Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: নতুন অমর আকবর...

এক কন্যা খ্রিস্টান মিস জয়েস বিশ্বাস, এক কন্যা মুসলমান মিস রাহেলা খাতুন বেগ, আর এক কন্যা হিন্দু ব্রাহ্মণ— মিস গায়ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

দেশ জুড়ে যখন সাম্প্রদায়িকতা রোখার লড়াই চলছে, তখন তিন কন্যার এক পরিবারের কথা সবাইকে চমকে দেবে। এক কন্যা খ্রিস্টান মিস জয়েস বিশ্বাস, এক কন্যা মুসলমান মিস রাহেলা খাতুন বেগ, আর এক কন্যা হিন্দু ব্রাহ্মণ— মিস গায়ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁরা তিন জন দীর্ঘ দিন সহকর্মী ছিলেন সিঙ্গুরে, কমিউনিটি হেল্‌থ ডিপার্টমেন্টে। অবসর নেওয়ার পর এক সঙ্গে বসবাস কল্যাণীতে। একই বাড়িতে। এঁদের মধ্যে কেউই বিয়ে করেননি। চমৎকার জীবন কাটিয়েছেন। একে অপরকে দেখভাল করেছেন। মিস জয়েস প্রথমে মারা গেলেন। তার পর এই ২০১৮-তে মিস বেগ। এখন আছেন মিস বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজে হাতে জীবনের শেষ দিনগুলোতে মিস বেগ-এর সেবা করেছেন। কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কী করে তাঁরা এক সঙ্গে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। অবাক করা উত্তর দিলেন। বললেন, তাঁর মা মিস বেগ-এর কর্মকাণ্ড দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর মেয়েকে প্রস্তাব দেন, ‘‘ওর (মিস বেগ-এর) তো কেউ নাই, তুই অর লগে থাকিস।’’
তিন কন্যাই উচ্চপদে চাকরি করতেন। আপদে, বিপদে অসুস্থতায় একে অপরকে দেখভাল করেছেন। গায়ত্রী দেবীকে প্রশ্ন করলাম, কোনও দিন ঝগড়াঝাঁটি, মন কষাকষি হয়নি? বললেন, ‘‘খুব হয়েছে। এক সঙ্গে থাকলে যেমনটি হয়। কান্নাকাটি, ঝগড়া, বাড়ি ছেড়ে চলে যাব বলা— সবই হয়েছে। আবার গলা জড়িয়ে একে অপরকে বলেছি, আমার আর কে আছে।’’
মিস বেগ তাঁর কর্মক্ষেত্রে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন, সেবিকার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গল অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন। ধর্মাচরণ নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম গায়ত্রী দেবীকে। বললেন, ‘‘আমাদের ঘরে বিশেষ কোনও ঠাকুর দেবতা নেই। পুজোআচ্চাও নেই। তবে মিস বেগ সারদা মা, জিশু এঁদের ছবির সামনে ধূপকাঠি জ্বালাতেন।’’
কল্যাণী বি-২’এর অধিবাসী এঁরা। সকলে ওঁদের বাড়ির নাম দিয়েছে— ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’র (ছবিতে একটি দৃশ্য) বাড়ি। চমৎকৃত হই ওঁদের কথা ভেবে। একে নারী, আবার অবিবাহিত এবং ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী, আবার বেশ কয়েক দশক আগের। কল্যাণীর এই তিন কন্যার কাহিনি আজকের দিনে একটি বিরল দৃষ্টান্ত। মানবিকতার জয়গাথা।
দুর্গা ঘোষাল
কল্যাণী, নদিয়া

সরকার ও শিক্ষা


‘মুক্ত বাজার থেকে মুক্তি জরুরি’ (১৩-৯) শীর্ষক নিবন্ধে কুমার রাণা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। আমাদের দেশে যত দিন যাচ্ছে, তত সরকার শিক্ষায় অর্থ বরাদ্দ হ্রাস করছে। শিক্ষাবিদ ও জনসাধারণের দাবি ছিল, শিক্ষায় বিনিয়োগ জাতীয় আয়ের ১০% করতে হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর কোনও সরকারই তা করেনি। উপরন্তু ১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল, সরকারের পক্ষে শিক্ষার সব ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়, এ জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এর পর থেকে যশপাল কমিটি, ন্যাশনাল নলেজ কমিশন প্রভৃতি যে সব কমিটি/ কমিশন সরকার গঠন করেছে, তারাও এ কথাই বলেছে।
২০০১ সালে গঠিত বিড়লা-অম্বানী কমিটি বলেছিল, “শিক্ষাক্ষেত্রে মুনাফার হার অন্য সব সেক্টরে মুনাফার হারের তুলনায় বেশি।’’ (অনুচ্ছেদ ১.৪)। তাই আমরা লক্ষ করছি, যে সরকারই ক্ষমতাসীন হোক না কেন, তারা ধনিক শ্রেণিকে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করে মুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দিচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে যত মন্দা দেখা দিচ্ছে, ধনিক শ্রেণি পুঁজি শিল্পে বিনিয়োগ করতে না পেরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চাইছে। সরকারগুলিও শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের পুঁজি বিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। তারা গ্যাটস-এর (General Agreement on Trade in Services) শর্ত মেনে শিক্ষাকে বিশ্ববাজারের পণ্যে পরিণত করতে চেষ্টা করছে। আমাদের দাবি তোলা দরকার: শিক্ষার বেসরকারিকরণ বন্ধ হোক, শিক্ষার ব্যয়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে।


প্রদীপ কুমার দত্ত
অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ,
প্রেসিডেন্সি কলেজ

ছুটির কারণ


‘শিক্ষকের ছুটি’ (২৯-৬) চিঠি প্রসঙ্গে কিছু বক্তব্য। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘অনেক ছুটি’— এটা অনেকেরই ঈর্ষা। মানতে হবে, শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের
কাজ এক নয়। ছোট্ট একটা উদাহরণ, ‘ঢাকে কাঠি পড়লে’ ছাত্রদের আর পড়ায় মনে বসে না; কিন্তু অফিস চলে। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। প্রমাণ দেব, শিক্ষকদের ছুটি
বেশি নয়, ছুটি ছাত্রদের। যাদের জন্য বিদ্যালয়।আমরা হয়তো অনেকেই ভুলে গিয়েছি, বিদ্যালয়ে বছরে ছুটির তালিকা সর্বপ্রথম প্রণয়ণ করেন স্বয়ং বিদ্যাসাগর। সুকোমলমতি ছাত্রদের জন্য তিনি বছরে ছুটি রেখেছিলেন মোট ৮৫ দিন। কোন তারিখ, কিসের জন্য, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন। পরে ৭৫ দিন ছুটির কথা হয়েছিল। কিন্তু বিবেচনা হয়নি। বর্তমানে ৬৫ দিন ছুটিই নির্দিষ্ট আছে।
সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতি ও প্রতি শনিবার ছুটি আছে। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করতে হবে, বেশ কয়েকটা বালক/বালিকা বিদ্যালয় আছে, যাদের শনিবার ছুটি। কিন্তু শর্তসাপেক্ষ। যে সমস্ত বিদ্যালয় ১-৪-১৯৮১ সালের আগে থেকে ৮ পিরিয়ড ক্লাস করছে (ক্লাস ফাইভ থেকে টেন), তাদের শনিবার ছুটি। বাকি সব বিদ্যালয় শনিবার অর্ধদিবস। এখন দেখা যাক, শিক্ষকদের ও সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কাদের ছুটি বেশি।
বিদ্যালয়ে বছরে দু’টি বড় পরীক্ষা। ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক। এ ছাড়া মাসিক, প্রি-টেস্ট, টেস্ট তো আছেই। গরমের ছুটিতে শিক্ষকের কাজ বিভিন্ন শ্রেণি ও বিভাগ (ষাণ্মাসিক ও প্রি-টেস্ট)-এর খাতা দেখা এবং প্রাপ্ত নম্বর যথাযথ লিখে রাখা। এই ছুটির মধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখা বাধ্যতামূলক। এই খাতা দেখার দু’তিন সপ্তাহ পর হবে পরীক্ষিত খাতাগুলির স্ক্রুটিনি। চলে প্রায় এক মাস। হ্যাঁ, এই হল শিক্ষকদের গরমের ছুটি।
গরমের ছুটির পর যে দিন বিদ্যালয় খোলে, ক্লাস ফাইভ থেকে ক্লাস নাইনের এবং ক্লাস টেনের প্রি-টেস্ট পরীক্ষার ‘প্রগতিপত্র’ জমা দিতে হয় প্রধান শিক্ষকের কাছে। তার পর ছাত্রদের প্রগতিপত্রগুলি বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে দেওয়া হয়। তার আগে অবশ্য পরীক্ষিত খাতাগুলি ছাত্রদের দেওয়া হয়। তা হলে শিক্ষকদের ছুটি কোথায়?
নভেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হয়ে যায় মাধ্যমিক টেস্ট এবং পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির মৌখিক পরীক্ষা। এই মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হয় ওই শ্রেণিগুলির বার্ষিক লিখিত পরীক্ষা। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল অর্থাৎ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার অনুমতিপত্র (অ্যাডমিট কার্ড)-এর জন্য ফর্ম ফিল আপ। এই পরীক্ষার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাধ্যমিক বোর্ড থেকে বিদ্যালয়ে আসে অনুমতিপত্র।
সাধারণত বিদ্যালয়ে ডিসেম্বরের ২২-২৪ তারিখের মধ্যে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফল অর্থাৎ উত্তীর্ণ/অনুত্তীর্ণর ‘প্রগতিপত্র’ দেওয়া হয়। ২৬-৩১ তারিখ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ থাকে পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির বুক লিস্ট ও ছুটির তালিকার কপি জমা দেওয়ার। এই কাজ দু’টি শিক্ষকগণ এক বা দু’দিনে শেষ করেন।
বছরের শুরু থেকে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কাজকর্ম হল একটা বৃত্তাকার/চক্রাকার পথ। তা হলে, যে দ্বন্দ্ব বা ঈর্ষার কথা বলা হয়েছে, তার অবসান হোক। শিক্ষকদের পরিবার আছে। বছরের শেষ কয়েকটা দিন ওদের সঙ্গে থাকলে, কোনও অন্যায় হবে কি? প্রসঙ্গত, পরীক্ষা চলাকালীন, বার্ষিক ক্রীড়া, ২৩, ২৬ জানুয়ারি, ১৫ অগস্ট, ৫ সেপ্টেম্বর— এই দিনগুলির ছুটি সাধারণত গ্রাহ্য হয় না। বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হয়।
সুশান্ত কুমার মারিক
কলকাতা-৫০

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Society Secularism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE