E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: প্রয়োজনীয় সংশোধন

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বসার অ্যাডমিট কার্ডে পরীক্ষা শুরুর দিন, তারিখ, সময় ইত্যাদির উল্লেখ থাকে না। থাকে কেবলমাত্র পরীক্ষাকেন্দ্রের নাম।

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৫ ০৬:৪৬

‘বঙ্গ-সহ ৭ রাজ্যে যুক্ত বোর্ড চায় দিল্লি’ (২০-৬) শীর্ষক অণুসংবাদ প্রসঙ্গে কিছু কথা। স্বাধীনোত্তর ভারতে সংবিধানের সপ্তম তফসিলে ‘শিক্ষা’ শুধুমাত্র রাজ্য-তালিকাভুক্ত ছিল। সে সময় রাজ্যগুলি একক ভাবে শিক্ষা-সংক্রান্ত যাবতীয় আইন প্রণয়ন করত, কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক ছিল কেবল উপদেষ্টার ভূমিকায়। ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংবিধান সংশোধনীতে রাজ্যতালিকা থেকে শিক্ষাকে ‘যুগ্মতালিকা’য় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন থেকেই শিক্ষা-বিষয়ক আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজ্য এবং কেন্দ্র, উভয়ের হাতে চলে যায়। পরবর্তী কালে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় উদ্যোগে সময়োপযোগী নানা শিক্ষানীতি, পাঠ্যক্রম-সহ প্রশ্নপত্রের মডেল পরিবর্তন করা হয়। সেগুলির সুফল কিংবা কুফল এত কাল ধরে বহন করেছে শিক্ষার্থীরাই। কিন্তু কখনও ফিরে তাকানো হয়নি বোর্ড কিংবা কাউন্সিল প্রদত্ত শংসাপত্রের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা সংশোধনের দিকে।

প্রথমত, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বসার অ্যাডমিট কার্ডে পরীক্ষা শুরুর দিন, তারিখ, সময় ইত্যাদির উল্লেখ থাকে না। থাকে কেবলমাত্র পরীক্ষাকেন্দ্রের নাম। চলতি শিক্ষাবর্ষের ফল প্রকাশের দিন কিংবা কয়েক দিন পর, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম মারফত জানা যায় আগামী শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার বিস্তারিত সময়সূচি। অনেক পরে বোর্ড বা কাউন্সিলের বিজ্ঞপ্তি বিদ্যালয়ে যায়। অ্যাডমিট কার্ড-এ পরীক্ষা শুরুর তারিখ এবং সময় উল্লেখ করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয়ত, নব্বইয়ের দশক থেকে পঞ্চায়েত ও পুরসভা কর্তৃক দেওয়া হচ্ছে শিশুর জন্মের শংসাপত্র বা ‘বার্থ সার্টিফিকেট’। ফলে বর্তমানে সমস্ত বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির সময় বার্থ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক, যেখানে সন্তানের পিতা-মাতা উভয়ের নামই স্বীকৃত। অথচ, বোর্ড বা কাউন্সিল প্রদত্ত শংসাপত্র রেজিস্ট্রেশন, অ্যাডমিট, মার্কশিট-এ দেখা যায় শুধু বাবার নামই দেওয়া আছে। কোথাও মায়ের নাম নেই। এ দিকে, এখনকার দিনেও ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে সন্তানের পরিচর্যা-সহ বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ কালের দেখভাল— ষোলো আনা না হোক, বারো আনা কৃতিত্ব সাধারণত মায়েদের।

প্রশাসনের কাছে আবেদন, আগামী দিনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন-সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রদেয় শংসাপত্রে শিক্ষার্থীর বাবার নামের পাশাপাশি মায়েরও নাম উল্লেখ করা থাকুক।

ভানুপ্রসাদ ভৌমিক, ডানকুনি, হুগলি

ধর্মের খেলা

প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘মন্দির রাজনীতির রাজ্য’ (২৬-৬) সাম্প্রতিক সময়ের একটি প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রবন্ধ। রাজনীতি মানে আদর্শ, ত্যাগ, যুক্তিভিত্তিক বিতর্ক— সে কথা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নেতারা ভুলতে বসেছেন। রাজ্যের সমস্যা ও উন্নয়নের দিকে কারও নজর নেই। তাই আজ গালিগালাজ, কুৎসা, ব্যক্তিগত আক্রমণ, হিংসা, মারামারি, খুনোখুনি হয়ে উঠেছে রাজনীতির প্রধান বিষয়। এর ফলে চাপা পড়ে যাচ্ছে কর্মসংস্থান, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি জ্বলন্ত সমস্যা। এই সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য কোনও রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব, কর্মসূচি, মিটিং-মিছিল চোখে পড়ে না। ভোট রাজনীতি এখন স্রেফ অনুদানের রাজনীতি হয়ে গেছে। কে ক্ষমতায় এলে কতটা অনুদান দিয়ে জনগণকে কিনে নিতে পারবে, সে কথা মাঝে মাঝে শুনতে পাওয়া যায়। রাজনীতি আজ তার দিশা হারিয়েছে। ভোট পাওয়ার জন্য নেতাদের কাছে উন্নয়নের বা সমস্যা সমাধানের তেমন কোনও তথ্য নেই। রয়েছে অসংখ্য দুর্নীতি। তাই রাজনৈতিক দলগুলি ও নেতারা নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক বাঁচানোর তাগিদে ধর্ম ও জাতপাতকে আশ্রয় করেছেন। এতে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ধুলোয় লুটোচ্ছে। জাতপাত আরও প্রবল ভাবে মাথাচাড়া দিচ্ছে। গত কয়েক দশকে এই রাজ্যে রাজনৈতিক পরিবেশ যত না যুক্তি, নীতি, তর্ক-বিতর্ক নির্ভর হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে কুপ্রবৃত্তিনির্ভর। প্রশ্ন উঠে আসছে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি আর কত নীচে নামবে?

ভারত একটি পুণ্যভূমি। সেই দেশে ধর্ম এখন হয়ে উঠেছে রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার। ধর্ম মানুষের অন্তরের বিষয়, তাকে গোঁড়ামির পঙ্কিল আবর্তে আবর্তিত করছে রাজনীতি। রাজনীতি ধর্ম থেকে অনেক সুবিধা লুটছে, কিন্তু রাজনীতি থেকে ধর্ম দুর্দশা ও কলঙ্ক ছাড়া আর কিছু পায়নি। আজ পশ্চিমবঙ্গ মন্দির রাজনীতির রাজ্য। জনগণের করের টাকায় উন্নয়নের বদলে মন্দির তৈরি হচ্ছে। হিন্দু ভোট ধরার জন্য দিকে দিকে ঝান্ডা নিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ এবং ‘জয় জগন্নাথ’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত। ধর্ম যার যার, রাজ্যটি কিন্তু সবার। তাই রাজ্যের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবমূর্তি বজায় রাখতে সব সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থী মানুষের এবং রাজনৈতিক নেতাদের ঘৃণাভাষণ বন্ধ হওয়া জরুরি। রাজ্যের উন্নয়নের জন্য দলমতনির্বিশেষে সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পক্ষ থেকে ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতির তীব্র প্রতিবাদ হওয়া দরকার।

গৌতম পতিতমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

কেমন নিয়ম?

‘তৃণমূলের এনআরসি অভিযোগ, জবাব দিল নির্বাচন কমিশন’ (২৯-৬) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে যে, ১ জুলাই ১৯৮৭ থেকে ২ ডিসেম্বর ২০০৪— এই সময়কালে যাঁদের জন্ম তাঁদের নিজের এবং বাবা অথবা মায়ের জন্মস্থান বা জন্ম তারিখ সংক্রান্ত যে কোনও শংসাপত্র দিতে হবে। প্রশ্ন হল, এ সময়কালে যাঁদের জন্ম হয়েছে, তাঁদের অনেকের জন্মের প্রমাণপত্র, এবং তাঁদের পিতামাতারও সেই প্রমাণপত্র থাকবে বলে মনে হয় না। কারণ, কয়েক দশক আগে গ্রামের দিকে বাড়িতেই প্রসব হত, সে ক্ষেত্রে শংসাপত্র পাওয়ার প্রশ্নই ছিল না। তেমনই ২ ডিসেম্বর ২০০৪-এর পরে যাঁদের জন্ম, তাঁদেরও বাবা-মায়েদের অনেকেরই এই একই কারণে সম্পূর্ণ নাগরিক তত্ত্বের প্রমাণপত্র আছে বলে মনে হয় না। অথচ এঁদের নির্বাচনী সচিত্র পরিচয়পত্র আছে। তাঁরা এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে কেন্দ্রে এবং রাজ্যে সরকার নির্বাচন করেন।

বর্তমানে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যে আইন প্রয়োগ করতে চলেছে, সেটি আগামী দিনে এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। বহু জায়গাতেই নির্বাচন সংশোধনী তালিকা এবং সচিত্র পরিচয়পত্রের এখনও সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করে উঠতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন প্রত্যেকটি রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত প্রত্যেকটি অঞ্চলে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) নিয়োগ করেছে, অথচ তাঁদের কাজই এখনও শেষ করা যায়নি। এই অবস্থায় আবার নতুন একটি ব্যবস্থা চালু করলে, নতুন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। তবে ভুললে চলবে না যে, আগামী ২০২৬-এ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই যে তাদের এমন কার্যকলাপ, তা কি রাজ্যের মানুষ বোঝে না? জনসাধারণের তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধই হল এর উচিত জবাব।

সুদীপ্ত দে, কলকাতা-১০২

ব্রিজে বেঞ্চ

শেওড়াফুলি থেকে ট্রেনে হাওড়া যেতে হলে ডাউন তারকেশ্বর, বর্ধমান, ব্যান্ডেল কিংবা শেওড়াফুলি লোকাল ধরতে হয়। তবে আলাদা প্ল্যাটফর্মে ট্রেনগুলি আসার কারণে ট্রেন ধরতে ফুটব্রিজই ভরসা। কোন সময়ে কোন লোকাল আসবে, তা জানা না থাকলেই বিপত্তি। হয়রানি এড়াতে যাত্রীদের মালপত্র নিয়ে ফুটব্রিজে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ব্রিজে কিছু বসার জায়গা থাকলে, যাত্রীদের কিছুটা সুরাহা হয়। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

দেবব্রত সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

board exam Admission

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy