Advertisement
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Indian Cricket Team

সম্পাদক সমীপেষু: হারের ব্যাখ্যা

ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে টেস্টে লজ্জার হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বর্ডার-গাওস্কর টেস্ট সিরিজ়ে ৩-১ ফলাফলে হারল ভারত।

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫৮
Share: Save:

টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের হার অব্যাহত। ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে টেস্টে লজ্জার হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বর্ডার-গাওস্কর টেস্ট সিরিজ়ে ৩-১ ফলাফলে হারল ভারত। এই হারের ফলে গত এক দশক ধরে ভারতের দখলে থাকা বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি হাতছাড়া হল। শুধু তা-ই নয়, নিউ জ়িল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে পর পর দু’টি টেস্ট সিরিজ় হারের ফলে ভারত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হল। এমন পর পর টেস্ট হারে ক্রিকেটপ্রেমী ও সমর্থকরা বেশ হতাশ। ভারতের এমন করুণ দশার তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও।

সাম্প্রতিক কালে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের এমন শোচনীয় পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একাধিক বিষয় সামনে এসেছে। এক, দীর্ঘ দিন ধরে ভারতের প্রথম সারির ব্যাটারদের অফ ফর্ম। টেকনিক্যাল সমস্যা সমানে চলেছে। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা-র মতো তারকা ব্যাটারদের ব্যাটে রানের খরা। বাকিদের ফর্মে ছিল না কোনও ধারাবাহিকতা। দুই, মহম্মদ শামি ম্যাচ ফিট না থাকার কারণে যশপ্রীত বুমরা একাই সামলান পেস বোলিং। মহম্মদ সিরাজ সঙ্গ দিলেও তৃতীয় ও চতুর্থ সিমারের চূড়ান্ত অভাববোধ হয়েছে। আকাশ দীপ, হর্ষিত রানা, অলরাউন্ডার নীতীশ রেড্ডিদের অত্যন্ত সাধারণ মানের বোলার মনে হয়েছে। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে যথাযথ ব্যবহার করা হয়নি। তিন, দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচকদের দূরদর্শিতার অভাব দেখা গিয়েছে। দলে পুজারা, রাহানেদের মতো অভিজ্ঞ টেস্ট খেলোয়াড়দের প্রয়োজন ছিল। বার বার ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন ও ক্যাপ্টেন বদলের ফলে দলের স্বাভাবিক ছন্দ বিঘ্নিত হয়েছে। সিরিজ়ের মাঝ পথে অশ্বিনের মতো কিংবদন্তি স্পিনারের অবসর ঘোষণাও তাৎপর্যপূর্ণ। চার, ব্যাটারদের ব্যাটিংয়ে টেকনিক্যাল সমস্যা এবং অনভিজ্ঞ ও নবাগত বোলারদের বোলিং নিখুঁত করার জন্য প্রধান কোচ ও কোচিং স্টাফদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা সঙ্গত। পাঁচ, তারকা ব্যাটারদের টেস্ট ম্যাচ খেলার ধৈর্য, মানসিকতা ও দৃঢ়তার চূড়ান্ত অভাব দেখা গিয়েছে। ছয়, অফ ফর্মে থাকা ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশগ্রহণ উচিত ছিল, যা তাঁরা করেননি। পরিশেষে বলতেই হয় যে, ভারতীয় সাজঘরে স্বতঃস্ফূর্ততা, একতা ও সমন্বয়ের অভাব ছিল নিশ্চয়ই, মাঠে যার ছাপ পড়েছে।

দুয়ারে কড়া নাড়ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, তার পর এ বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০২৬-২০২৭’এ নতুন পর্যায়ের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা আবার শুরু হবে। আপাতত ভারতীয় ক্রিকেটভক্তরা সেই দিকেই তাকিয়ে থাকবেন।

হারান চন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

হার থেকে শিক্ষা

সম্প্রতি বর্ডার-গাওস্কর টেস্ট সিরিজ়ে ভারত অস্ট্রেলিয়ার কাছে রীতিমতো পর্যুদস্ত হয়ে এক দশক পরে এই ট্রফি অস্ট্রেলিয়ার হাতে এক প্রকার সমর্পণ করল। শেষ বার ২০২০-২১ সালে ভারত অজিঙ্ক রাহানের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া সফরে পিছিয়ে পড়েও দাপটের সঙ্গে খেলে জয়ী হয়। কিন্তু এ বারে ১-০ এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ় পরাজয় হতাশ করেছে ভারতীয় ক্রিকেট অনুগামীদের।

স্বীকার করতেই হবে, গোটা সিরিজ়ে অস্ট্রেলিয়া দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। প্রথম টেস্ট হেরে গেলেও তা সরিয়ে রেখে, বাকি প্রতিটি ম্যাচকে পাখির চোখ ধরে এগিয়েছে। দাঁড়াতে দেয়নি ভারতের তারকা খেলোয়াড় বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল প্রমুখ ক্রিকেটারদের। বোলিং বিভাগে যশপ্রীত বুমরা ছাড়া আর কাউকে সে ভাবে সমীহ অবধি করেনি। অথচ, ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের এতটা দৈন্যদশা কিন্তু নয়। টেস্ট ক্রিকেটে চেতেশ্বর পুজারা, অজিঙ্ক রাহানে-র মতো নামী খেলোয়াড় কিংবা হনুমা বিহারীর মতো ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলে আসা ক্রিকেটারদের বার বার দলের বাইরে রেখে জাতীয় দল গঠন বিস্মিত করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। কিছু দিন আগেই দেশের মাটিতে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজ়ে হারের পরে বিদেশের মাটিতেও বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে ভারতের পরাজয় নতুন ভাবে দল গড়ার প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তা ছাড়া, সিরিজ়ে বার বার নেতৃত্ব বদল, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অবসর ঘোষণা মূল লক্ষ্য থেকে ভারতকে যে সরিয়ে এনেছিল, খেলোয়াড়দের মানসিকতায় চিড় ধরেছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে কি?

এই প্রসঙ্গে উঠে আসে আরও একটি কথা। বর্তমানের ভারতীয় ব্যাটারদের নির্বাচন দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা মূলত জাতীয় দলে নির্বাচিত হচ্ছেন আইপিএল-এর মঞ্চে কে কত বেশি ছক্কা মারতে সক্ষম সেই যোগ্যতা ও দক্ষতার সুবাদে। যার স্পষ্ট ইঙ্গিত হল— সিরিজ়ের অনেকগুলো ম্যাচই পুরো পাঁচ দিন খেলা হয়নি। প্রায় প্রতিটি খেলোয়াড় কম বলে তাড়াতাড়ি রান করতে গিয়ে অযথা বিপক্ষ দলকে বার বার উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন। টেস্ট ম্যাচ ধৈর্যের খেলা। সারা দিন মাথা ঠান্ডা রেখে বিপক্ষ দলের মোকাবিলা করাই এর মূল লক্ষ্য, যা থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট। এ ক্ষেত্রে সিরিজ়ে নীতীশ রেড্ডি-র মতো উঠতি প্রতিভাদের কাছে বিশ্ব ক্রিকেটের দরবারে ভারতীয় ক্রিকেটের উজ্জ্বল অধ্যায়গুলো প্রাক্তন মহারথীদের মাধ্যমে সরাসরি ভাবে বিশ্লেষিত হওয়া দরকার, যাতে তাঁরা সঠিক পথে চালিত হতে পারেন। একটা বা দুটো সিরিজ়ে পরাজয় কোনও বড় ব্যাপার নয়। বরং হারের নেতিবাচক দিকগুলি বার বার তুলে ধরার পরিবর্তে এই পরাজয় থেকে যথাযথ শিক্ষা নিলে লাভ হবে ভারতীয় ক্রিকেটারদের। তবেই সুদিন ফিরবে ভারতীয় ক্রিকেটের।

শুভজিৎ বসাক, কলকাতা-৫০

ব্যর্থ গম্ভীর

নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে ঘরের মাঠে সিরিজ়ে হোয়াইটওয়াশের ক্ষত দগদগে থাকা‌ অবস্থাতেই এ বার বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে অজিদের কাছে নাস্তানাবুদ হল ভারতীয় দল। অজিভূমে দশ বছরে প্রথম বার সিরিজ় ৩-১ খুইয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল থেকেও ছিটকে গিয়েছে গৌতম গম্ভীরের ছাত্ররা। সঙ্গে তুলে দিয়েছে একাধিক প্রশ্ন। কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের জমানা শেষ হতে, শেষ কয়েক মাস যাবৎ এক রকম দিশাহারা দেখাচ্ছে ভারতীয় দলকে। লাগাতার ব্যর্থতাকেই যেন ধারাবাহিকতায় রূপান্তরিত করে ফেলেছেন রোহিত-কোহলিরা। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে গম্ভীর ও তাঁর সহকারীদের ভূমিকা নিয়ে। গত জুনে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর আইপিএল-এ কেকেআর-কে খেতাব জেতানোর সুবাদে এক প্রকার ঢাকঢোল পিটিয়ে হেড কোচ দ্রাবিড়ের স্থলাভিষিক্ত হন গৌতম গম্ভীর। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর জমানায় ভারতীয় দল ১০টা টেস্ট খেলে হেরেছে ছ’টায়, তার মধ্যে দেশের মাঠে প্রথম বারের জন্য কিউয়িদের কাছে ৩-০ হোয়াইটওয়াশের বিরল লজ্জা। এমনকি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও ওয়ান-ডে সিরিজ়ে হেরেছে ভারত। এই তালিকায় নবতম সংযোজন অস্ট্রেলিয়ায় হার।

একা হেড কোচ গম্ভীর নন, তাঁর পছন্দের সহকারী অভিষেক নায়ার, মর্নি মর্কেলও সমান ভাবে প্রশ্নের মুখে। বিরাট, রোহিতদের ক্রমাগত ব্যাটিং ব্যর্থতা শোধরাতে কেন কোনও দাওয়াই দিলেন না তাঁরা? এখানেই প্রশ্ন উঠছে— ব্যাটিং কোচ হিসেবে কোহলি, রোহিত, যশস্বীদের সঠিক পরামর্শ দিতে আদৌ কি সক্ষম গম্ভীরের এই সহকারীরা? এ ছাড়াও বার বার অজি সফরে প্রশ্নের মুখে পড়েছে গম্ভীরের দল নির্বাচন। একের পর এক ম্যাচে মিউজ়িক্যাল চেয়ারের মতো বদলেছেন স্পিনারদের। বুমরা-সিরাজের সঙ্গী হিসাবে তৃতীয় পেসার খুঁজতেও ব্যর্থ তিনি। মেন্টর হিসেবে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি ক্রিকেটে কেকেআর-কে সাফল্য দেওয়া আর আন্তর্জাতিক স্তরে দলকে সাফল্য দেওয়ার মধ্যে যে আকাশপাতাল তফাত, তা হয়তো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন রাহুল দ্রাবিড়ের নয়া উত্তরসূরি।

সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

অন্য বিষয়গুলি:

champions trophy Cricket World Test Championship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy