‘এত জরুরি, তবু অবহেলিত’ (৪-৬) শীর্ষক ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, এখন জটিল চিকিৎসা খরচসাপেক্ষ। তা সামলাতে অধিকাংশ মানুষই সরকারি বা অসরকারি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। এই চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রটিতে অন্যতম ভূমিকা নার্সের। বিমার আওতায় থাকা মানুষ হাসপাতালে ভাল পরিচর্যা চাইছেন। কিন্তু নার্সদের অবস্থা কেমন? অনেক সময়ই দেখা যায়, এক জন নার্স পর পর কয়েকটি শিফ্ট করছেন বা করতে বাধ্য হচ্ছেন। সর্বত্র না হলেও এই ব্যবস্থা অনেক জায়গাতেই আছে। এর কারণ, হয় নার্সের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। অথবা হাসপাতালের খরচ কমাতে চাহিদা কম। জেনেছি, অনেক হাসপাতালে নার্সদের টিফিন খেতে হয় শৌচালয়ে নজর ক্যামেরার আড়ালে। পান থেকে চুন খসলে সর্বনাশ। প্রতিযোগিতার বাজারে দক্ষ নার্সকেও অনেক কিছু জানতে হয়। আধুনিক যন্ত্র-প্রযুক্তির ব্যবহারও শিখতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে নার্সদের অসহায় অবস্থার চিত্র স্পষ্ট হয়েছে অভয়া কাণ্ড থেকে। অথচ, নার্সরা ঠিক না থাকলে রোগের পরিষেবা মেলে না, রোগীও ভাল থাকেন না।
প্রবন্ধে স্বাভাবিক ভাবেই জোর দেওয়া হয়েছে মহিলা-কর্মীদের মানবিক ও আইনি অধিকারের উপর। মানবিক অধিকার অনেকটাই সমাজের আয়ত্তাধীন। যেমন স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে অনেকে চাইছেন একটা কিছু শিখে রোজগার করতে। এ ক্ষেত্রে নার্সিং পেশা অগ্রাধিকার পাচ্ছে। নার্সিং পাশ করেই চাকরি, হাতে নগদ টাকা। কাজের এই বাজারে জীবিকার ক্রমবর্ধমান চাহিদায় আপাতত নার্সের জোগান কম। কিন্তু হাসপাতাল বাড়ছে, ফলে নার্সের চাহিদাও বাড়বে অচিরেই। নার্সিং কলেজও বাড়ছে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর ডাক্তারিতে চান্স না পেয়ে অনেকে নার্সিং পড়ছেন। তাই এই সমাজব্যবস্থার সঙ্গে নার্সের মানবিক অধিকারের কথা ভাবতে হবে। ভবিষ্যতে নার্সের চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য নির্ভর করছে সরকারি নীতির উপর। সে জায়গায় আইনি অধিকার একটি গুরুতর বিষয়।
নার্স মূলত স্বাস্থ্যশ্রমিক। আশা কর্মীরাও। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন প্রকাশিত শ্রমিক অধিকার সংক্রান্ত সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশগুলির মধ্যে আছে ভারত। এই ভারতে অধিকাংশ অসংগঠিত নার্সের অবস্থান, তাঁদের আইনি অধিকার কী হবে, জানা নেই। নারী মানে শুধু মাতৃত্ব নয়, পরিবারে বাবা-মা-ভাই-বোন সবাইকে দেখতে হয়। এখন অনেক মেয়ে বাইরে একলা নার্সিং পড়তে যান। পাশ করে তাঁরা কোথায় কী পরিবেশে চাকরি পাবেন, জানা নেই। সেখানে থাকা, খাওয়া, নাইট ডিউটি, সুরক্ষা— অনেক সমস্যা। ভাল নার্স সব প্রতিষ্ঠানের দাবি। তেমনই ভাল পরিবেশের অধিকার সব নার্সের প্রাপ্য।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
নিরাপত্তাহীন
ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ‘এত জরুরি, তবু অবহেলিত’ প্রসঙ্গে কিছু কথা। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিং হোমগুলিতে নার্সিং স্টাফদের গরিষ্ঠ সংখ্যকই মহিলা। শল্যচিকিৎসার পরে যখন রোগীদের অতিরিক্ত যত্ন ও সেবার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তখন নার্সের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এক জন মুমূর্ষু রোগী চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে সুস্থ হয়ে যখন বাড়ি ফিরে যান, তখন যাঁদের চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন, তাঁরা রোগীর পরিজনদের তরফ থেকে মানবিকতার খাতিরে অন্তত একটু ভাল ব্যবহার, ধন্যবাদ আশা করেন। সেটা কত জন পান? এক জন নার্সকে নিয়মিত হাসিমুখে তাঁর কাজ ও দায়িত্ব পালন করে যেতে হয়। যেমন— চিকিৎসাধীন রোগীর অবস্থা ও তাঁর সঠিক পর্যবেক্ষণ, যথাসময়ে ইনজেকশন বা ওষুধ দেওয়া, ব্যান্ডেজ পরিবর্তন, নিয়ম মেনে স্যালাইন প্রয়োগ, অবস্থা অনুযায়ী রোগীদের বিশেষ যত্ন নেওয়া, রোগীর অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকদের নিয়মিত তথ্য প্রদান করা, এমনকি রোগী ও রোগীর পরিজনদের মানসিক সহায়তা ও আস্থা প্রদান ইত্যাদি। অথচ, চিকিৎসাব্যবস্থায় নার্সদের গুরুত্ব অপরিসীম জেনেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বা প্রাপ্য সম্মান প্রদানে বিমুখ।
অভয়া কাণ্ডের পর আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জেনেছি বা পড়েছি যে, নার্সরা তাঁদের কর্মক্ষেত্রে কতটা নিরাপত্তাহীন ও অসহায় অবস্থার মধ্যে আছেন। তাঁদের যদি সুরক্ষিত করতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হন, তা হলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিপূর্ণতা আসে না। বিশ্বের সর্বত্র নার্সিং স্টাফদের কাজকে অতি মহৎ কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। অথচ, এ দেশে মাতৃত্বের সুবিধা আইন (১৯৬১), ক্রেশ নীতি (২০১৭) থাকা সত্ত্বেও আইনি অধিকারগুলি এবং তাঁদের কাজের জন্য উপযুক্ত বেতন ও স্বীকৃতির সুবিধাগুলি থেকে তাঁরা আজও আগের মতোই বঞ্চিত। সেগুলি প্রদানের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে বিশেষত মহিলা নার্সদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলে তবেই নার্সরা আরও বেশি করে রোগীর পরিচর্যার কাজটিতে মন দিতে পারবেন।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
থানার নিয়ম
কলকাতা-সন্নিহিত কয়েকটি থানার কাজকর্মের হাল-হকিকত নিয়ে এই সংবাদপত্রের তিন পর্বের প্রতিবেদন “দুপুরে ‘বিশ্রামে’ থানা! গুরুতর অভিযোগেও পরে আসার নির্দেশ” (১১-৬); ‘থানায় ঢুকলে জুটছে ধমক, বাইরেই অনির্দিষ্ট অপেক্ষা সাক্ষাৎপ্রার্থীদের’ (১২-৬); এবং ‘অভিযোগ লেখার অফিসার কই? মহিলা থানা চলছে কনস্টেবলেই’ (১৩-৬) যা তুলে ধরেছে, তা পুরনো ছবিমাত্র। পরিচয় গোপন করে সমীক্ষকেরা অকুস্থলে গিয়েছিলেন একটু কম ব্যস্ততার সময়ে। দীর্ঘ দিনের যা অভিজ্ঞতা, এই সময় বড়বাবুর ঘর বিশ্রামে থাকে। প্রবেশপথ থেকে কনস্টেবলের নির্দেশাবলি শুনে ফিরে আসতে হবে। যদি তাঁরা বোঝেন দরকারটা বেশ পোক্ত ধরনের, তবে সন্ধ্যায় আসতে বলা হবে। কাজ উদ্ধার করতে গেলে সন্ধ্যায় অন্য কাজ ফেলে রেখে হাজির হয়ে বড়বাবুর কাছে পেশ করতে হবে নিজেকে। দিনের মধ্যযামে অন্য দায়িত্বশীল কর্মচারীরা হয় বিশ্রামে গিয়েছেন, কিংবা বাসস্থানে অথবা ছুটিতে আছেন। অথবা, আদৌ কেউ নেই। কোনও ভাবে ঘুরিয়ে দেওয়া, যাতে অধৈর্য হয়ে থানার প্রতিকারের আশা ত্যাগ করেন সুরাহাপ্রার্থী। সাইবার অপরাধে ক্ষতিগ্রস্তকে যিনি ঘুরিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরই পিছনে আটকানো নোটিস, সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। নিয়ম-কানুনের কথা বললে ধমক। ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভীতিপ্রদর্শন ব্যাপক অনুসৃত পন্থা। কী ভাবে কথা বললে থানায় আসা বিচারপ্রার্থীকে কোনও এক অজুহাতে কলমের আঁচড়টুকু (ডায়েরি ইত্যাদি) না কেটে বিদায় করে দেওয়া যায়, তার অলিখিত ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়েছেন বড় থেকে ছোট, সব শ্রেণির কর্মী। মহানগরের আশেপাশেই যদি এই হাল, তা হলে রাজ্যের অন্যত্র থানা ও পুলিশচৌকিতে সাহায্যের জন্য অতি সাধারণ কেউ হাজির হলে কেমন সহযোগিতা পান, তা ধারণা করা কঠিন নয়। অবশ্য হেভিওয়েট রাজনীতিকদের থানায় ডেপুটেশন বা কোনও প্রকার কর্মসূচির বেলায় তাঁদের আচরণ সম্পূর্ণ বিপরীত ঘরানার। সেখানে কিছু সময় মাথা বাঁচাতে কর্মচারীদের গুঁড়ি মেরে স্তূপীকৃত ফাইলের আড়ালেও লুকোতে হয়। আসলে, থানার নিজস্ব সংস্কৃতিতে দিন কাটে। সেখানে অন্যতম চালিকাশক্তি ভীতিপ্রদর্শন।
তবু এই প্রতিবেদনে একটু নতুন লাগল এক থানার বর্ণনা, যেখানে দরজার মাথায় শোভিত পুজোর খাঁড়া। ডিউটিরত কনস্টেবল জানান, ওই খাঁড়ার জোরেই নাকি থানা ভাল চলছে। টিনের একটি খাঁড়ার জোরে যদি একটি থানা দিব্যি চলে যায়, তা হলে এত লোক-লশকর লাঠি-বন্দুকের প্রয়োজনীয়তা কী?
বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)