের দিকে একদম নড়াচড়া করতে পারছিলেন না। একটা সময় কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল, সারা শরীরে বিপুল পরিবর্তন, শেষে জন্ডিসে আক্রান্ত হলেন। একটা তরতাজা মানুষ মাত্র সত্তর দিনে চোখের সামনে মৃত্যুর কাছে চলে গেলেন।

এখনও বহু মানুষ অসহায় ক্যানসারের কাছে। অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারে কেউ আক্রান্ত হলে রাতারাতি লোকজন দিশাহারা হয়ে পড়েন। শেষের দিকে ধরা পড়লে সেই অর্থে অনেক সময় কিছু করারও থাকে না। এমন সময় রোগীকে উপশম চিকিৎসার ভরসা দেওয়া জরুরি। বহু হাসপাতাল এমন রোগীকে ভর্তিও নিতে চান না। বাড়িতে এমন রোগীর যত্ন বেশ কঠিনই। অক্সিজেন, স্যালাইন থেকে শুরু করে মরফিন প্রয়োগ— সবটাই সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে। এ নিয়ে গভীর ভাবে ভাবা প্রয়োজন। বিদায়ের মুহূর্ত আরও মানবিক করা যায় না কি? সরকারি হাসপাতালে ক্যানসারের রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থার সীমা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। অন্তিম মুহূর্তে যেন যতটা সম্ভব কম কষ্ট নিয়ে যেতে পারেন একটা মানুষ, এই সামান্য আশাটুকু পূরণ করতে পারে না রাষ্ট্র?

সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

মানবিক দাবি

সোমা মুখোপাধ্যায়ের ‘উপশম চিকিৎসা কোথায়’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। কতটা অসহনীয় এই পরিস্থিতি যে, প্রিয়জনকে শেষ সময়ে প্রবল যন্ত্রণা পেতে দেখলেও বাস্তবে কিছু করার কোনও উপায় থাকে না।

সরকারি ব্যবস্থাপনায়, প্রশাসনের সদিচ্ছায়, সরকারি হাসপাতালে এই উপশম চিকিৎসা খুবই সহজলভ্য হওয়া উচিত। সদিচ্ছা এবং পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা একমাত্র বিধেয়। এক জন মানুষের জীবনের শেষ পর্যায়ে কিছু বেসরকারি চিকিৎসা-প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে এই পরিষেবা দিয়ে থাকে। নিরুপায় হয়ে ঘটি-বাটি বিক্রি করেও শুধু প্রিয়জনের কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে এবং চোখের সামনে মৃত্যুকে না দেখার জন্য রোগীর পরিজনরা সেই পথে হাঁটতে বাধ্য হন। প্রশাসনের এই ক্ষেত্রে মানবদরদি হয়ে ওঠা প্রয়োজন। অন্তত এক সময় নিজের অমূল্য ভোট দেশের গণতন্ত্রের প্রতি উৎসর্গ করেছিলেন, সেই বিশ্বাসটুকুর বিনিময়ে রোগী তাঁর অন্তিম মুহূর্তগুলিতে একটু যত্ন কি আশা করতে পারেন না?

দেবাশীষ দত্ত, কলকাতা-৬৩

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bollywood Actor

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy